প্রকৃতির দখিনা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। গাছে গাছে বসেছে পলাশ, শিমুলের মেলা। কৃষ্ণচূড়ার ডালে আগুনলাগা রঙ। ফুলে ফুলে ভ্রমর করছে খেলা। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাগুন। মাঘের জড়তা ভেঙে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। একই সঙ্গে আজ উদযাপিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। চারদিক ছড়াবে তাই লাল-বাসন্তী। বসন্তকে জড়িয়ে ধরেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
করোনা মহামারীর আতঙ্ক, স্বজন হারানোর বেদনা, জীবিকার অনিশ্চয়তা সব কিছু পেছনে ফেলে মানুষ যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে, তখন ধরণীতেও ‘বসন্ত এসে গেছে’। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠছে নতুন জীবনের ঢেউ। গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে উৎসব করার নির্দেশনা থাকলেও মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল নিয়মের সব বেড়াজাল ভেঙে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকার কারণে গত বছরের মতো এবারের আয়োজনও থাকবে স্বল্প পরিসরের ও সীমিত সময়ের জন্য।
আজ ফাগুন হাওয়া উদাস করে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলবে ঋতুরাজ। মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে বসন্ত ভালোবাসায়। বাসন্তী আবিরের সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় লাল গোলাপের টায়রায় তারুণ্যের ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠবে শৈল্পিকতা। ফুলেল পরিবেশে হবে বসন্তবরণের নানা অনুষ্ঠান। আবহমান বাংলার বাসন্তীদের হৃদয়ে তরুণরাও ধরা দেবে একরাশ ফাল্গুনী সাজে। লাল কিংবা হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীর বাঁধভাঙা উল্লাসে আজ নতুনভাবে সেজে উঠবে দেশ।
করোনার কারণে এবারের বসন্ত উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলার পরিবর্তে আয়োজন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে। বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে কপোত-কপোতী। ফুল, কার্ড, চকোলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত খুদে বার্তায় ভরে যাবে মুঠোফোনের মেসেজ বক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপেও ছড়িয়ে যাবে পরানের গহিনের উষ্ণতা।
১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর থেকেই একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। একদিনে দুটি ফুলনির্ভর উৎসব হওয়ায় কয়েক দিন আগেই ফুলে ফুলে ভরে গেছে দেশের ফুলের সব পাইকারি বাজার।
ফুলচাষিরা জানান, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে সারাদেশের ফুলের চাহিদা থাকায় গত কয়েক দিন বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তারা। আগে আগেই ফুল পাঠিয়েছেন ঢাকার শাহবাগ, আগারগাঁও; চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় বাজার এবং ফেনী, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাঁসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারি বাজারগুলোয়। তবে করোনার কারণে গত বছরের মতোই এবার ফুলের চাহিদাটা একটু কম বলেই জানিয়েছেন তারা।