আর দুইদিন পর ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আরও একটি বছর ঝড়ে পড়বে। ঘটনাবহুল এই বছরটি জাতিকে বিভিন্নভাবে নাড়া দিয়েছে। তবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি সময় ধরে থাকার কারণে মৃত্যুর হার বেশি ছিল এ বছর। একই সাথে দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেককেই হারাতে হয়েছে। আর বেদনাদায়ক এসব ঘটনা নিয়ে কালের সাক্ষী হল ২০১৯ ।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব
বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এপ্রিল মাসে শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। গত কয়েক বছর রাজধানীতে এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলেও এ বছরই সমগ্র বাংলাদেশে ডেঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবর পর্যন্ত এর সময় সীমা থাকলেও এবছর এর রেশ এখন পর্যন্ত রয়েছে।
চলতি বছর এ পর্যন্ত সর্বমোট ১ লাখ ১ হাজার ৩১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে ১ লাখ ৯৫১ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এছাড়া সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ পর্যন্ত ২৬৬টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর প্রতিবেদন পেয়েছে। এর মধ্যে তারা ২৩৪টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে।
কুমিল্লায় ১৩ শ্রমিক নিহত
২৫ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের নারায়নপুর এলাকায় ব্রিক ফিল্ডে কয়লা ভর্তি ট্রাক উল্টে ঘটনাস্থলে ১৩ শ্রমিক নিহত হন। ইটের ভাটার এই শ্রমিকেরা সেখানে একটি খুপরি ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন।
ইটের ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য কয়লা পৌঁছে দিতে সেসময় একটি ট্রাক সেখানে প্রবেশ করে। কয়লা নামানোর সময় ট্রাকটি উল্টে ঐ খুপরি ঘরটির উপর গিয়ে পরে। সে সময় একসাথে কয়লা ও ট্রাকের নিচের চাপা পড়েন শ্রমিকেরা। দুর্ঘটনার সময় সেখানে ১৫ জন শ্রমিক ঘুমাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলেই ১২ জন শ্রমিক মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পথে অপর একজন মারা যান।
চুড়িহাট্টায় আগুন
এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যখন ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের আয়োজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক সেই সময় পুরোনো ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা এলাকায় এক ভায়বহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭০ জনের বেশি মানুষ মারা যান। চুড়িহাট্টায় চারতলা একটি ভবনে থাকা রাসায়নিক গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ঘিঞ্জি সেই এলাকায় আশপাশের ভবনে রাসায়নিক গুদাম থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মারাত্নক রুপ নেয়।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন ব্যক্তি নিহত হন যার মধ্যে একজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছেন। বেশ কিছু মানুষ ভবন থেকে লাফ দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও ৭৩ জন আহত হন এবং শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও অ্যাপোলো হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা
এ বছরের ২৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষ
১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হন। ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শতাধিক যাত্রী আহত হন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এক নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়। চালক সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জে ট্রেন লাইনচ্যুত, তিনটি বগিতে আগুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেন দুর্ঘটনার একদিন পর ১৪ নভেম্বর উত্তরাঞ্চলীয় জেলা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুপুরে একটি আন্তনগর ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। রংপুর এক্সপ্রেস নামে ট্রেনটির ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয় ও তিনটি বগিতে আগুন ধরে যায়। তবে আগুন ধরার পরই বগিগুলো থেকে যাত্রীদের প্রায় সবাই জানালার কাঁচ ভেঙে বেরিয়ে আসায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় আগুন
১১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ উপজেলার চুনকুটিয়ার হিজলতলা এলাকার প্রাইম পেট অ্যাণ্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ২২ জন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেদিনই কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেন। বাকিরা পরে হাসপাতালে মারা যান। একতলা টিনশেডে ওই কারখানায় ওয়ান টাইম প্লেট, কাপসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হত। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা মালিক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত একজনের ভাই।
নতুন বছর নব উদ্যমে শুরু হোক আমাদের জীবন। সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক সবার জীবন। সূত্র : ইউএনবি।