শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কলকাতায় বাংলাদেশি কনস্যুলেট ঘেরাওয়ের চেষ্টা, সংঘর্ষে আহত পুলিশ চলমান অস্থিরতার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির বিচারপতিকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা হিজবুল্লাহর বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির সাথে কথা বলেছেন জয়শঙ্কর ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী সাইফুল হত্যা : সরাসরি জড়িত ৮, শনাক্ত ১৩ র‍্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছেলেসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ

ঋণ কেলেঙ্কারির সুরাহা ১০ বছরেও হয়নি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৭২ বার

দশ বছরেও সুরাহা হয়নি বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির। ব্যাংকের তিন শাখা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

কেলেঙ্কারির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ বলেছেন, কোনো ঘটনাই অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। বেসিক ব্যাংকের ঘটনারও সুরাহা হবে। রোববার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রমাণ করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কারণ এক সময় অভিযোগকারী, সাক্ষী কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। তারা নানা কারণে এড়িয়ে যায়। তবে কোনো কিছুই আটকে থাকবে না বলে জানান তিনি।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট বিভাগ দুদকের ১০ জন তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে ক্ষোভ, উষ্মা ও হতাশা প্রকাশ করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই সময় প্রকৃত হোতাসহ দোষীদের আসামি করে তদন্ত শেষ করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু এরপরও কেটে গেছে দুই বছর।
সেই সময় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলোচিত আবদুল হাই বাচ্চুকে পাঁচ দফা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকা পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মামলার চার্জশিট দেয়া হয়নি। মামলা তদন্তের একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জানা যায়, বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতির কিছু টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। সে বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানো হলেও এখনও যথাযথ জবাব মেলেনি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বেসিক ব্যাংক মামলার চার্জশিট অনুমোদন চেয়ে কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকার শেষ গন্তব্য বের করা না যাওয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কিছু টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তা খতিয়ে দেখতে কয়েকটি দেশে এমএলআর পাঠানো হয়েছে। ওই সব দেশ থেকে তথ্য পাওয়া গেলে মামলাগুলোর চার্জশিটের অনুমোদন দেয়া হবে।

২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন।

অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনো চলমান। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয়ে আরো পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।

ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো: সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। অথচ মামলা দায়েরের বেশ কিছু দিন পর ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল।

এমনকি দুদকের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু বলেছিলেন, আমি যা করেছি সরল মনে করেছি। অনেকক্ষেত্রে ভুল করেছি। তবে সব দায় আমার নয়। কারণ, বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে আমি কিছু করিনি।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com