আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২১তম এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নতুন কোনো সদস্যের আনুষ্ঠানিক অভিষেক হচ্ছে বলে নানা মহলে আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ মেয়ে শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় এবং নাতনী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র পর্যায়ের একাধিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। এবারই হয়তো শেষবারের মতো দলের সভাপতি হিসেবে থাকছেন তিনি। সে জন্য এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হতে পারে। যাতে শেখ হাসিনার অবর্তমানে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
ইতোমধ্যেই প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়কে পীরগঞ্জ থেকে এক নম্বর কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা বিভিন্ন ফোরামে বোনের পাশাপাশি থাকলেও এবার সরাসরি রাজনীতিতে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার খবর শোনা যাচ্ছে। তাদের যে কাউকেই দলের ১ নম্বর সদস্য হিসেবে মনোনীত করে বড় চমক দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তবে তাদের কেউই নিজ থেকে এমন আগ্রহের কথা দলের কোনো মহলে এখনো জানাননি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে এখনো কোনো কিছু বলেননি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই চান বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা দলের নেতৃত্বে আসুক। তারা বলছেন, বিশেষ করে জয় ও পুতুল দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলে দলের নেতৃত্ব আরো সংগঠিত হবে। এর সুফল ভোগ করবে আওয়ামী লীগই।
তাদের মতে, বিশ্বায়নের সাথে তালমিলিয়ে রাজনীতি করতে হলে বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি তথা কূটনৈতিক বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাসম্পন্ন মানুষের নেতৃত্বে আসা জরুরি। এসব বিষয়ে জয় ও পুতুল দু’জনেই যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। তবে জয় ও পুতুল একই সাথে নেতৃত্বে না এলেও তাদের কোনো একজন আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, এটি একান্তই পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। তবে তাদের ইচ্ছারও ব্যাপার আছে। তারা রাজনীতিতে আসবেন কি না তাও তো জানার ব্যাপার আছে।
ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, আজ ও আগামী দিনের নেতৃত্ব বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সভাপতির দুই সন্তান জয় ও পুতুলের মধ্যে এবার কেবল একজনই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য হিসেবে ঠাঁই পাচ্ছেন। তবে একমাত্র পুত্র জয় এখনই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে চান না, এটা তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও পারিবারিক আয়োজনে ইশারা-ইঙ্গিতে স্পষ্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে পরোক্ষভাবে দল ও সরকারের জন্য পরামর্শক হিসেবে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মাঠের রাজনীতিতে জয়ের সক্রিয়তা দৃশ্যমান না হলেও গত ১৭ নভেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটিতে এক নম্বর সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২৬ নভেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল শেষে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক নম্বর সদস্যও করা হয় জয়কে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা কমিটিতে স্থান পাওয়া জয় এখনই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে রাজি নন। এ পরিস্থিতিতে আগামী কমিটিতে পুতুল স্থান পেতে যাচ্ছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সম্পাদকমণ্ডলীর তিনজন সদস্য বলেন, ‘জয় আমাদের নেত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। পুতুল কোনো পদে নেই, কিন্তু নিজ যোগ্যতায় তিনি সারা বিশ্বে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের দু’জনেই নিজ নিজ কর্ম ও যোগ্যতায় সরকার ও দলীয় ঘরানার ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আমাদের নেত্রীও চান, তাদের দু’জনের কেউ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসুক। যাতে নেত্রীর অবর্তমানে তারা দলের হাল ধরতে পারেন। এবারের সম্মেলনে নেত্রী এমন একটি চমক উপহার দিতে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ইতোমধ্যে নিজ নিজ চিন্তা-চেতনা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের মন জয় করেছেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উন্মুখ হয়ে আছেন কবে তাদের মতো উচ্চশিক্ষিত, সৎ ও কর্মদক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগে এসে বিশ্বায়নের সাথে তালমিলিয়ে নেতৃত্ব দেবেন। তাদের কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলে তা নেতাকর্মীদের আরো উজ্জীবিত করবে।’