মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন যে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক মিশন ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে। আমেরিকা সন্ত্রাসবিরোধী লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং এখনই চলে যাওয়ার সময় এসেছে।
আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। যারা আমেরিকান প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে দাবি দাওয়া জানচ্ছিল, তারাও সত্যি সত্যি যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে বিদায় গ্রহণে নানা হিসাব নিকাশ করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে আরো কিছু দিন আফগানিস্তানে রাখার জন্য উসকানিমূলকভাবে বলা হচ্ছে, আমেরিকা আফগানিস্তান লড়াইয়ে হেরে গেছে। এ কারণেই তাড়াহুড়া করে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। অন্তরালে আবার অনেকের মধ্যে এই ভয়ও কাজ করছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে বিদায় অন্য কোনো বৃহত্তর পরিমণ্ডলে জড়িত হবার প্রস্তুতি কিনা। আর এ ব্যাপারে চীন আর রাশিয়ার ভয়টা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভারত। আফগান সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর প্রভাব বিস্তার করে পাকিস্তানসহ আশে পাশে প্রভাব সৃষ্টির যে নেটওয়ার্ক দুই দশকে দিল্লি তৈরি করেছিল তা গুটিয়ে পড়ায় শঙ্কায় তারা শঙ্কিত।
আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর বেলুনে ফুটো
এটি ঠিক যে আমেরিকা যখন ২০ বছর আগে আফগান যুদ্ধ শুরু করেছিল, তখন তারা আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর এবং জয়ের জন্য দৃঢপ্রতিজ্ঞ ছিল। তবে যতই সময় গড়িয়েছে ততই আবিষ্কার করেছে যে এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া তাদের পক্ষে সহজ নয়। প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবার আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যটি এক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানে জয়ী হওয়া আমেরিকার পক্ষে সম্ভব। তবে এ জন্য দেশটিকে মানুষশূন্য করতে হবে, সেটি করে আমেরিকা সেখানে জয়ী হতে চায় না।’
ঐতিহাসিকভাবে এটি ঠিক যে আফগানিস্তান ছিল সাম্রাজ্যলিপ্সুদের জন্য কবরস্থান। ব্রিটিশরা একসময় আফগানিস্তান জয় করতে চেয়ে বিফল হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিণতিও হয়েছে একই। সর্বশেষ একই পথের অনুগামি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভুলও ছিল অনেক। পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত ব্যবহার আর ঘাঁটি গেড়ে আফগানিস্তানে তালেবানের পতন ঘটিয়েছে আর আল কায়েদার নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আফগানিস্তানে দখল কায়েমের পর সেখানকার সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান আর প্রশাসন সাজানো হয়েছে পাকিস্তানের বৈরী প্রতিবেশী ভারতকে দিয়ে। পাকিস্তানে অন্তর্ঘাতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আফগানিস্তানের মাটি। এতে পাকিস্তানের এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি আর তিন লাখের মতো প্রাণহানি ঘটেছে যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছে ৪৩ হাজারের মতো। এর বিপরীতে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার আর ঘাঁটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র টাকা দিয়েছে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। আর আফগানিস্তানের আমেরিকান ব্যর্থতার জন্য বার বার পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আমেরিকার ভারতমুখী ও পাকিস্তান বৈরি নীতির ফলে ইসলামাবাদের সহায়তা নিয়ে প্রথম দিকে আফগানিস্তানে যে সাফল্য যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছিল সেটি আর থাকেনি। এখন সেনা প্রত্যাহারের জন্য আবার সেই পাকিস্তানের সহায়তাই ওয়াশিংটনকে নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে পাকিস্তানের আস্থা বিশ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দেশটিতে নতুন করে মার্কিন ঘাঁটি করার প্রস্তাব দেয়ার সাথে সাথেই নাকচ করে দিয়ে পাক প্রধানিমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে, কোনো যুদ্ধে পাকিস্তান আর কারো সহযোগী হতে চায় না। শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেই সাহায্যকারী হতে পারে কেবল।
’
তালেবান পরিকল্পনার রূপরেখা
