দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় কোভিড-১৯ বিষয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীও ওমিক্রন নিয়ে উচ্চমাত্রার সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুস্টার ডোজের প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ সময়োচিত। উল্লেখ্য, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনার টিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৬ জন অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর তাদের মধ্যে ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১ জন পেয়েছেন দুটি ডোজ। এই হিসাবে দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন।
দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পাওয়ার আগে তৃতীয় ডোজের পক্ষে ছিলেন না আমাদের গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর এখন টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আশঙ্কার বিষয় হলো, দক্ষিণ অফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে এটি অন্তত ৫৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের দেহে ওমিক্রনের হদিস মিলেছে। যুক্তরাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটি নিশ্চিত করেছে। জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই বাংলাদেশির মধ্যে ধরনটি শনাক্ত হওয়ায় দেশ সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বস্তুত ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ভয়ের কারণ হলো, আমাদের হাটবাজার, পর্যটন, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছু খোলা রয়েছে।
তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপারেও মানুষের মধ্যে ব্যাপক শিথিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত ছড়াতে সক্ষম ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে সতর্কতা, সচেতনতা, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
দ্রুত সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঠেকাতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে পরামর্শক কমিটি। এগুলো হলো, সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম সীমিত করা এবং ষাটোর্ধ্ব ও ‘সম্মুখসারির কর্মী’দের মধ্যে যারা কমপক্ষে ছয় মাস আগে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের বুস্টার (তৃতীয় ডোজ) দেওয়া। এ ছাড়া দেশে প্রবেশের সব পয়েন্টে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন কার্যক্রম আরও জোরদার করার পাশাপাশি ‘অফলাইন’ সভা পরিহার করে ‘অনলাইন’ সভার আয়োজন ইত্যাদি। পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সারা দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারালেও সংকট কাটিয়ে নতুন ছন্দে জীবন সাজানোর চেষ্টা করছে মানুষ। এ অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছে দ্রুত সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ওমিক্রনের আবির্ভাবে বিশ্ব করোনা মহামারি মোকাবিলায় নতুন সংকটের মখোমুখি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা যেমন জরুরি, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বুস্টার ডোজের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অস্বীকার করার উপায় নেই, শুরু থেকেই দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে। ওমিক্রন মোকাবিলায় যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।