ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। বর্তমান ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পদটি শূন্য হবে। নতুন ডিজি হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ইফার পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার এবং ইফার সাবেক উপপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফের নাম আলোচনায় রয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ইফার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক বর্তমানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়) ড. আব্দুল হামিদ জমাদ্দারের নামও রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব চায় তাহলে সে ক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠাতে পারে। অন্যথায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই।
সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইফার সচিব ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এরই মধ্যে আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি বা ফেব্রুয়ারি নাগাদ নতুন কাউকে ডিজি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এবার সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই কাউকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে। যুগ্ম সচিব ফজলুর রহমান ৩১ অক্টোবর ২০০৫ থেকে বর্তমান ডিজি নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংস্থাটির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগেও কয়েকজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইফার বর্তমান ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের সাথে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর সম্প্রতি সংস্থাটির কাজের বিশেষ অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাতে ইফা ডিজির বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। এর আগে গত জুন মাসে ইফার বোর্ড অব গভর্নরস ডিজিকে মেয়াদের বাকি সময় ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তাতে ডিজি রাজি না হওয়ায় বোর্ড ডিজির কিছু ক্ষমতা খর্ব করে। বিচার বিভাগ থেকে অবসর নেয়া এ কর্মকর্তা ১১ বছর টানা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ধর্মবিষয়ক এই সংস্থাটির ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবেও সুস্থ নন। সরকারি চাকরির অবসরকালীন ছুটির মেয়াদ ইতোমধ্যেই পার হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে তার অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন ছুটি বাতিল করে তাকে প্রথমে এক বছরের জন্য আবারো ইফার ডিজি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি তাকে আবারো দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হয়। গত মাসেও তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সর্বশেষ ডিজির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় আবারো চিকিৎসার্থে তার সিঙ্গাপুর গমনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেছে। তিনি ডিজি হিসেবে প্রথম নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সব মিলিয়ে এ কর্মকর্তার মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম।
ডিজির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইফা বোর্ড অব গভর্নরসের একজন সদস্য এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, তিনি তো টানা ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তার এই পদে থাকার জন্য আর কোনো আকাক্সা থাকা উচিত নয়। তা ছাড়া তিনি শারীরিকভাবেও সুস্থ নন। তাকে আমরা আগেই নিজ থেকেই সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরে যেতে রাজি হননি।
এদিকে নতুন ডিজি হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে ড. আব্দুল হামিদ জমাদ্দারকেই ডিজি হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনার কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া ইফার বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদারের ডিজি বা ভারপ্রাপ্ত ডিজির দায়িত্ব পাওয়ার বিষয় আলোচনায় রয়েছে। ইফার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নাম আলোচনায় এলেও বয়স বেশি হওয়ার কারণে তার নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অন্য দিকে ইফার সাবেক উপপরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ ইফার ডিজি পদের জন্য আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ পদে নিয়োগের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সরকারের শীর্ষপর্যায়ের পছন্দের ওপরই নির্ভর করবে বলে মনে করছেন অনেকেই।