অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে। বিবিসি।
গবেষণাটি বলছে, সব বয়সীর মতো ৭৫ বছরের বেশি বয়সীদেরও টিকা একইভাবে কাজ করে। দি অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) ও ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষণা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ডের টিকা নেওয়ার পর সব বয়সী মানুষের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিবডির খোঁজ পেয়েছে। গবেষকরা বলছেন, দুটি টিকা নেওয়ার পর সবার মধ্যে কার্যকর প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালিত হয়। তবে গবেষণাটি নিয়ে এখনো পর্যালোচনা হয়নি। এটি প্রকাশিতও হয়নি।
প্রথম গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। যাদের গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর উপসর্গসহ করোনার সংক্রমণ ৭৪ শতাংশ কমেছে। উপসর্গবিহীন করোনার সংক্রমণ কমেছে ৫৭ শতাংশ।
যারা ফাইজারের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের সংক্রমণের ঝুঁঁকি ৯০ শতাংশ কমেছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে এ তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। টিকাদান কর্মসূচি দেরিতে শুরু হওয়ায় খুব অল্পসংখ্যক মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পেরেছেন। অ্যান্টিবডি কত দিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে- ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে তা জানা যাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুটি টিকাই করোনা ভাইরাসের কেন্ট ধরনটির (বি ১১৭) বিরুদ্ধে কার্যকর। যুক্তরাজ্যে এখন করোনার নতুন এ ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের নাফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন হেলথের সিনিয়র গবেষক ড. কোয়েন পোয়েল বলেন, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। তিনি বলেন, টিকার একটি ডোজ নেওয়ার পর করোনার নতুন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার যে তথ্য পাওয়া যায়, তা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। এ ব্যবধান ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে।
গবেষক পোয়েল বলেন, টিকা নেওয়ার পরও মানুষ আবার করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। তাদের থেকে অন্যরাও এতে সংক্রমিত হতে পারে। এ কারণে তিনি সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
দ্বিতীয় গবেষণাটি টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন, এমন প্রায় ৪৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর চালানো হয়। এতে টিকা নেওয়ার পর সব বয়সী মানুষের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। টিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, এটি তার প্রমাণ। গবেষকরা বলছেন, এই অ্যান্টিবডি ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের শরীরে কার্যকর থাকতে পারে।
টিকার একটি ডোজ নেওয়ার পর করোনার নতুন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার যে তথ্য পাওয়া যায়, তা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। এ ব্যবধান ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক সারাহ ওয়াকার বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, অ্যান্টিবডি কত দিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে তা জানা যাবে।’
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জরিপের ভিত্তিতে দুটি গবেষণাই পরিচালিত হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ওএনএস এবং ডিপার্টমেন্ট ফর হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার যৌথভাবে গবেষণা পরিচালনা করেছে।