বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ৫ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না হলে দেশের মানুষ বসে থাকবেনা। তারা আইনের অপেক্ষায় থাকবে না। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তাকে মুক্তি না দিলে আমাদের আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবেনা। আন্দোলন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাই না। সরকার যদি এখানে উস্কানি দেয় তাহলে দায় সরকারের। আজ শনিবার দুপুরে এক সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার আব্দুস সালাম হলে “স্বৈরাচার পতনে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ ডাঃ মিলনের আত্মত্যাগ ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুস সালামের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস প্রমুখ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ গায়ের জোরে দেশ শাসন করছিলেন। সেসময় সব ধরনের মানুষ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেই আন্দোলনের শহীদ হন ডাঃ শামসুল আলম খান মিলন। তার আত্মত্যাগ স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করে। যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ডাঃ মিলন জীবন দিলেন। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা সেই গণতন্ত্র ফের হরণ করেছে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে শুধু একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার জন্য। সেটি এই সরকার করেছে। আমরা দেশনেত্রী ছাড়াই তার মুক্তির লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এটা বুঝতে পেরে সরকার ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। এদের নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। তারা অস্বাভাবিক সরকার। আজকে দেশের মানুষ সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় নেই। ফলে চলছে লুটপাট। কারা করছে যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে সেই সিন্ডিকেট। এখন বাজারে আগুন। ২০-২৫ টাকার পেয়াজ আড়াইশ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চাল, লবণসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। শীতের মৌসুমে সবজির দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এসব। আসলে এই সরকার জনগণের স্বার্থের সরকার নয়।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দানবে পরিণত হয়েছে। তারা মেধাবী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে হত্যা করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে চাঁদা দাবি করেছে। তাদের এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করছেনা। সমাজের সকল স্তরে আজকে পচন লেগেছে। এখান থেকে বাঁচতে হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সুতরাং গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবেনা। আমি বিশ্বাস করি চিকিৎসকবৃন্দ আদালতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সততার সাথে প্রতিবেদন দিবেন। না হলে বুঝতে হবে সরকারের হস্তক্ষেপে তারা তাদের করেনি।
ড্যাবের সভাপতি ডাঃ হারুন আল রশিদ বলেন, ডাঃ মিলন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য প্রেরণার বাতিঘর। বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেছেন। আজকে দেশের মানুষ ও দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তবেই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। বর্তমানে এরশাদের চেয়েও ভয়ংকর স্বৈরাচার ক্ষমতায় আছে।
ড্যাবের মহাসচিব ডাঃ আবদুস সালাম বলেন, মিলনের স্বপ্ন ছিলো একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা। সমস্ত চিকিৎসক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার স্বপ্ন দেখতেন শহীদ ডাঃ শামসুল আলম মিলন। তার স্বপ্ন ছিলো সবাই যেন সুচিকিৎসা সেবা পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তাকে হারিয়েছি। তার সুবিচার করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তিনি কারাগারে। তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে সবার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার না হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আসুন দেশনায়ক তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা চিকিৎসক সমাজ জেগে উঠি। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করি।