ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার গত ৫ মাসে নিট ঋণ নিয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ সুবাদে ২৫ নভেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা গত ৩০ জুনে ছিল দুই লাখ দুই হাজার ১১৫ কোটি টাকা। চলতি মাসে আরো সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে। এ থেকে পুরনো ঋণ সুদে আসলে পরিশোধ করা হবে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ সুবাদে ঋণ হবে আরো দুই হাজার কোটি টাকা। আর সরকারের ঋণের এ কর্মসূচি ঠিক থাকলে ৩১ ডিসেম্বর শেষে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণের স্থিতি ১৬ হাজার কোটি টাকায় ইতি টানবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশী-বিদেশী পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে সুদ ব্যয়। গত অর্থবছরের বাজেটে একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত ছিল সুদ ব্যয়। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও গত বছরের চেয়ে পাঁচ হাজার ১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি মাসেই ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে পৌনে ছয় হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে যে হারে ঋণ নিচ্ছে তার বেশির ভাগ অংশই পরিশোধ করতে হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, চলতি ডিসেম্বরে সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেযার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে নেয়া হবে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে নেয়া হবে ছয় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পুরনো ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার। এ ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিল মেয়াদ পূর্তি হবে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বন্ড মেয়াদ পূর্তিতে পরিশোধ করা হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এ সুবাদে চলতি মাসে সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নেবে দুই হাজার কোটি টাকা।
সরকারের ঋণ নেয়ার সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নেয়া হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করেছে চার হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এ সুবাদে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে আলোচ্য সময়ে নিট ঋণ নেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ফলে ২৫ নভেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে। আয় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন করতে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হবে প্রায় সাড়ে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমদানি-রফতানিতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে যে ক্ষত দেখা দিয়েছে তা সারতে দীর্ঘ দিন লেগে যেতে পারে। ফলে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে। আর এটা হলে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে আগামী অর্থবছর শেষে ব্যাংক ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে বাড়তি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এমনিতেই বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ইতোমধ্যে তহবিল সঙ্কটে ভুগছে। এ কারণে বেসরকারি খাতের প্রতিও নজর দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা ।