সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে কিডনি সংযোজন : ট্রান্সপ্লান্টেশন বা অঙ্গ সংযোজন কী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২
  • ১৮৭ বার

এটি এমন একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, যেখানে একজন ব্যক্তির শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে অথবা একজন ব্যক্তি (দাতা) থেকে অন্য ব্যক্তির (গ্রহীতা) ক্ষতিগ্রস্ত বা কোনো কারণে না থাকা টিস্যু বা একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপিত বা সংযোজিত হয়।

দাতা এবং প্রাপক একই অবস্থানে থাকতে পারে বা অঙ্গগুলো দাতার এক সাইট থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে। একই ব্যক্তির শরীরের মধ্যে প্রতিস্থাপিত অঙ্গ বা টিস্যুগুলোকে অটোগ্রাফ্ট বলা হয়। একই প্রজাতির একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে অ্যালোগ্রাফ্ট বলে। অ্যালোগ্রাফ্ট জীবিত, আইসিইউতে থাকা ঘোষিত ব্রেইন ডেথ অবস্থায় বিযুক্ত অর্গান এবং ক্যাডেভারিক (মৃত) উৎস থেকে হতে পারে।

যখন একটি অঙ্গ বা টিস্যু এমন একজন দাতা থেকে অন্য একজন গ্রহীতাকে দান করা হয় যিনি জিনগতভাবে অভিন্ন (যেমন যমজ ভাই বা বোন) তাকেই আইসোগ্রাফট বলে। আইসোগ্রাফটগুলো অন্যান্য ধরনের ট্রান্সপ্লান্ট থেকে আলাদা, কারণ এখানে জেনেটিক্যাল মিল থাকায় কোনো ইমিউন রেসপন্স হয় না। ফলে বেশি সফল হয় অপারেশন।

আবার যখন এক প্রজাতির অঙ্গ বা টিস্যু অন্য প্রজাতির মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয় তাকে জেনোগ্রাফট বলে।

কোন কোন অঙ্গ বা টিস্যুর সংযোজন করা যায়
ট্রান্সপ্লান্টেশন শরীরের বিভিন্ন পূর্ণাঙ্গ অঙ্গ (যেমন, কিডনি, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের টিস্যু (যেমন, চোখের কর্নিয়া, চামড়া, হার্ট ভালভ, শিরা ইত্যাদি) হতে পারে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যেসব অঙ্গ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, হার্ট-ফুসফুস একত্রে, কিডনি, লিভার, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র, থাইমাস, জরায়ু, হাত, পা, পেনিস, এমনকি মুখাবয়ব। টিস্যু প্রতিস্থাপনের মধ্যে আছে হাড়, টেন্ডন, চোখের কর্নিয়া, ত্বক, হার্টের ভালভ, স্নায়ু, বোনম্যারো, রক্ত ও এর বিভিন্ন উপাদান, আইলেটস্ অব লেংগারহেন্স সেল, ওভারি, জরায়ু এবং শিরা। বিশ্বব্যাপী, কিডনি হলো সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপিত অঙ্গ, তার পরে লিভার এবং তার পরে হৃৎপিণ্ড। কর্নিয়া এবং মাস্কিউলোস্কেলেটাল টিস্যু গ্রাফ্ট হলো সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপিত টিস্যু। এ টিস্যু প্রতিস্থাপনের সংখ্যা দশগুণেরও বেশি।

হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দাতাদের কাছ থেকে টিস্যু উদ্ধার করা যেতে পারে। অঙ্গগুলোর বিপরীতে, বেশির ভাগ টিস্যু (কর্নিয়া বাদে) পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তার মানে এসব টিস্যুকে টিস্যু ব্যাংকে সংরক্ষণ করা যায়।

