সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শ থেকে সরে আসার কারণেই মুসলমানরা আজ বিশ্বে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অস্বচ্ছ ধারণার কারণেই তারা মুসলমানদের শত্রু মনে করছে। আমরাও বিশ্বকে সত্য বিষয়টি জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ থেকে উত্তরণে আমাদেরকে কুরআন-হাদিসের দিকেই ফিরে যেতে হবে। মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা করতে হবে। উগ্রবাদিতা নয়, প্রকৃত ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে মুক্তি।
সীরাতুন্নবী সা: উপলক্ষে ‘বিশ্ব সঙ্কট নিরসনে মহানবীর সা:-এর আদর্শ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবু তাহের জিহাদীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুুল মা’বুদ। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদুল হাসান ও প্রফেসর ড. এম উমার আলী, দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি মাওলানা যাইনুল আবেদীন, সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লাস ও সিরামিক্স বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন আবুল কালাম পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দীন কাদেরী, ফুরফুরা দরবার শরিফের খলিফা শায়খ আবদুল কাইয়ুম, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল বাতেন, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুফতি আবু ইউসুফ খান, পীরসাহের টেকেরহাট মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, ছারছীনার পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, খেলাফত রব্বানীর আমির মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের আমির মুফতি ফখরুল ইসলাম, পীর সাহেব মিরেরসরাই মাওলানা আবদুল মোমেন নাসেরী, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, আন নাহদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের গাজীপুরের নেতা মাওলানা আবুল বারাকাত, জাতীয় ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা লুৎফর রহমান প্রমুখ।
বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, সৃষ্টি জগতে মানুষের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ আর নেই। অথচ বিশ্বের মানুষ বুঝতেই পারছে না মানুষ হিসেবে সৃষ্টিজগতে তার অবস্থান কী? আজ ইসলামকে এন্টি রিলিজিয়ন থিসিস ভাবছেন অনেকেই, কেন? ইসলাম সার্বজনীন, সব ধর্ম বর্ণ মানুষ, জীবকে নিয়েই ইসলাম। কোনো কিছুই এর বাইরে নয়। আর কুরআন জীবন্ত, কুরআন কথা বলে। প্রশ্ন করলে উত্তরও দেয়। পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান রয়েছে কুরআনেই। পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানুষ রাসুল সা:। আজ মুসলমানদের দেউলিয়াত্বের কারণ কুরআন ও রাসুলের পথ থেকে সরে আসা। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে তাওহিদ তথা একাত্মবাদকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা মাখলুকাত সেটা বোঝার উপায় কি? মানুষকে দেয়া হয়েছে বিশেষ জ্ঞান। আর ওই জ্ঞানে মানুষই সৃষ্টি নিয়ে কাজ করবে, স্রষ্টাকে খুঁজবে। সৃষ্টিকে জানলে স্রষ্টাকে জানা যাবে। ইসলাম সেই কথাটিই বলে।
ড. চৌধুরী মাহমুদুল হাসান বলেন, পৃথিবীতে স্রেষ্ট জীব হচ্ছে মানুষ। সেই মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ সা:। আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করতে চাইলে আগে মুহাম্মদ সা:-কে ভালোবাসতে হবে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুই ইসলামে রয়েছে, যা রাসুল সা: দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের মুক্তির পথ সিরাতের পথ, যে পথে শান্তি আসবেই।
ড. এম উমার আলী বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে নানা জাহিলিয়াত প্রচার করা হচ্ছে। ওয়াজকারীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। এ ধরনের মতপার্থক্য দূর করে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ১৪৯২ সালে মুসলামনরা হেরে যাওয়ার পর আর তাদের জিততে দেয়া হয়নি। এর তিনটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো- শিক্ষা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে দূরে সরে থাকা এবং বিলাসিতায় ডুবে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে যত বিভক্তি রয়েছে আর কোনো জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে এমন নেই। এ মতপার্থক্য দূর করতে হবে। কারণ কুরআন একটিই। এ কুরআনের শিক্ষা নিয়ে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে এগোতে পারবে না।
আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মুসলিম উম্মাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক প্লাটফর্মে আসতে হবে। মানবতার দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে যারা অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে জবাব দিতে পারে তারাই যারা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা ও মুহাম্মদ সা:-কে নেতা মেনে তার আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে চায়।
মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, আলোচনা অনেক হয় কিন্তু বাস্তবায়ন কম। আমি সঠিক আর অন্যরা বেঠিক এ ধারণা থেকে বের হতে হবে। আলেমরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বললে কোনো কাজ হবে না। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ না হলে সঙ্কট কখনও কাটবে না।
মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ইসলাম একটি নিছক ধর্মের নাম নয়, ইসলাম এটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামের কথা বললেই উগ্রবাদ-সন্ত্রাসী যারা আখ্যা দেয়, তাদের কাছেও বারবার ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে। ইসলাম ছাড়া শান্তি আসবে না- এটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ইসলামে সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনাসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে। এটি শুধু ধর্ম নয়। কিন্তু বিভক্তির কারণে মুসলমানরা আজ সমস্যায় পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আবুল কালাম পাটোয়ারী বলেন, আমরা আল কুরআন থেকে দূরে সরে গেছি, রাসুলকে ভালোবাসা ভুলে গেছি, আল্লাহর ইবাদাত ছেড়ে দিয়েছি। যে কারণে আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছে।
ড. মমতাজ উদ্দীন কাদেরী বলেন, বাংলাদেশসহ ৫৩টি মুসলিম দেশে যা হচ্ছে তা মঞ্চস্থ করছে ইহুদি খ্রিষ্টানরা। এটা আমাদের ভাঙতে হবে। শান্তির সঙ্কট বড় সঙ্কট। রাসুলের আদর্শই পারে এই সঙ্কট কাটাতে।
অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন বলেন, মুসলমানরা সবক্ষেত্রে মার খাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে তাওহিদের একাত্মবাদকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের সঙ্কট কোথায়, সেটা ঠিক করতে হবে। আলোচনা শেষে সম্প্রতি আয়োজিত সিরাত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।