১১ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার নিশ্চিত হবার পর তালিবান আগস্টে অন্তবর্তী ব্যবস্থার আলোচনায় লিখিত শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তালিবানের স্পষ্ট বক্তব্য আসার পর অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়ে আশঙ্কার কিছুটা অবসান ঘটছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন কী হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু প্রকাশ করা না হলেও প্রাপ্ত আভাস অনুসারে সব দল মতকে সমন্বিত করে একটি জিরগা বা সংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব থাকবে তালিবানের পক্ষ থেকে। প্রস্তাব অনুসারে তালিবানের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী পূনর্গঠন করা হবে। তবে সরকারের উপর তালেবানের একক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এমন একজন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হবে যিনি তালিবানের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও তাদের নিজস্ব কেউ হবেন না। জাতিগতভাবে সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকবে। প্রাদেশিক সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। চার বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পূনর্গঠন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সংবিধান ও কাঠামো ঠিক করবে অন্তবর্তী সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, তালিবান হিসেবে পরিচিত ‘ইসলামী অ্যামিরেটস অব আফগানিস্তান’ আগামী মাসে লিখিত প্রস্তাব আসার আগেই কাবুলের বাইরের প্রায় সব অঞ্চলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। তালিবান রাজধানী কাবুলে কোনো অভিযান পরিচালনা করবে না। এর মধ্যে আফগানিস্তানের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে বলে চলে গেছে উল্লেখ করা হচ্ছে। বাকিগুলোও দ্রুত তালিবানের নিয়ন্ত্রণে আসছে। সর্বশেষ কান্দাহার দখলের জন্য তালেবানের অভিযানের মুখে সেখান থেকে ভারতীয় মিশনের সব কর্মকর্তাকে বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সরকারি বাহিনী তালেবান যোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করে ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে বাড়ি চলে যাবার ভিডিও প্রকাশ হচ্ছে একের পর এক।
রয়টার্সের এক রিপোর্টে বলা হয়, তালেবান আগামী আগস্টের গোড়ার দিকে আফগান সরকারকে একটি লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এক তালেবান মুখপাত্র এই বার্তা সংস্থাকে বলেছে যে, তারা বিদেশী বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে থাকার সাথে সাথে দেশের প্রধান ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছে। সমস্ত বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মূল আফগান ঘাঁটি বাগরাম খালি করায় আফগান সরকারি বাহিনীর মনোবল একবারেই ভেঙ্গে পড়েছে।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলিতে শান্তি আলোচনা এবং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে … এবং তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই এটি হবে শান্তির পরিকল্পনা সম্পর্কে।’
আফগানিস্তানের শান্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিয়া আনোয়ারি আন্তঃ-আফগান আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে তালেবান রাষ্ট্রদূতরা এ প্রক্রিয়াটি প্রত্যক্ষভাবে শুরু করছে বলে তার সরকারের প্রতিনিধিরা ‘অত্যন্ত খুশি’।
২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচে মুষিক প্রসব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে চারটি বিষয় ছিল, যার মধ্যে রয়েছে, সহিংসতা হ্রাস করা, বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করা, আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করা এবং গ্যারান্টি দেয়া যে আফগানিস্তান আবারো উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ে পরিণত হবে না।
এ চুক্তিটি দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তির প্রথম পদক্ষেপ যাতে দুই লক্ষের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা থেকে কী অর্জন হয়েছে তা কোনো হিসাবে মিলছে না।
যদিও বেশিরভাগ আফগান শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে, তবু আফগানিস্তানের আলোচনার সময় অনেক বিষয় কার্যকর করা বাকি রয়েছে, যেমন ক্ষমতা ভাগাভাগি, নিরস্ত্রীকরণ এবং তালেবান যোদ্ধাদের সমাজ পুনর্নির্মাণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নির্ধারণ এবং সংবিধান প্রণয়ন।
শঙ্কিত দিল্লি! অন্যরা কী ভাবছে?