ইতিহাসে বিভিন্ন অঙ্গ সংযোজনের টাইমলাইন
১৮৬৯ সালে প্রথম স্কিন ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। সর্বপ্রথম কর্নিয়াল অটোট্রান্সপ্লান্ট করা হয় ১৯০৫ সালে এবং অ্যালোট্রান্সপ্লান্ট করা হয় ১৯০৮ সালে। ১৯৩১ সালে প্রথম ইউটেরাস ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ১৮৮৩ সালে থাইরয়েড করা হয়। ১৯২৬ সালে একজন ডোনার থেকে প্রথম টেসটিস ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। সর্বপ্রথম সফল কিডনি সংযোজন হয় ১৯৫৪ সালে যমজ সন্তানদের মধ্যে যা ছিল লিভিং রিলেটেড কিডনি। ১৯৫৫ সালে প্রথম হার্ট ভালভ অ্যালোগ্রাফট সংযোজন করা হয়। ১৯৬২ সালে মৃত ব্যক্তি থেকে কিডনি সংগ্রহ করে সংযোজন করা হয়। ১৯৬৩ সালে প্রথম ফুসফুস সংযোজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে সফল প্যানক্রিয়াস সংযোজিত হয়। ১৯৬৭ সালে হার্ট ও লিভার সংযোজন করা হয়। ১৯৮১ সালে ব্রুস রিজ কর্তৃক প্রথম হার্ট-ফুসফুস একত্রে সংযোজন করা হয়। ১৯৮৩ সালে প্রথম ফুসফুসের লোব সংযোজন করা হয়। ১৯৯২ সালে লিভিং রিলেটেড ডোনার থেকে প্রথমবারের মতো লিভার-কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম জীবিত হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৯৮ সালে প্রথম সফল হাত ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ১৯৯৮ সালে জীবিত লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়। ২০০০ সালে প্রথম ল্যাপারোস্কোপিক জীবিত ডোনারের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। ২০০৪ সালে একই জীবিত ব্যক্তি থেকে ইনটেস্টাইন এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট একসাথে করা হয়। ২০০৫ সালে ওভারিয়ান ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম রবোটিক হেপাটেক্টমি এবং আংশিক মুখ প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালে সফল পেনিস ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০০৮ সালে ট্রান্সপ্লান্টেড ওভারি থেকে প্রথম বাচ্চার জন্ম এবং দুই হাতের বাহু ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০০৮ সালে প্রায় ৮০% মুখ ট্রান্সপ্লান্ট হয়। ২০০৯ সালে মোটা মানুষের প্রথম রবোটিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০১০ সালে পুরো মুখ ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০১৪ সালে প্রথম বাচ্চা ট্রান্সপ্লান্টেড জরায়ুতে বড় হয়ে ডেলিভারি হয় এবং পেনিস ও নিওন্যাটাল অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট হয়। ২০২১ সালে দুই বাহু এবং কাঁধ ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। ২০২২ সালে শুকর থেকে মানুষে হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশে কিডনি সংযোজন আইন
একজন কিডনি বিকল রোগীর দেহে কিডনি সংযোজন মানে, ঐ মানুষের জন্য দ্বিতীয়বার প্রাণ ফিরে পাওয়া। ১৩ এপ্রিল, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম মানবদেহে ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইন অনুযায়ী জীবিত এবং ব্রেইন-ডেড রক্ত সম্পর্কীয় স্বজন ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অঙ্গ লেনদেন বৈধ ঘোষণা করা হয়। রক্তসম্পর্কীয় স্বজন বলতে বুঝানো হয় আপন ভাই-বোন, মা-বাবা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা।

তবে ৮ জানুয়ারি ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পাশকৃত সংশোধিত আইন যা কার্যকর হয় ২৮ জানুয়ারি থেকে, তাতে নিকটাত্মীয়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। উপরোক্ত সংশোধিত আইনে একেবারে নিকটাত্মীয় ছাড়াও চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, খালাতো ভাই এবং নানা-নানি, দাদা-দাদিকে নিকটাত্মীয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নিকটতম আত্মীয়দের কাছ থেকে কিডনি নেয়াকে। কিডনি দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের ভেতর হতে হবে। আর ক্যাডাভারিক বা ডিসিসড্ কিডনি সংযোজনের ক্ষেত্রে বয়স ২ থেকে ৬৫ বছর হলে চলবে এবং মৃত্যুর আগে তাকে সম্মতিপত্র অথবা মৃত্যুর পর নিকটাত্মীয়ের সম্মতিতে তার দুটো কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস অপারেশনের মাধ্যমে ব্রেইন ডেথ ঘোষণার পর বিযুক্ত করা যাবে।

এর বাইরে কেউ স্বেচ্ছায় দান করতে চাইলেও কিডনি দেয়া-নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া ক্লিনিক্যালি মৃত ব্যক্তি বা ব্রেইন ডেথ হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির কিডনি আইন-কানুন মেনে নেয়া যেতে পারে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে শিথিল করার পরও বাংলাদেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের তেমন কোনো উন্নতি হয় নাই।

