সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন

হৃদরোগের ৮০ শতাংশ সমস্যাই প্রতিরোধযোগ্য

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২০৪ বার

শুরুতেই বলে রাখি, হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। বাকি ২০ শতাংশ প্রতিকারযোগ্য হলেও ব্যয়বহুল। আক্রান্ত হলে জীবনের কর্মক্ষমতা, শরীরের উৎপাদনক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে যেটি ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য, সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে সবার আগে।

ওজন কমান, ব্যায়াম করুন : শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন। ওজন কমানোর দুটি উপায় হলো- শর্করা জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। ভাত, রুটি, আলু, চিনি, মিষ্টি, মিষ্টান্ন, চাল গম দিয়ে তৈরি যাবতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে। পরিমাণমতো চর্বি, পর্যাপ্ত মাছ, সাদা মাংস (মুরগি), কুসুমসহ একটি ডিম , ইচ্ছেমতো শাকসবজি, সালাদ, পরিমিত তাজা ফল এবং কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করবেন। যদি ক্যালরি মেপে খেতে চান, তা হলে প্রতিদিন ১ হাজার কিলোক্যালরির বেশি খাবার গ্রহণ করবেন না। ওজন কমানোর দ্বিতীয় কিন্তু কম কার্যকর পদ্ধতি হলো- নিয়মিত ব্যায়াম করা। খোলা জায়গায় সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন, যাতে শরীরে ঘাম ঝরে এবং হার্টিবিট ১২০ পর্যন্ত ওঠে। শুধু হাঁটাচলা বা ব্যায়ামে ওজন তেমন একটা না কমলেও তা হৃৎপি- ও রক্তনালি সচল রাখে, ব্লকমুক্ত রাখে, প্রেসার কমায়, ডায়াবেটিস কমায়, কোলেস্টেরল কমায়, শরীরের শেপ ঠিক রাখে, কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং মন সতেজ রাখে। ব্যায়াম বা হাঁটাচলার মধ্যে অন্তত ১৫/২০ মিনিট রোদে হাঁটুন। বাইরে যেতে না পারলে ছাদে বা বারান্দায় বসে শরীরে রোদ লাগান। এতে ভিটামিন-ডি তৈরিতে সহায়ক হয়। তবে গ্লাস ঘেরা রুমের রোদে লাভ হবে না।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন : উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার আরেক নীরব ঘাতক। কারণ এ ক্ষেক্রে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ বা কষ্ট দেয় না। অনেক রোগী ২০০/১০০ প্রেশার নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেহেতু তার কোনো কষ্ট হচ্ছে না, তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। অন্য কোনো কারণে চেকআপের সময় প্রেশার ধরা পড়লেও রোগী তত গুরুত্ব দিতে চান না। অনেকে ওষুধ শুরু করলেও পরে তা ছেড়ে দেন। কারণ হাই প্রেশারে তার তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়মিত থাকলে তা হার্ট, কিডনি, ব্রেইন, চোখের রেটিনা ও পায়ের রক্তনালিসহ সারা শরীরের ক্ষতি করবে। যখন উপসর্গ দেখা দেবে, তখন দেখা যাবে ওইসব অঙ্গ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই উপসর্গের অপেক্ষায় না থেকে হাই প্রেশারের চিকিৎসা করুন। নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করবেন না। ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন। আলগা লবণ খাবেন না। তরকারিতে অতিরিক্ত লবণ দেবেন না। অনেকে কাঁচা লবণ না খেয়ে ভেজে খান। এটা সম্পূর্ণ ভুল পদক্ষেপ। লবণ ভাজলেও একই থাকে। প্রেশার বাড়ায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন : বয়স তিরিশ হলেই ডায়াবেটিস চেক করুন। বছরে একবার চেক করুন। একটা স্যাম্পলে অনেক সময় প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তাই কমপক্ষে দুটো স্যাম্পল (যেমন- নাশতার দুঘণ্টা পরের সুগার ও তিন মাসের গড় সুগার জানতে ঐনঅ১ঈ পরীক্ষা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ টেস্টই যথেষ্ট। তবে যখন সন্দেহজনক বর্ডারলাইন রেজাল্ট আসবে, তখন ঙএঞঞ পরীক্ষা করাতে হবে। বছরে একবার ষরঢ়রফ ঢ়ৎড়ভরষব, ঞঝঐ , পৎবধঃরহরহব, ঈইঈ, রৎড়হ ঢ়ৎড়ভরষব পরীক্ষা করুন।

ডায়াবেটিস হলে কী করবেন : ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। অর্থাৎ এটি শুধু মেটাবলিক বা হরমোনাল সমস্যা নয়। এটি শরীরের সব রক্তনালি আক্রান্ত করে। তাই হার্টের সঙ্গে এটি সরাসরি যুক্ত। ডায়াবেটিসের মাত্রার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। তবে প্রথম ধাপ হলো ডায়েট ও ব্যায়াম। এ পদ্ধতিতে সুগার নিয়ন্ত্রণ না হলে ওষুধ প্রয়োজন। প্রথমে খাবার বড়ি তারপর ইনসুলিন।

সুগার কত রাখবেন : খালি পেটে ৬ থেকে ৭ এবং খাবার দুঘণ্টা পর ৭ থেকে ৯। তবে কোনোভাবে ১০-এর ওপরে নয়। তিন মাসের গড় ঐনঅ১ঈ ৭-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য, মদ্যপান ছেড়ে দিন।

কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন : অনেকে আছেন, হাই কোলেস্টেরলের ওষুধ শুরু করে কিছুদিন পর সেবন বন্ধ করে দেন। এটি ঠিক নয়। হাই কোলেস্টেরল ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ। রক্তনালিতে ব্লক তৈরির মূল উপাদান হলো চর্বি। তাই চর্বিও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

দুটো ওষুধ কখনো বন্ধ করবেন না : যাদের একবার হৃদরোগ, রক্তনালিতে ব্লক ধরা পড়েছে, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, ব্রেইন স্ট্রোক করেছে, তারা দুটো ওষুধ সারাজীবন খেয়ে যাবেন। একটি হলো কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ (ংঃধঃরহ), দ্বিতীয়টি হলো রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন- অংঢ়রৎরহ, পষড়ঢ়রফড়মৎবষ)। শুধু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামশে বিশেষ ক্ষেত্রে সাময়িক স্থগিত রাখা যেতে পারে।

ডায়াবেটিসে কোলেস্টেরল ওষুধ আজীবন : যাদের একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তাদের বয়স চল্লিশ বা বেশি হলে সারাজীবন কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ কমবেশি খেয়ে যেতে হবে। এমনকি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা যা-ই থাকুক, অনির্দিষ্টকালের জন্য স্ট্যাটিন খেতে হবে। মোটাদাগে এই হলো ৮০ শতাংশ প্রতিরোধব্যবস্থা।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ও সিসিইউ ইন-চার্জ

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com