নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ১৮৭১ সালের ৭ জুন, ঢাকার নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নবাব খাজা আহসানুল্লাহ এবং দাদার নাম নবাব খাজা আবদুল গণি। পূর্ববঙ্গের জমিদার হিসেবে তাদের ছিল ব্যাপক পরিচিতি। তাদের প্রচেষ্টায় ঢাকাতে প্রথম ওয়াসার পানি ও বিদ্যুৎ চালু হয়।
সলিমুল্লাহ ছিলেন স্বশিক্ষিত। সেই সঙ্গে সুশিক্ষিত। ব্রিটিশ, জার্মান, আরবি ও ফারসি ভাষার অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পারিবারিকভাবে তিনি শিক্ষালাভ করেন। আভিজাত্যের প্রাচীর ডিঙিয়ে তিনি সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন। ছোটবেলায় পারিবারিক রেওয়াজ অনুযায়ী তিনি দামি জরির পোশাকের পরিবর্তে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরতেন। ছিলেন পরোপকারী এবং উদার মনের মানুষ। তার অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট না থাকলেও, পারিবারিক ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ও নীতিনৈতিকতা দেখে ব্রিটিশ ভারতের সরকার ১৮৯৩ সালে তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়। প্রথমে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন ময়মনসিংহে। তার বাসাতে এবং অফিসে কেন ঘন ঘন বিপুলসংখ্যক জনগণ আসা-যাওয়া করে, সেই অভিযোগে তাকে প্রথমে বদলি করা হয় বিহারে, তারপর ত্রিপুরায়। দুই বছর পার না হতেই তিনি বিরক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি সমাজের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিক্ষার উন্নয়নে তিনি ছিলেন বেশি উৎসাহী। তিনি ছিলেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সৈয়দ আহমদ খানের অনুসারী।
১৯০১ সালে পিতার মৃত্যুর পর সলিমুল্লাহ নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৮৭৬ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সার্ভে স্কুলকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিলে নবাব আহসানুল্লাহ এক লাখ ১২ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু ইতোমধ্যে তিনি ইন্তেকাল করলে তার ছেলে স্যার সলিমুল্লাহ সেই অর্থ পরিশোধ করেন। তারপর ১৯০২ সালে এর নামকরণ হয় ‘ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল।’ সেই সময় সলিমুল্লাহ ঘোষণা দেন, তার দাদা খাজা আবদুল গণি নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত আবদুল গণি হাইস্কুল এবং ঢাকা মাদরাসা থেকে পাস করে যারা ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হতে পারবে, তাদের মধ্য থেকে অন্তত চারজনকে বৃত্তি দেয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবে প্রতিফলিত হলে কৃতজ্ঞতা ও স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটির নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪৭ সালে উন্নীত করে নামকরণ করা হয় আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ১৯৬২ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটির নাম হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ১৯০১ সালে স্যার সলিমুল্লাহ নবাব হিসেবে দায়িত্ব পালনের শুরুতে ঢাকার সব মহল্লায় নৈশস্কুল স্থাপন করেন।
গরিব ও অনাথ ছেলেমেয়েদের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ ১৯০৯ সালে ঢাকার কুমারটুলিতে ইসলামিয়া এতিমখানা নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। পরবর্তীকালে এটি ঢাকার আজিমপুরে স্থানান্তরিত হলে নামকরণ পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা’। বর্তমানেও আজিমপুরে এটির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভারতের গুজরাটের নাগরিক ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের উদ্যোগে কলকাতায় ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম’। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। ১৯৪৭ সালের মধ্য-আগস্টে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর এটির শাখা চালু হয় ঢাকাতে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতে প্রতিনিয়ত চলছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক মহৎ কর্মকাণ্ড।
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ছিলেন নারীশিক্ষার অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি মনে করতেন মায়ের কাছেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের ছবক পায়। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নারীর চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে প্রচলিত শিক্ষা অবকাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ব্রিটিশ সরকার। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ও রায় দুলালচন্দ্র দেব ১৯০৫ সালে নব গঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের জনশিক্ষা পরিচালককে আশ্বাস দেন যে, তারা নারীশিক্ষার উন্নতি সাধনে যথাযথ সহযোগিতা করবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৮ সালে স্যার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে ‘ফিমেল এডুকেশনাল কমিটি’ গঠিত হয়। এ কমিটির সদস্য ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুর।
১৯০৮ সালের ২৬, ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাতে। তিন দিনব্যাপী আলোচনার শেষে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- প্রতিটি জেলায় মেয়েদের জন্য ১০টি করে উন্নতমানের বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রতি জেলাতে মহিলা শিক্ষকের জন্য একটি করে প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় স্থাপন। যেসব কিশোরী ও মহিলা ঘরে বসে শিক্ষক দ্বারা কিংবা অভিভাবকের মাধ্যমে পর্দার আড়ালে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য আলাদা বিদ্যালয় স্থাপন অতীব জরুরি ইত্যাদি।
উন্নতমানের বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় স¤প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল। সেই সময় হিন্দু স¤প্রদায়ের নারী-পুরুষ শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল অনেক এগিয়ে। সেই তুলনায় মুসলমানরা ছিল অনেক পিছিয়ে। হয়তো সেই বিবেচনায় একই বছর মুসলিম নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উল্লিখিত নারীশিক্ষা কমিটির অধীনে ‘সাব-কমিটি ফর মোহামেডান ফিমেল এডুকেশন’ নামে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। এ সাব-কমিটির সভাপতি ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। এ কমিটি ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ বাতিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বহাল ছিল।
