নানাভাবে ব্যয় বাড়ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ২১ শতাংশ। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ভারত থেকে আমদানি ব্যয় বাড়বে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু এক বছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় বাড়বে ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে প্রতিষ্ঠানটির এক বছরে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি হবে আট হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। আগামী বছরের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের এক হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে। ঘাটতি পূরণের জন্য বিদ্যুতের পাইকারিতে ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।
জানা গেছে, আগে শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করত পিডিবি। কিন্তু একসময় বিদ্যুতের নিজস্ব উৎপাদন চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের অনুমোদন দেয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার পাশাপাশি ভারত থেকেও শুরু করা হয় আমদানি।
পিডিবির এক পরিসংখ্যান মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪৬৫ কোটি ৬০ লাখ ঘনওয়াট, পরের বছরে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৭৮ কোটি ৩০ লাখ ঘনওয়াট এবং গত বছরে ৬৭৮ কোটি ৬০ লাখ ঘন ওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়ে যায়।
যেমন গত বছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগামী বছরে পিডিবি ভারত থেকে চার হাজার ৫৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। অর্থাৎ এক বছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে পিডিবির ব্যয় বাড়বে ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এ দিকে বলা হয়েছিল ২০১৪ সালের পর কুইক রেন্টাল কমে যাবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কুইক রেন্টাল থেকে আর বিদ্যুৎ কিনতে হবে না। কিন্তু ২০১৪ সালের পর আরো প্রায় পাঁচ বছর অতিক্রম হচ্ছে। কিন্তু কুইক রেন্টালের ওপর নির্ভরশীলতা পুরোপুরি কমানো যায়নি।
এ সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনো কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। যেমন, গত বছরে রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার। আগামী বছরের জন্য রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ১৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
এ দিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বাইরেও ১৫ থেকে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বেসরকারি কোম্পানি আইপিপি (ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) এবং এআইপিপি থেকে গত বছর বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। আগামী বছরের জন্য এক হাজার ৬৯৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবমিলে পিডিবির নিজস্ব উৎপাদনের ব্যয় বাদে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির গত বছরে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ১৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগামী বছরের জন্য এ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, তিন হাজার ৫২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
অপর দিকে গত বছরে পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছিল ৮০৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগামী বছরে ২১ শতাংশ বাড়িয়ে এ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছরে পিডিবির অবচয় ছিল ১২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগামী বছরের জন্য তা প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭০ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত বছরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হয়েছিল ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগামী বছরে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সবমিলে পিডিবির নিজস্ব ও বিদ্যুৎ ক্রয় এবং আমদানি বাবদ এক বছরে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ব্যয় হয়েছিল ৩১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা।
পিডিবির হিসাব মতে, আগামী বছরে পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করে যে আয় হবে আর যে ব্যয় হবে তার মধ্যে ঘাটতি হবে আট হাজার ৫৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রায় সাড়ে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জাননো হয়েছে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার দাম বৃদ্ধির শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে যে দুর্নীতি ও অপচয় হয় তা কমানো গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না; বরং পিডিবির লোকসানের পরিবর্তে মুনাফা হবে। তিনি এ জন্য বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করার জন্য দাবি জানান।