দুই সপ্তাহ ধরে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন কারখানার শ্রমিকরা। আগেই জানানো হয়েছিল মালিককন্যার গায়েহলুদ ও বিয়েতে তারাই অতিথি। মালিকপক্ষ শুধু নিমন্ত্রণই করেনি, তাদের দিয়েছে গায়েহলুদের পাঞ্জাবি ও শাড়ি। মালিকের এমন উদারতায় শ্রমিকরাও সর্বোচ্চ ভালোবাসা দেখিয়েছেন। বিশ, পঞ্চাশ-একশ’ টাকা চাঁদায় উপহার দিয়েছেন চমৎকার এক সেট স্বর্ণের গহনা। প্রায় দেড় লাখ টাকায় কেনা সেই গহনা গার্মেন্টস কন্যারাই পরিয়ে দিয়েছেন মালিককন্যার গায়ে।
দেশে হাজারো পোশাক মালিক রয়েছেন; তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে অভিজাত ক্লাবে। দাওয়াত পেয়েছেন দেশের নামকরা নামি-দামি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা। সেখানে হয়তো মালিকের মেয়ের বিয়ের আয়োজন দেখে কেবল দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছেন শ্রমিকরা। কিন্তু ব্যবসায়ী সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে কারখানা বন্ধ রেখে শ্রমিকদের নিয়ে মেয়ের বিয়ের আয়োজন উদযাপনের সাহস সম্ভবত একজনই করেছেন। যিনি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী সমাজে খুবই পরিচিত মুখ। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক নানা কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করায় ব্যবসায়ীদের বাইরে পুরো চট্টগ্রামেই আলাদা পরিচিতি রয়েছে এসএম আবু তৈয়বের। নগরীর নাসিরাবাদে ইনডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টসের এই মালিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ কিন্তু তার বিত্ত-বৈভব নয়, সাধারণ মানুষের প্রতি তার অসাধারণ ভালোবাসা। মেয়ের গায়েহলুদে নিজ কারখানার ১৬০০ শ্রমিককে নিমন্ত্রণ করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
গতকাল রবিবার রাতে নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে মেয়ে প্রীতির গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হয় কারখানার ছাদে। এতে গার্মেন্টস কন্যাদের সরব অংশগ্রহণ পুরো অনুষ্ঠানটিকে দেয় আলাদা সৌন্দর্য। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব ও উলফাতুন্নেছা পুতুল দম্পতির একমাত্র কন্যা সাইকা তাফাননুম প্রীতির বিয়ে হয় ঢাকার বারিধারার আসলাম মোল্লা ও রুবিনা মোল্লার পুত্র শফিউল ইসলাম মোল্লার (নিলয়) সঙ্গে।
সূত্র জানায়, গায়েহলুদ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার কারখানার সব শাখায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। গার্মেন্টসের ছাদের ওপর মঞ্চ করে আয়োজন করা হয় মালিককন্যার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। ছাদজুড়ে ছিলেন শত শত নারী। আর তারা সবাই গার্মেন্টসকন্যা। সবার পরনে একই শাড়ি। ব্যবসায়ী আবু তৈয়বের স্ত্রী উলফাতুন্নেছা পুতুলও একই শাড়ি পরে এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। জানা যায়, পুরো অনুষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা করে গার্মেন্টসকর্মীরাই। কারখানার সব নারী শ্রমিককেই মালিক দিয়েছেন হলুদ শাড়ি ও পাঞ্জাবি। যে শাড়িটি তিনি নিজের (আবু তৈয়ব) স্ত্রী ও স্বজনদের জন্য কেনেন, ঠিক একই শাড়ি কেনেন কারখানার ১৬০০ শ্রমিকের জন্য। পুত্রসহ নিজে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যে পাঞ্জাবি পরেন, ঠিক একই পাঞ্জাবি দেন গার্মেন্টসের পুরুষ শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের। চট্টগ্রাম ক্লাবের বাবুর্চি তার দেওয়া মেনুতেই রান্না করবেন। সেই রান্না পরিবেশিত হয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে। শুধু পোশাকে নয়, খাবারেও ছিল আভিজাত্য। মোরগ পোলাও, ডিম কারি, বোরহানি, জর্দা বাদ যায়নি কিছুই। নিজের একমাত্র কন্যার বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজ কর্মচারীদের নিমন্ত্রণের বিষয়ে এসএম আবু তৈয়ব বলেন, এটা প্রচারের জন্য নয়। গার্মেন্টস কারখানার এই খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে আমার জন্য, আমার কন্যার জন্য, পুরো পরিবারের জন্য। এরাই তো রক্ত-ঘাম দিয়ে আমাকে এই অবস্থানে এনেছেন। আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়েহলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি।