অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ৭৯টি দেশের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সাথে আরো ৭৭টি দেশের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। সবমিলে গত বছর বিএফআইইউ ১৯১টি অর্থপাচারের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এক বছর আগে যা ছিল ১০৩টি। এ হিসাবে এক বছরে অর্থপাচারের ঘটনা বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন বন্ধ, বিদেশে অর্থপাচার রোধসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিভিন্ন দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করে। একই সাথে এমওইউর বাইরেও এমন্ড গ্রুপের সদস্য হিসেবে অন্যান্য দেশের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যাচাই-বাছাই করে থাকে বিএফআইইউ। অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে তা সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএফআইইউ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু বৈদেশিক মুদ্রা পাচারেই তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে না, দেশের অভ্যন্তরেও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন-লেনদেন প্রতিরোধে পাঁচটি সংস্থার সাথে এমওইউ করেছে বিএফআইইউ। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এনবিআরের সাথে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের সাথে, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের সাথে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাথে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি এবং বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডরার সাথে গত বছরের ৩১ মার্চ।
বিএফআইইউর পরিসংখ্যান দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিএফআইইউ বিদেশ থেকে অর্থপাচারসহ ৬২টি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করে। ওই অর্থবছরে সদস্য দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশী নাগরিকদের তথ্য প্রদান করা হয়েছে ৩৪টি। পরের অর্থবছরে (২০১৯-২০) বিএফআইইউ ১০৩টি অর্থপাচার ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে। বিপরীতে বিদেশী নাগরিকদের তথ্য প্রদান করা হয়েছে ১৮টি। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশ অর্থপাচারসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছে ১৯১টি। বিপরীতে তথ্য প্রদান করা হয়েছে ২২টির।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গেলো বছরে আলোচিত অর্থ পাচারের ঘটনা উদঘাটন হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ তার সহযোগীদের। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের ঘটনা উদঘাটন করা হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগ অর্থই বিদেশে পাচার করা হয়। কোন দেশে কিভাবে অর্থ পাচার করা হয় তার যাবতীয় তথ্য এখন দুদকসহ তদন্তকারী সংস্থার কাছে রয়েছে। এসব অর্থ পাচারের বেশির ভাগ তথ্য বিএফআইইউ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়।
বিএফআইইউ প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে ব্যাংকিং খাতে সন্দেহজনক লেনদেনও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এক বছরেই সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৬৭৫টি। এক বছরের ব্যবধানে তা গত অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ২৮০টি। অবৈধভাবে যত অর্থ লেনদেন হয়েছে তার বেশির ভাগই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। এক বছরে অবৈধ লেনদেনের ৮৫ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ নগণ্য।
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, আমরা কানাডার বেগমপাড়া, মালয়েশিয়া এবং পিকে হালদার নিয়ে কাজ করেছি এবং এ বিষয়টি যথাযথ সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিদেশে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য বিএফআইইউর কাছে নেই। তাহলে বিএফআইইউর কাজ কী, গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নে বিএফআইইউর, ডিজিএম কামাল হোসেন বলেন, অর্থপাচারের তথ্য বিএফআইইউর কাছে আছে, তবে বলা যাবে না। এরপর মাসুদ বিশ্বাস স্বীকার করে বলেন, আপনাদের সব প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারিনি। কারণ অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।