ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রদবদল এসেছে। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে কট্টরপন্থি কূটনীতিক আলি বাঘেরি কানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাকে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা দলের প্রধান হিসেবে দেখা যেতে পারে। অভিজ্ঞ কূটনীতিক আব্বাস আরাকচিকে সরিয়ে নতুন করে আলি বাঘেরিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ রদবদল এমন সময় হলো যখন ভিয়েনায় নতুন করে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে এ পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষক মহল বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। খবর আল জাজিরা।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও চলতি বছর জুলাই থেকে অন্তত ৬টি পর্বের বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্বাস আরাকচি। ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতায় এসেই বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচনা আরকচির নেতৃত্বেই শুরু করেছিলেন। শুধু তাই নয়, আব্বাস আরকচির কূটনীতিক অভিজ্ঞতা বেশ দীর্ঘ। ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তির সময় তেহরানের দলে তিনিও ছিলেন। সেই সময় হাসান রুহানি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে এখন আরাকচিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমিরাবদুল্লাহাইনের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। এর অর্থ এটি হতে পারে যে, আরাকচিকে একেবারে সাইডলাইনে রাখা হয়নি।
এদিকে বাঘেরি কানি গত কয়েক বছর থেকেই পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন। আর এখন তাকেই চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রধান সমন্বয়ক করা হচ্ছে। তবে তিনি যদি পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব না দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা প্রত্যাহার বা লঘু করার দায় তার কাঁধেই বর্তাবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে তা হলে এ কট্টরপন্থি বাঘেরি কানিকে কেন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ইরানের নতুন সরকার আসলে কী চায়। খবরে বলা হয়েছে, জুন মাসে নির্বাচনের পর বাঘেরি কানিকে এ পদে সমর্থন দিয়ে আসছেন আরেক কট্টরপন্থি কূটনীতিক সাঈদ জলিলি। ২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত এ সাঈদ জলিলিই ছিলেন তেহরানের আলোচনা দলের প্রধান। কিন্তু তার আমলে কোনো সমঝোতা হয়নি এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়নি। সেই সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, মাহমুদ আহমাদেনিজাদ। সে সময় জলিলির সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাঘেরি কানি। জলিলি নিজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার সেই চাওয়া অপূর্ণই থেকে গেছে।
গত মঙ্গলবার বাঘেরি কানিকে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আগে তিনি ইরানের মানবাধিকারবিষয়ক কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি) চুক্তিকে ঐতিহাসিক তকমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চুক্তিটির সমালোচনা করতে থাকেন এবং তিনি ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। একই সঙ্গে পুনরায় পূর্বের চেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। এখন মার্কিন প্রশাসন চলছে জো বাইডেনের নেতৃত্ব। বাইডেন আসার পর পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আশা দেখা দিয়েছে। আলোচনার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই তেহরানে আলোচনা দলে রদবদলের খবর এলো।