মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এ লেনদেন আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি। লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকের হিসেবেও অর্থ থেকে যাচ্ছে। এসব অর্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহককে না জানিয়েই লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে আসছে। গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং, পস মেশিন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্থ লেনদেনের নিষ্পত্তি করার এজেন্ট কেউ-ই গ্রাহকদের হিসাবে জমা থাকা অর্থ কোনো ক্রমেই ব্যবহার করতে পারবে না। দিন শেষে হিসাবে জমার পুরো অর্থই কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতে হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে জরিমানা, কারণ দর্শানোর নোটিশ, লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার মতো শাস্তি ভোগ করতে হবে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত প্রায় এক বছরের বেশি সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনীতি গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক লেনদেন কমে গেছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। গেল বছরের বেশির ভাগ সময়জুড়েই সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে। আবার চলতি বছরের গত এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এক শ্রেণীর মানুষ ব্যাংকে স্বশরীরে আর ব্যাংকে যাচ্ছেন না। তারা ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। এতে বেড়ে যাচ্ছে এর কলেরব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মনে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৭৭ কোটি টাকা, পস মেশিনের মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি টাকা, সিআরএমের মাধ্যমে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মোবাইল ব্যাংকিং বা ই-কমার্সের পরিধি এখন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এগুলো পরিচালনার সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট সার্ভিস প্রেভাইডার এবং পেমেন্ট সিস্টেমস অপারেটরদের প্রতিষ্ঠানগুলা জড়িত। ফলে কোনো একটি পর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ সেবা প্রতিষ্ঠানেও জমা থাকছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থ গ্রাহকের অজান্তেই অপারেটরা ব্যবহার করছেন।
সাধারণ গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাই বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা দিয়েছে। নতুন নীতিমালাটির নাম দেয়া হয়েছে, গাউডলাইন্স ফর ট্রাস্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ই-পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সার্ভিসেস। এর আওতায় গ্রাহকদের জমা পুরোটাই ট্রাস্ট ফান্ড হিসাবে জমা রাখতে হবে। তবে এসব অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি খাতের বিভিন্ন ট্রেজারি বিল ও বন্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিল বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে। থেকে যেসব অর্থ আয় হবে এগুলো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই গ্রাহকের হিসাবে জমা অর্থ নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে না।
নীতিমালার নির্দেশণাগুলো পরিপালনের জন্যই ওই দিনই এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি, পেমেন্ট সার্ভিস প্রেভাইডার (পিএসসি) এমডি এবং পেমেন্ট সিস্টেমস অপারেটরদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, এখন থেকে নীতিমালাটি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট সার্ভিস প্রেভাইডার ও পেমেন্ট সিস্টেমস অপারেটরদের মেনে চলতে হবে। একই সাথে এটি অনলাইনে যারা পণ্য বেচাকেনা করেন বা লেনদেন নিষ্পত্তি করেন তাদেরকেও মেনে চলতে হবে। ই-কমার্স বা ই-লেনদেনের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেনে চলতে হবে। নীতিমালায় কোনো প্রতিষ্ঠান এসব বিধি-বিধান ভঙ্গ করলে জরিমানা, কারণ দর্শানোর নোটিশ, লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার মতো বিধানও রয়েছে। গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নীতিমালা জারি করেছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাহকদের অর্থেও নিরাপত্তায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রাষ্ট ফান্ড গঠণ করতে হবে। এর আওতায় ব্যাংকে হিসাব খুলতে হবে। ওই হিসাবে ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা জমা রাখতে হবে। এসব অর্থে কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ দিতে পারবে না।