করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ভারতে বেড়েছে ছত্রাকজনিত রোগ। গত কয়েকদিন ধরে দেশটিতে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি ধরা পড়েছে ‘হোয়াইট ফাঙ্গাস; আক্রান্ত রোগীও। ভারতীয় চিকিৎসকরা বলছেন, কালো ছত্রাকের চেয়ে বেশি সাংঘাতিক সাদা ছত্রাক। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে চোখ রাঙানি দিচ্ছে ‘ইয়েলো ফাঙ্গাস’, যেটি সাদা বা কালো, দুয়ের চেয়েও সাংঘাতিক ভয়ংকর।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গাজিয়াবাদে ইয়েলো ফাঙ্গাসের সন্ধান মিলেছে। এক ব্যক্তির শরীরে এ ফাঙ্গাস বাসা বেঁধেছে। শুধু তা-ই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের সাদা ও কালো ছত্রাকের সন্ধানও পাওয়া গেছে। খবরে এও বলা হয়েছে, সাদা বা কালো ছত্রাকের ব্যাপারে সরকার বক্তব্য দিলেও ইয়েলো ফাঙ্গাসের ব্যাপারে এখনও কিছু বলেনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গত সপ্তারে ভারতের বিহারে হোয়াইট ফাঙ্গাসে আক্রান্ত চারজনকে শনাক্ত করা হয়। তার আগে কয়েকটি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত বেশ কয়েকজন শনাক্ত হয়েছে বলে জানায় সরকার। গত সোমবারই প্রথম ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত শনাক্তের কথা জানা যায়।
যে ব্যক্তির শরীরে ইয়েলো ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব মিলেছে, তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা জানান, ইয়েলো ফাঙ্গাস সাধারণ সরীসৃপ প্রাণীতে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, রোগীর আশেপাশে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা চলে যাওয়া, হজমে সমস্যা, শরীরে শক্তির অভাব ইয়েলো ফাঙ্গাসের উপসর্গ। এ ছাড়া কোনো আঘাত শুকাতে দেরি হওয়া, সহজে না সারা, সংক্রমণ বেশি হলে ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হওয়া ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ। চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়াও এই রোগের লক্ষণ।
তবে, সবচেয়ে বেশি যেটি লক্ষ্য করা যাবে, তা হলো রোগী চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া। কেউ এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে চোখের পাতা সহজে খুলতে পারবেন না। পরিস্থিতি গুরুতর হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতেও শুরু করে। অপুষ্টি ও নেক্রোসিসও দেখা যেতে পারে এই ছত্রাকের কারণে।
বিষেশজ্ঞদের দাবি, ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের চেয়েও বেশি মারাত্মক ইয়েলো ফাঙ্গাস দ্রুত মানব শরীরে বাসা বাধতে পারে। এর অন্যতম কারণে বাসি খাবার খাওয়া। এ ছত্রাকের সংক্রমণে মৃত্যুহার তুলনায় বেশি। কারণ, এটি শরীরের ভেতরের অংশে বেশি ক্ষতের সৃষ্টি করতে সক্ষম।
প্রতিকার
চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হলে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেও ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে আর্দ্রতা বাড়লে এই রোগ ছড়ায়। যে কারণে এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। নিজেকে সব সময় সুরক্ষিত রাখা দরকার। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর্দ্রতা বাড়লে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়। প্রথমেই ধরা পড়লে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।