ভারত বরাবরই বর্তমান আফগান সরকারের শক্তিশালী সমর্থক এবং ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে অবকাঠামোগত বিকাশ ও ব্যবসায় গড়ে তুলতে ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব কমানো এবং আফগানিস্তানকে ভারতবিরোধীদের ব্যবহারে বাধা দিয়ে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কাজে লাগানো। তালেবানের সাথে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে ভারত সরকার সমর্থন দেয়নি যদিও একবারে শেষ মুহূর্তে তালেবানের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে ইরান রাশিয়া ও কাতারে তিন দফা বৈঠক করেছে ভারতীয় কর্মকর্তারা। তালেবান বিজয়ে আফগানিস্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পাাশাপাশি কাশ্মিরে এর প্রভাব নিয়েও শঙ্কিত ভারত।
আফগানিস্তানের প্রতিবেশিদের মধ্যে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান দীর্ঘদিন ধরে তালিবান নামে একটি সুন্নি দলকে শত্রু হিসাবে দেখে আসছিল। ২০০১ সালে ইরান তালেবানদের উৎখাত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে এবং পরবর্তী আফগান সরকারকে সমর্থন করেছিল। পরে ইরানি নেতারা স্বীকার করেছেন যে তালেবান আফগানিস্তানে কিছুটা ক্ষমতা বজায় রাখতে থাকবে, তাই তারা সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেছে। সবশেশে ইরান আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে একটি সমঝোতার বৈঠকের আয়োজন করে একটি সক্রিয় ভূমিকা নিতে চেষ্টা করেছে।
রাশিয়া আশা করছে, বর্তমান সরকারের পতনের পরে আফগানিস্তানের সাথে মস্কোর সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অঞ্চলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো উপস্থিতি মোকাবেলায় রাশিয়া শান্তি প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে এবং আফগানিস্তানে তার প্রভাব বাড়াতে চায়। এটি গত এক বছরে তালেবান প্রতিনিধিদের এবং আফগান প্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকের আয়োজন করে।
দৃষ্টি চীন-তালেবান সম্পর্কের দিকে
আফগানিস্তানে বেইজিংয়ের আগ্রহগুলো প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক, কারণ এটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সাথে একীভূত হওয়ার আশাবাদী। চীন দেশটির বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগের উৎস এবং এটি আফগানিস্তানের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা নিতে আগ্রহী। ২০১৯ এর শেষদিকে, আফগানিস্তান এবং তালেবান কর্মকর্তারা বেইজিংয়ে একটি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং চীনা নেতারা মার্কিন-তালেবান চুক্তিকে সমর্থন করেন।
তালেবান মুখপাত্র সুহেল শাহীন বলেছেন, চীন আফগানিস্তানের ‘বন্ধু’ এবং পুনর্নির্মাণ কাজে বিনিয়োগের বিষয়ে বেইজিংয়ের সাথে কথা বলবে বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘যারা আফগানিস্তানকে অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে [হামলা চালানোর] সাইট হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, আমরা প্রতিশ্রুতি রেখেছি যে আমরা তাদের অনুমতি দেব না, এটি চীনসহ যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যক্তি বা সত্তা হোক না কেন।’
চীনা সরকারি মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের মূল্যায়নটিও গুরুত্বপূর্ণ। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ বছরের যুদ্ধ ও অশান্তির পরে আফগান সরকার এবং তালেবান দু’জনই চীনকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে। এটা ভবিষ্যতে আফগান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে চীনকে একটি ভালো ভিত্তি দেবে। চীন খুব কার্যকরভাবে তার প্রভাব ব্যবহার করবে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে শূন্যতা পূরণ করতে চীন আফগানিস্তানে যাবে না। আমেরিকা আফগানিস্তানে জোর করে আক্রমণ করেছিল এবং একেবারে উচ্চাভিলাষীভাবে এর রূপান্তর ও পুনর্নির্মাণের নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আফগানিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে চীনের অবস্থান পরিবর্তিত হবে না, অথবা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অ-হস্তক্ষেপের মূল নীতিটিও বদলাবে না। আমরা কেবল আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব এবং আমরা কখনই আফগানিস্তানে আধিপত্য বিস্তার করতে যাবো না।’
পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়, “আফগানিস্তানের অন্তর্নিহিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং এটি ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়। গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই দেশে ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিল। চীন কখনই তাদের পথে আফগানিস্তানে প্রবেশ করবে না এবং এটি নিশ্চিত করবে যে চীন কখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে ‘তৃতীয়’ দেশে পরিণত হবে না।”
আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নানা আশঙ্কা সত্ত্বেও ইতিবাচক অনেক দিক দেখা যাচ্ছে। বিশেষত এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব দেশই আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা পাক সেটিই কামনা করছে বলে মনে হয়। আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি হলে প্রায় চার দশক ধরে নানাভাবে যুদ্ধের মধ্যে থাকা দেশটিতে শান্তি ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আবার আশঙ্কার বিষয় হলো যারা আফগানিস্তানে হেরে গেছে বলে মনে করছে তারা নতুন কোন ছায়া যুদ্ধে ইন্ধন দিতে শুরু করলে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।