স্যার সলিমুল্লাহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং উন্নয়নে অর্থ প্রদান করেছিলেন। ১৯০২ সালে তিনি নেত্রকোনা মাদরাসা ও ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার জন্য তিন হাজার টাকা দেন। ময়মনসিংহ ছাত্রাবাস নির্মাণে এক হাজার টাকা দেন। ১৯০৩ সালে কুমিল্লা জেলার নবীনগর উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য এক হাজার এবং একই জেলার মুরাদনগর স্কুলের জন্য দেন এক হাজার ৭৫ টাকা। বরিশালের ইসলামিয়া বোর্ডিং পরিচালনার জন্য অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতা করেন। ১৯০৫ সালে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি কলেজের জন্য ৪০ হাজার টাকা দেন। মিশন স্কুল ফররোখাবাদের জন্য অর্থ পাঠান। কলকাতায় অবৈতনিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক অর্থ প্রদান করেন। পাবনা পলিটেকনিক স্কুলের জন্য অর্থ প্রদান করেন। কলকাতা মাদরাসায় বার্ষিক অনুদান প্রদান করেন। দিল্লির হেকিমি কলেজে অনুদান দেন। ১৯০৬ সালে কলকাতা মাদরাসাকে কলেজে উন্নীত করার সময় ছয় হাজার টাকা দেন। ১৯১১ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে পাঁচ হাজার টাকা দেন। ১৯১৪ সালে চৌবাড়িয়া স্কুল নির্মাণে ৩০০ টাকা দেন।
নবাব স্যার সলিমুল্লাহকে ব্রিটিশ ভারতের সরকার ১৯০২ সালে সিএসআই, ১৯০৩ সালে নবাব বাহাদুর, ১৯০৯ সালে কেসিএসআই এবং ১৯১১ সালে জিসিএসআই (গ্র্যান্ড কমান্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার) উপাধিতে ভ‚ষিত করে।
নবাব স্যার সলিমুল্লাহর উদ্যোগে এবং ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের অনুমোদনে এ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর, বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়ন এবং এর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। আমাদের পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে গঠিত নতুন প্রদেশের রাজধানী হয় এই ঢাকাতে।
নতুন প্রদেশের বেসরকারিভাবে মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর। ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গের এক বছর পূর্তি অনুষ্ঠানটি খুব জাঁকজমকভাবে পালিত হয় ঢাকার শাহবাগে। সে দিন উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজার ৫০০ ডেলিগেটসহ চার হাজার লোকের উপস্থিতিতে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। এ সংগঠনে স্যার আগা খান সভাপতি এবং সৈয়দ হাসান বিলগ্রামিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়। বয়সে সবার চেয়ে কনিষ্ঠ বলে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ নিজে ষষ্ঠ সহসভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। তারপর থেকে এ দেশে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কলকাতার কিছু হিন্দু কংগ্রেস নেতা, বুদ্ধিজীবীসহ সুবিধাবাদী হিন্দু-মুসলিম এলিট শ্রেণীর ষড়যন্ত্রের ফলে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর, দিল্লির দরবারে ব্রিটিশ ভারতের সম্রাট পঞ্চম জর্জ এক ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গ বাতিল করে দেন। সে দিনই লর্ড হার্ডিঞ্জ নবাব স্যার সলিমুল্লাহকে গ্রান্ড কমান্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার উপাধিতে ভ‚ষিত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে নবাব সলিমুল্লাহ বলে উঠলেন, স্যার বঙ্গভঙ্গ বাতিল করে আমাকে উপাধি দিলেন বটে, কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে আমার গলায় একটি কাঁটার মালা পরালেন। দেশে গিয়ে কী জবাব দেবো? সাথে সাথে মুসলিম লীগের সভাপতি স্যার আগা খান ও ধনবাড়ীর জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী স্যার সলিমুল্লাহকে বুঝিয়ে বললেন, আপনি যদি এভাবে প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করেন তাহলে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
ঢাকায় এসে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন। তার মানসিক বিপর্যয়ের খবর শুনে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় সফরে এলেন। লর্ড হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করতে যান নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখ। সে দিন লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে বঙ্গভঙ্গের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। সেই সাথে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমস্ত জায়গা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হন। তারপর ঢাকার শাহবাগে ২ ফেব্রুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়। হার্ডিঞ্জ সে দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। তারপর তিনি ভারত সচিবের কাছে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠান। সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯১২ সালের ৪ এপ্রিল। ২৭ মে বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক স্যার রবার্ট নাথানকে সভাপতি এবং ডি এস ফ্রেজারকে সাধারণ সম্পাদক করে নাথান কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা হলেন- নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ড. রাসবিহারী ঘোষ, আনন্দচন্দ্র রায়, জগন্নাথ কলেজের প্রিন্সিপাল ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল ডব্লিউ এ টি আচার্য, জি ডব্লিউ কুলচার, মোহাম্মদ আলী, ঢাকা মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর ওয়াহিদ, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রিন্সিপাল এইচ ডব্লিউ পিক, সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল সতীশচন্দ্র আচার্য প্রমুখ।
১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিশনের ইতিবাচক প্রতিবেদন। সে বছর ডিসেম্বর মাসে এটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ফলে এ দেশের মানুষ হতাশার মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি নবাব সলিমুল্লাহ মাত্র ৪৩ বছর সাত মাস বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে এ দেশে মানুষের মনোবল ভেঙে যায়। স্যার সলিমুল্লাহর অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে বাস্তবায়ন করেন নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সব সদস্যের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল পাসের আহ্বান জানান। ১৯১৭ সালের স্যাডলার কমিশনের ইতিবাচক প্রতিবেদনের পর ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ, ভারতীয় আইনসভা কর্তৃক পাস হয় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি আ্যাক্ট-১৯২০’। এ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়নের ফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী ও তিনটি আবাসিক হল নিয়ে শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা।
লেখক : কবি ও রম্যলেখক, প্রকাশিত গ্রন্থ ৭০টি