অথচ কিডনি সংযোজন সংখ্যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ২০১৯ সালে ছিল বিশ্বে দ্বিতীয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরই)। এর কারণ ওই দেশের জনসংখ্যা এবং বাংলাদেশের চেয়েও শিথিল অঙ্গ সংযোজন আইন। এই দাতা সঙ্কট হলো, আমাদের দেশে কিডনি সংযোজনের প্রধান অন্তরায়। যে কেউ চাইলেই আরেক জনকে কিডনি দান করতে পারে না। দাতা ও গ্রহীতা উভয়েরই রক্তের গ্রুপ ও টিস্যুর মিল থাকতে হয়। দাতার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ মুক্ত, পর্যাপ্ত কিডনি কার্যক্ষমতাসহ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে এবং দাতার স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই কেবল তার কিডনি বা অঙ্গ সংযোজনের জন্য নেয়া যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আপনজনদের মধ্যে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও ভুল ধারণার কারণে কিডনি দিতে রাজি হয় না, আবার যারা রাজি হয় তারাও এতগুলো ফিটনেস পরীক্ষার মানদণ্ডে কোনো না কোনো জায়গায় বাতিল হয়ে যায়। পরিশেষে খুব অল্প ক্ষেত্রেই প্রকৃত দাতা পাওয়া যায়। একে তো কিডনি দাতার সঙ্কট, আবার এর সাথে যুক্ত হয় ধর্মীয় কুসংস্কার। এ বিষয়ে বিশ্বের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতাদের মতামত থেকে জানা যায়, প্রায় সব ধর্ম এবং সমাজে জীবিত অথবা মৃত ব্যক্তির কিডনি দান করা একটি মহান মানবিক কর্ম হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের দেশে ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সমাজকর্মীদের কিডনি দানে উৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের খুব ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার যে, একজন সুস্থ মানুষের জন্য একটি সুস্থ কিডনিই যথেষ্ট, দুটো কিডনির প্রয়োজন হয় না। কিডনি দাতা সঙ্কটের আরো বড় যে কারণ যুক্ত আছে তা হলো, কিছুটা কঠোর দেশের অঙ্গ সংযোজন আইন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অঙ্গ সংযোজন আইন অনেকটাই শিথিল প্রকৃতির। সেখানে অনাত্মীয় ডোনারদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ কিডনি কেনা-বেচার জন্য কঠোর আইন আছে। ফলে এসব আইন মেনে যেসব ডোনার কিডনি দানে রাজি থাকবে, তাদেরকে কিডনি দানের আগে একটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। এভাবে অঙ্গ সংযোজন আইনকে শিথিল না করলে কিডনি দাতা সঙ্কটের সমাধান হবে না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশীয় আইনের কঠোরতার কারণে অনেক কিডনি ট্রান্সপ্লান্টযোগ্য রোগী, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শিথিল আইনের অধীনে লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় করে প্রতি বছর বাধ্য হয়ে শত শত রোগী ভারতে গিয়ে ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে নিয়ে আসে। এতে এসব রোগীর ভোগান্তি যেমন বাড়ে তেমনি নিজের দেশের টাকা অন্য দেশে চলে যায়। এ জন্য জীবন রক্ষার তাগিদে কোনো রকম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অনাত্মীয় ব্যক্তিদের কিডনি গ্রহণ করার আইন পাস করাতে পারলে কিডনি দাতা প্রাপ্তির খরা কিছুটা হলেও কেটে যাবে।

১৯৮২ সালে অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কিডনি সংযোজন করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ট্রান্সপ্লান্ট সফল হলেও রোগী ৬-৮ সপ্তাহ পরে নিউমোনিয়ায় মারা যান। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে আরো একটি সফল কিডনি সংযোজন হয়। সে রোগী বেঁচেছিল মাত্র ০৯ মাস। তার পরেও ১৯৮৮ সালের পর থেকে কিডনি সংযোজন চিকিৎসা বাংলাদেশে গতি পেতে শুরু করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে কিডনিদাতাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, তারা একটি কিডনি দানের জন্য বাড়তি কোনো অসুবিধা ভোগ করে না। বছরের পর বছর ধরে কিডনি দাতাদের পরীক্ষা করে তাদের সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থ ও কর্মক্ষম পাওয়া গেছে।

