শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন

কলোরেক্টাল ক্যানসার, আপনি কি ঝুঁকিমুক্ত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৬১ বার

কলোরেক্টাল ক্যানসার বলতে বৃহদন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যানসারকে বোঝায়। বৃহদন্ত্রের ক্যানসারকে কোলন ও মলদ্বারের ক্যানসারকে রেক্টাল ক্যানসার বলা হয়। এই দুটিকে একত্র করে কলোরেক্টাল ক্যানসার বলে। বাংলাদেশে এক সময় এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলক কম। তবে ইদানীং এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী শনাক্তকরণ, নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

কলোরেক্টাল ক্যানসার ও বাংলাদেশ : বর্তমানে বাংলাদেশে কলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গড়ে প্রতি ৩০ জনে ১ জন এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তবে ব্যক্তিবিশেষে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর কারণে আরও বেড়ে যেতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রথম ১০টির মধ্যে ১টি। রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের মধ্যে এ ক্যানসার থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি ২-৩ গুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ নতুন রোগীর বয়স ৫০ বা তার ঊর্ধ্বে।

কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি : সাধারণত যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি, তারা ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। তবে বর্তমানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী ৩০ বা তার কম বয়সে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

খাদ্যাভ্যাস : অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন- গরু ও খাসির মাংস, ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, অধিক তেলযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস। পাশাপাশি আঁশজাতীয় খাবার, যেমন- শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি কম খাওয়া।

পারিবারিক ইতিহাস : রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে কোলন ক্যানসার থাকলে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

নির্দিষ্ট কিছু রোগ : ফ্যামিলিয়াল এডিনোমেটাস পলিপোসিস, ইনফ্লাম্যাটোরি বাওল ডিজিজ রোগ কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

জীবনযাত্রা : ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কম শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

কলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ : পায়ুপথে বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ বা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। মল ত্যাগের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করা। মলের রঙ গাঢ় লাল বা কালো বর্ণের হওয়া। তলপেটে কিংবা মলদ্বারে ব্যথা অনুভব হওয়া। অত্যধিক ওজন হ্রাস পাওয়া। পেটফাঁপা বা ক্ষুধামান্দ্য বোধ হওয়া। শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।

যখন ডাক্তারের কাছে যাবেন : উল্লিখিত এক বা একাধিক উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় : দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার, যেমন- টাটকা শাকসবজি, ফলমূল যুক্ত করুন। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্য, যেমন- গরু ও খাসির মাংস, ফাস্টফুড, তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। দৈনিক কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করুন। নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান, মদ্যপান শুধু ক্যানসার নয়, অন্যান্য অনেক প্রাণঘাতী রোগের কারণ। তাই ধূমপান, মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। বয়স ৪৫ বছর বয়সের বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং করুন।

কলোরেক্টাল ক্যানসার স্ক্রিনিং : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। আপনার যদি কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে থাকে, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কলোরেক্টাল ক্যানসার নির্ণয়ে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করা হয়ে থাকে। যেমন- ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট ( প্রতিবছরে ১ বার)। ফিকাল ইমিউনোকেমিক্যাল ব্লাড টেস্ট (প্রতিবছরে ১ বার)। ফ্লেক্সিবল সিগময়েডস্কোপি (প্রতি ৫ বছরে ১ বার)। ডাবল কন্ট্রাস্ট ব্যারিয়াম এনেমা (প্রতি ৫ বছরে ১ বার)। কোলোনোস্কপি (প্রতি ১০ বছরে ১ বার)। তবে সবার জন্য এক ধরনের টেস্ট উপযুক্ত নাও হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসা : কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণত সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে, তার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কোন চিকিৎসা কোন রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা ঠিক করে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশেই কলোরেক্টালসহ অন্যান্য ক্যানসারের সুষ্ঠু চিকিৎসা সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক হাসপাতালে ক্যানসারের সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

লেখক : ব্রেস্ট, খাদ্যনালি ও কলোরেক্টাল ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সার্জন; অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ এনআইসিআরএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com