শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন

নদী রক্ষায় আদালতের আদেশ সবাই এগিয়ে আসুন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ২১৮ বার

দখলে দূষণে বাংলাদেশের প্রতিটি নদী দুস্থ হয়ে পড়েছে। নদীগুলোর ওপর দীর্ঘ দিন ধরে আমরা নানা অনাচার চালিয়েছি। এর ওপর রয়েছে সীমান্তের ওপারে একচেটিয়া বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের ঘটনা। আমরা নিজেরা যদি দেশের নদীগুলোর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করতে পারি, পরে সীমান্তের ওপারের বাঁধ ও পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে জোরগলায় কথা বলতে পারব। সুখবর হলোÑ কয়েক বছর ধরে নদী সংরক্ষণ নিয়ে দেশে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। নাগরিক সমাজ আন্দোলনে নেমেছে। সংবাদমাধ্যম নিয়মিত খবর প্রকাশ করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। নদী রক্ষায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নদী সংরক্ষণ নিয়ে নতুন একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের একটি যৌথ বেঞ্চ, দেশে নদীর প্রকৃত সংখ্যা কতÑ তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংরক্ষণে নদীগুলোর চিহ্নিতকরণ ও নামকরণ অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের গাফিলতির বিষয়টি আদালতের রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট। দেশে কতটি নদী আছে; এখনো সুনির্দিষ্ট হয়নি। বেলার আইনজীবী জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যÑ দেশে ৪০৫টি নদী আছে। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন বলছেÑ ৭৭০টি। একজন গবেষকের হিসভবে এই সংখ্যা এক হাজার ১৮২টি।
আমাদের নদীগুলো স্বাধীনতার পর ব্যাপক হারে বেদখল হয়েছে। বহু জায়গায় নির্মিত হয়েছে স্থায়ী অবকাঠামো। অনেক জায়গায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়েছে। এসব যারা করছেন তারা প্রভাবশালী। নদীরক্ষা কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে পারছে না। কমিশন ৫৬ হাজার দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এর বাইরেও সংবাদমাধ্যমে আরো অনেক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে দখলদার হিসেবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক বিভাগওয়ারি নদী দখলমুক্ত করতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত আরো কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ তুরাগ নদের সীমানা পিলার সংশোধন করা। সীমানা পিলার ঠিকভাবে স্থাপনে ব্যর্থতার জন্য ভূমি সচিবসহ ১৯ বিবাদিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সাভারের বংশী নদীর বিষয়ে আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন অন্য আরেকটি যৌথ বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণগুলো নদী রক্ষা কার্যক্রম বেগবান করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু সবার আগে দরকার সব নদীর নাম ও গতিপথ চিহ্নিত করা। এ কাজ করা না গেলে নদী রক্ষায় কিভাবে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম চালানো সম্ভব? তাই সব কিছুর আগে নির্ভুল তালিকা প্রণয়ন করা উচিত।
প্রকৃতি আমাদের উদার হস্তে নদ-নদী দান করেছে। অমূল্য এই সম্পদের প্রতি আমরা যথযথ দায়িত্ব পালন করিনি। ফলে বহু নদী মৃতপ্রায় হয়ে পড়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের নদীগুলোর মৃতদশার কথা বলা যায়। এগুলোর পানিতে একসময় মানুষ গোসল করত, মাছ ধরত। এমনকি পানও করত। অথচ এখন শরীরে লাগলে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভয়াবহভাবে দূষণ ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে পানি। বাস্তবে সারা দেশের নদীগুলোর অবস্থা কমবেশি অবহেলিত। আমরা আশা করব নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম সবাই একসাথে দেশের নদী রক্ষায় সর্বোচ্চ সোচ্চার থাকবে। প্রতিটি নদী উদ্ধার করে দূষণমুক্ত করতে হবে। এ জন্য নিজ নিজ অবস্থানে থেকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। সবাই গুরুত্বসহকারে অবদান রাখলে অচিরেই দেশের নদ-নদীগুলো নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com