সদ্য বিদায় নেয়া বছরের শেষ দিনগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বেশ কড়া সুরে কথা বলেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র প্রসঙ্গ সামনে এনে তারা দ্রুত নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। সরকার পতন আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন বছরেও রাজপথে শক্ত কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা বিরোধী দলগুলোর জন্য বেশ কঠিন হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে নতুন বছরের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। সরকারপ্রধান ২০২০-’২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ উপলক্ষে বছরজুড়ে সরকারি ও দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। নতুন এই বছরে সব ধরনের অস্থিরতা এড়াতে সরকারও কঠোর অবস্থান নিতে পারে। রাজপথে কোনো কর্মসূচির অনুমতি নাও পেতে পারে বিরোধীরা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্তির মুহূর্ত থেকে শুরু হবে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। চলবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের কাউন্ট ডাউন বা ক্ষণগণনা শুরু হবে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকেই। চলছে এ উপলক্ষে নানা ধরনের প্রস্তুতি। এ উপলক্ষে সরকার গঠিত কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ সফল করতে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় গঠিত আটটি উপকমিটি কাজ শুরু করেছে। এগুলো হচ্ছেÑ ১. ওয়ার্কশপ ও আলোচনা সভা উপকমিটি ২. আন্তর্জাতিক কর্মসূচি যোগাযোগ উপকমিটি ৩. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী উপকমিটি ৪. প্রকাশনা ও সাহিত্য অনুষ্ঠান উপকমিটি ৫. আন্তর্জাতিক প্রকাশনা অনুবাদ উপকমিটি ৬. ক্রীড়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট উপকমিটি ৭. মিডিয়া প্রকাশ ও ডকুমেন্টেশন উপকমিটি এবং ৮. চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র উপকমিটি।
জানা গেছে, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও একাধিক বেসরকারি সংগঠন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ও বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মসূচি প্রায় চূড়ান্ত। আগামী ১৭ মার্চ থেকে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হবে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০২ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
‘মুজিববর্ষ’ পালনের এই বিশাল প্রস্তুতিই বলে দিচ্ছে সরকারের মূল ফোকাস কোথায়। মুজিববর্ষে তাই বিরোধীদের রাজপথে কঠিন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
মুজিববর্ষ পালনের পাশাপাশি ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। নতুন এই বছরে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিস্তারিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে। এজন্য বিএনপি ও জোটের পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক দিকে মুজিববর্ষ পালন এবং অন্য দিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সিরিজ কর্মসূচির ফাঁকে ‘গণতন্ত্র উদ্ধারের’ ইস্যুতে বিরোধীদের জন্য আলাদা সঙ্ঘবদ্ধ কর্মসূচি পালন কঠিন হবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা বলছেন।
বিএনপি নতুন বছরেও দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে থাকতে চায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন বছরের প্রাক্কালে বলেছেন, গেল বছরটি ছিল গণতন্ত্র হত্যার বছর, মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়ার বছর এবং ফ্যাসিবাদের জয়ের বছর। নতুন বছরে আমরা সবসময়ই নতুন করে ভাবতে চাই, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চাই।
গেল বছরের শেষ দিকে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই সংগঠন সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলনÑ এটা নাগরিক ঐক্যের না, এটা বিএনপির না, এটা কোনো দলের না। এটা সবার। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আছি, যাব না।’
‘ভোট ডাকাতির সরকারের’ এক বছর পূর্তিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ঘোষিত কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার পর সরকারের পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন নেতারা। নতুন বছরে তারা নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে চান। তবে প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রিয়াকলাপের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নানা ইস্যুতে নতুন বছরে বিকল্প আন্দোলন গড়ে তোলার আভাস রয়েছে। ডাকসুর ভিপি নুরের আন্দোলন ঘিরে নানা বাস্তবতা এখন লেগেই আছে। আন্দোলনের মাঠে নুরের অদম্য উদ্যোগ অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নুর। নতুন বছরে ডাকসু নেতার ভাগ্যে কী আছে, তা সময়ই বলে দেবে।