এটা প্রমাণিত হওয়ার পরই সারা বিশ্বেই জীবিত কিডনি দাতাকে কিডনি দানে উৎসাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে কিডনি অকেজো রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

কারা ডোনার হতে পারবে
শুধু নিকটাত্মীয়ের কিডনি দিয়ে সব কিডনি অকেজো রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বেশিসংখ্যক কিডনি অকেজো রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনটি উৎস থেকে কিডনি সংগ্রহ করে কাজে লাগানো যায়। স্বাভাবিকভাবে চলাচলকারী জীবিত সুস্থ কিডনি দাতার দানকৃত কিডনি, মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির কিডনি যাকে ইতোমধ্যেই ব্রেইন ডেড বা ব্রেইন স্টিম ডেড ঘোষণা করা হয়েছে (ক্যাডাভারিক কিডনি) এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নন-হার্ট বিটিং বা সারকুলেটরি ডেথ ডোনারের কিডনি- এ উৎসের প্রাপ্ত কিডনি অন্য মানুষের শরীরে কিডনি সংযোজনে কাজে লাগানো যায়। ব্রেইন ডেড মানে ব্রেইনের ফাংশন যা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে এবং আর্টিফিসিয়াল ভেন্টিলেশনের সাহায্যে হার্টবিটসহ বিভিন্ন অর্গান বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩% ব্রেইন ডেথ হয়। হার্টবিট বন্ধ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও ডোনারের কাছ থেকে অর্গান নেয়া যায়। একজন ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০টির ওপর গ্রাফট করার মতো অর্গান অথবা টিস্যু নেয়া যায়। এটা করা যায় তিনটি কারণে : নন-হার্ট বিটিং ডোনার থেকে টিস্যু নিয়ে কাজে লাগাতে পারা, টিস্যু ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে পারা এবং একজন ডোনার থেকে অনেক গ্রাফট টিস্যু নিতে পারার কারণে। ২০১৬ সালে জন্মগতভাবে জরায়ুবিহীন এক ভদ্র মহিলার পেটে সাফল্যজনকভাবে ক্যাডাভারিক বা ডিসিসড্ ব্যক্তির জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয় এবং ওই প্রতিস্থাপিত জরায়ুতে বাচ্চা ধারণেরও ইতিহাস রয়েছে।

আইসিইউতে থাকা রোগীর কিডনি নিকটাত্মীয়ের সম্মতিক্রমে তার শরীর থেকে দুটো কিডনি বিযুক্ত করে তা তাৎক্ষণিকভাবে দুটো কিডনি অকেজো রোগীর দেহে সংযোজন করা যায় অর্থাৎ একজন মৃত ব্যক্তি দু’জন কিডনি অকেজো রোগীকে নতুন জীবনদান করতে পারে। অথচ কোনো ব্যক্তির মৃত্যু আইসিইউ বাদে ঘরে বা হাসপাতালে ঘটলে ওই ধরনের রোগীর কিডনি কোনো কাজে আসে না।

তাই এ ব্যাপারে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়াসহ বহু রোগীর আইসিইউতে অকাল মৃত্যু ঘটছে। মানবিক কারণে ওইসব রোগীর কিডনি ও লিভার, হার্ট বিযুক্ত করে কিডনি, লিভার ও হার্ট অকেজো রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপন করা গেলে বহু রোগী নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে। এ ছাড়াও আইসিইউতে থাকা রোগীর চোখের কর্নিয়া বিযুক্ত করে অন্য একজন অন্ধ রোগীর চোখে লাগাতে পারলে একজন অন্ধ দুনিয়ার আলো দেখতে পায়।

এভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে একজন মানুষ ইচ্ছা করলে মৃত্যুর পর আরো পাঁচজন মানুষকে নতুন জীবন দান এবং অন্য একজনকে দিনের আলো উপহার দিতে পারে। আশা করি, স্বেচ্ছায় অঙ্গদাতার এ মহানুভবতার জন্য পৃথিবীবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় এবং আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন।

কিডনি সংযোজন বিংশ শতাব্দীর একটি অতি উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এর সাফল্য নির্ভর করে হাসপাতালের দক্ষ চিকিৎসক, বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত আইসিইউ নার্স এবং নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত ওষুধ ব্যবহারের ওপর। অপারেশনের জন্য দরকার হয় দুটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং জীবাণুমুক্ত আইসিইউ।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অভ্ হিস্টোপ্যাথলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com