মনবতাবদী দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বক্তারা এ কথা বলেন। ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁর ১১৯তম জন্মোৎসব পালন করা হয় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে। পঞ্চাশ জনেরও বেশি মুক্ত চিন্তার মানুষ আরজ আলীর জীবন ও কর্ম নিয়ে এক মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রফেসর মতলুব আলী, লেখক আহমাদ মাযহার এবং কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জাকির হোসেন বাচ্চু। এটি আয়োজন করেছে জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ, নিউইয়র্ক।
স্বাগত বক্তব্যে জাকির হোসেন বাচ্চু আরজ আলীর সংক্ষিপ্ত জীবন ও তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। প্রফেসর মতলুব আলী আরজ আলী তার বক্তব্যে আরজ আলীর ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা নিয়ে আলোচনা করেন। আহমাদ মাযহার তার বক্তব্যে তোলে ধরেন তার জীবনাচরন ও দর্শনের সমসাময়িক প্রাসঙ্গীকতা। মুক্ত আলোচনায় গুরুত্বপূর্ন মতামত ব্যক্ত করেন কলামিস্ট সুব্রত বিশ্বাস, সাংবাদিক ফাহমিদা শিল্পী, গবেষক জুয়েল মালিক, কথা সাহিত্যিক সুবক্তগীন সাকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা রওশন আরা নিপা।
গবেষক জুয়েল মালিক বলেন, আরজ আলীর যুক্তি নির্ভর সৎ জীবন সব সময়ের জন্য অনুসরনীয়। তিনি যা বলেছেন তা সততার সঙ্গে নিজের জীবনেও প্রযোগ করেছেন। বাংলার মাটি ও মানুষের চিন্তক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর প্রচলিত ধারণাকে যৌক্তিক কিন্তু শিশু সূলভ সরলতায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে প্রশ্ন করেছেন ,ভাবনার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন । তাই তাহার এই প্রশ্ন আরও অধিক পঠন পাঠনের দরকার। যাতে ভাংগে আমাদের মনের অর্গল।
বদরুল চৌধুরী বলেন, যথা সময়ে শুরু হয়ে শেষ হওয়া অনুষ্ঠান নিউইয়র্কে কোনো দিন দেখি নাই। অন্যান্য অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য দর্শক তাড়া দিয়ে থাকেন। এখানে সবাই আয়োজনদের অনুরোধ করেছেন মুক্ত আলোচনা আরো সময় নিয়ে চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়োজনরা পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শেষ করেছেন। এমন যোগ্য মানুষদের নিয়ে আরো বেশি বেশি আলোচনা হওয়া প্রযোজন।
আয়োজনটি সম্পন্ন করতে অ্যাক্টিভিস্ট মুজাহিদ আনসারী, মুক্তধারার সিইও বিশ্বজিত সাহা, বাংলাদেশের গনজাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি এবং সাংবাদিক সঞ্জীবন সরকার ও রহমান মাহবুব এবং বাংলা চ্যানেলের কর্নধার শাহ জে চৌধুরী সহযোগীতা করেছেন।
আরজ আলী মাতুব্বর ১৯০০সালের ১৭ ডিসেম্বও বরিশালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং লেখক ছিলেন। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে আছে সত্যের সন্ধানে(১৯৭৩) সৃষ্টির রহস্য(১৯৭৭) অনুমান (১৯৮৩) স্মরণিকা (১৯৮২) ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০)। আরজ আলী মাতুব্বরের লেখায় উঠে এসেছে ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা । তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন।