আবিদ রায়হান। বয়স ১১ বছর। সিলেটে থাকে। এখনো সে মাঝে মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সে। ঘুম থেকে উঠে মা-বাবার ভয়ে সত্যিই বিব্রতকর- এমন শতকরা ৮ জন ৫ বছরের শিশু, ১ দশমিক ৫ শতাংশ ১০ বছর বয়সী শিশুরা মাঝে মধ্যে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। ছেলেশিশুরা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি এ সমস্যায় ভুগে থাকে। আসলে তাদের এ ক্ষেত্রে মূত্রথলির স্ফিটার অপরিপক্ব থাকে। মা-বাবা তাদের যথাযথ টয়লেট ট্রেনিং করাননি। বংশগতিতে দেখা যায়, তাদের ভাইবোন বা চাচাতো-মামাতো ভাইবোনের ক্ষেত্রে এমনটি ছিল। অন্তত ২ থেকে ৩টি ক্ষেত্রে এমন ইতিহাস পাওয়া যায়।
কখনো প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে তারা নতুন করে বিছানা ভেজানো শুরু করে। অতিরিক্ত স্বাধীনতাহীনতা ও অতিরিক্ত স্ট্রেসে থাকা শিশুদের মধ্যেও এমনটি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মূত্রথলির ওপর অযথা চাপ পড়ে যাওয়ায় বিছানা ভেজানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি ডায়াবেটিস থাকে, তা হলেও বিছানা ভিজিয়ে ফেলতে পারে বারবার। মানসিকভাবে স্বভাবত তারা সুস্থ থাকে। অল্পসংখ্যকের মধ্যে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা দেখা যায়।
সব সময় যে বিছানা ভিজিয়ে আসছে, তাকে বলে প্রাইমারি এনিউরেসিস। আর যে কিছুদিন শুকনো ছিল, যেমন- ৬ মাস থেকে ১ বছর, কোনো কারণে আবার শুরু- এটিকে আমরা বলে থাকি সেকেন্ডারি এনিউরেসিস। অনেক শিশু দিনের বেলায় বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। এটি মোটেও সহজভাবে নেওয়া ঠিক নয়।
সমস্যার কারণ : প্রস্রাবের থলির স্নায়ু অসংবেদনশীলতা, জন্মগত কোনো ত্রুটি, যৌন অপব্যবহারের শিকার ইত্যাদি এ সমস্যার গুরুতর কারণ হতে পারে। আবার নিতান্তই ফিজিওলজিক্যাল অর্থাৎ স্বাভাবিক কারণে প্রস্রাবের অতিবেগে তারা ভুগে থাকতে পারে।
সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় : প্রথমে শিশু ও মা-বাবার মধ্যকার সমস্যাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া। কারণ সামান্য হলেও ঝামেলা অসামান্য। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে উভয়পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন বিছানা ভেজাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে, তাদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর শতকরা ৫ জন শিশু এ সমস্যা থেকে আপনাআপনি মুক্তি পেয়ে থাকে। বিছানা ভেজানোর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না, বকাবকি করা যাবে না। কিন্তু যেদিন সে শুকনো রাখল, সেদিন তাকে আদর করে দিন। যেদিন সে বিছানা ভিজিয়ে আবার গোছগাছ করে শুকনো বিছানা তৈরি করে শুয়ে পড়ল, সেদিন তাকে ‘তারকা পুরস্কার’ দিন। এতে তার মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হবে এবং আস্তে আস্তে সে আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সফল হবে। এতেও যদি কাজ না হয়, তা হলে ‘এনিউরেটিক অ্যালার্ম’ ব্যবহার করতে হবে। এই অ্যালার্মের সেন্সর শিশুর প্যান্টের ভেতর দেওয়া থাকবে। ভিজলেই এটা বেজে উঠবে এবং তার ঘুম ভাঙবে। সে উঠে বাথরুমে যাবে। আবার বিছানা গোছগাছ করে শোবে। এভাবে তার মধ্যে তৈরি হবে অন্তর্গত সতর্কতা। এটিই সবচেয়ে সফল চিকিৎসা পদ্ধতি বলা যায়।
এ সমস্যা সমাধানে কিছু ওষুধও রয়েছে। অবশ্য সেটির কার্যকারিতা খুবই কম। কোনো ক্যাম্পে যাচ্ছে কিংবা চাচাতো, মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে একত্রে শোবে, তখন তাকে আমরা ডেসমোপ্রেসিন খেতে বলব। কয়েক দিন সে বিছানা শুকনো রাখবে। অন্যান্য ওষুধ, যেমন- ইমিপ্রামিন আছে। ফল ভালো নয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
বিছানা ভেজানোর সমস্যাটি স্বভাবত জটিল নয়। এমনিতেই সেরে যায়। প্রয়োজন যথাযথ টয়লেট ট্রেনিং ও শিশুকে মাসসিক চাপমুক্ত রাখা। অতিপানি পান অথবা একেবারেই পানি খাচ্ছে না- দুটিই তার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে করোনাকালে নিজ ও পরিবারের প্রতি সচেতনে থাকুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশুরোগ বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল