রোজা ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। রোজার আরবি শব্দ সওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুসলমান নর-নারী রোজার নিয়তে পানাহার, যৌনকর্ম ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। যা পালন করা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘হে ঈমানদারেরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সূরা বাকারা-১৮৩)
অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি
রোজার মাধ্যমে মানুষ তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারে। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভের অন্যতম উপায় হলো তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়। কোনো মানুষের মনে যদি আল্লাহর ভয় থাকে তবে তার দ্বারা কোন অন্যায়, অপরাধ সংঘটিত হতে পারে না। দুনিয়াতে অশান্তির মূল কারণ হলো মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকা। আর রোজা রাখার দ্বারা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়।
রিয়া মুক্ত ইবাদত
অনেক আমল রয়েছে যা মানুষ রিয়া বা লোক দেখানোর জন্যও করে থাকে। নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ, হজ্ব ও দান-সাদকাহ করে থাকে। পক্ষান্তরে রোজা তার ব্যতিক্রম, কারণ রোজা হলো সংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণ। কেউ ইচ্ছা করলেও রোজা কাউকে দেখাতে পারবে না। যদি কোন মানুষ রোজা রেখে অন্যের কাছে বলে বেড়ায় তবে তা নিছক উপবাস বলেই গণ্য হবে। রোজার প্রকৃত হক তার দ্বারা পালন হবে না।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন
প্রত্যেক নেক আমলের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিদান রয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে পুরস্কার স্বরূপ প্রদান করবেন। তবে রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ আল্লাহ তায়ালা রোজাদারকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করবেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা আমার জন্য পানাহার, কামাচার পরিত্যাগ করে। রোজা আমার জন্যই, তার পুরস্কার আমি নিজেই দেবো। আর প্রত্যেক নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে দশ গুন। (সহিহ বুখারি : ১৭৭৩)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম
রোজার দ্বারা বান্দা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারে। একজন মানুষ যখন দুনিয়ার আরাম আয়েশ ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি খুশি হন, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন।
গুনাহ মাফ করার উপায়
বান্দা জেনে না জেনে অসংখ্য গুনাহ করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা রোজার মাধ্যমে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। হযরত আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াব লাভের আশায় রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ মুসলিম : ২০১৪)
রোজা ভঙ্গের শাস্তি
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, যা বালেগ হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। রোজার জন্য আল্লাহতায়ালা বান্দাকে নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন। আবার যারা কোনো প্রকার ওজর ব্যতিত রমজানের ফরজ রোজা ত্যাগ করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিনতম শাস্তি। হযরত আবু উমামা [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টাভাবে ঝুলছে। তাদের গলাটি ফাড়া এবং তা থেকে রক্ত ঝড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হলো, এরা ওই সব ব্যক্তি যারা বিনা ওজরে রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করেছিল।’ (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ)
রমজান মাসের রোজার এমন গুরুত্বপূর্ণ যে সারা জীবন রোজা রাখলেও তার একটির সমান মর্যাদা হবে না। হজরত আবু হুরায়রা [রা’] থেকে বণিত আছে, যে ব্যক্তি ওজর এবং রোগ ব্যতীত রমজানের একটি রোজা ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের রোজা দ্বারাও এর কাজা আদায় হবে না। যদিও সে সারা জীবন রোজা রাখে। (সহিহ বুখারি : ১৮১১)
লেখিকা : শিক্ষার্থী, জামেয়া কাসেমিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, নরসিংদী