লাল-সবুজের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্থানীয় বাংলাদেশ কম্যুনিটির বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ৪৯-তম মহান বিজয় দিবস আনন্দ-উদ্দীপনা এবং যথাযথ ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে দূতাবাস প্রাঙ্গনে উদযাপন করেছে। স্থানীয় বাংলাদেশ কম্যুনিটির অংশগ্রহণের সুবিধার্থে একদিন পূর্বে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দিবসটি আয়োজন করা হলেও বিজয় দিবসের নির্ধারিত দিনেই (১৬ ডিসেম্বর ২০১৯) যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। নেদারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাদের পরিবারের সদস্যসহ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। মূল অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকলের সম্মানে ১(এক) মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭১ সালে সম্ভ্রমহারা ‘বীরাঙ্গনা’দের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করে শোনানো হয়। আলোচনা পর্বে হল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় বাংলাদেশ কম্যুনিটির ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশ কম্যুনিটি এবং বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধনের উপর তারা গুরুত্ব আরোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা গতিশীল রাখতে তারা টেকসই উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানান। কমন ফান্ড ফর কমোডিটি (সিএফসি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ায় তারা মান্যবর রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল-কে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে একে জাতীয় বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন।
নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন কিভাবে তাঁর নেতৃত্ব সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিল। রাষ্ট্রদূত বেলাল স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের অমূল্য ত্যাগের বিনিময় হিসেবে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নতুন নতুন ধারণা এবং উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। জ্ঞান এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে নেদারল্যান্ডসের শ্রেষ্ঠত্বের উদাহরণ তুলে ধরে তা আমাদের দেশে স্থানান্তরে সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্যও তিনি তাদের প্রতি অনুরোধ করেন। এছাড়া, দেশাত্মবোধ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় তরুণ প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা আবশ্যক বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে গাম্বিয়া কর্তৃক জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচারাদালতে (আইসিজে) মায়ানমারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বহুল প্রতিক্ষীত গণহত্যা মামলার শুনানী বিজয়ের এইমাসে শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি উপস্থিত সকলকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ – মায়ানমার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেবার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত মানুষের জীবন রক্ষা করে বিশ্ববাসীর নিকট কিভাবে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন সে বিষয়ে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বেলালজোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং মৌলিক প্রয়োজনসমূহ নিশ্চিত করে দ্রুত তাদের নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিচারহীনতার সংষ্কৃতি বন্ধ করার প্রতিও তিনি জোর দেন।
নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি জানান যে, বিশ্ব দরবারে ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত পরবর্তী চার বছরের জন্য কমন ফান্ড ফর কমোডিটিজ (সিএফসি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছে। এ অর্জন সকল শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের যথাযথ উপলক্ষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে মর্মেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা পর্ব শেষে প্রবাসী বাংলাদেশী এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান, নাচ, কবিতা পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বিজয় দিবসের আবহ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ আকর্ষণ ছিল নেদারল্যান্ডে বাংলা গানের একটি ব্যান্ডদল ‘ত্রিমাত্রিক’-এর সঙ্গীত পরিবেশনা। বাংলাদেশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরুর ক্ষণের সাথে তাল মিলিয়ে সমবেত সুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অতঃপর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীসহ উপস্থিত সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে শুভেচ্ছা পুরষ্কার তুলে দেন রাষ্ট্রদূত পতœী ডঃ দিলরুবা নাসরীন। আগত সকল অতিথিকে বাংলাদেশী খাবারে আপ্যায়িত করা হয়।