রোজা ইবাদতের বসন্ত কাল। বসন্ত আবহে মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহপ্রেমের ফুল ফোটে। ফুলের সৌরভ অনুভবে ইবাদতে সজীব হয়ে ওঠে মন। আল্লাহর ভালোবাসায় দিনভর পানাহার বর্জন করে বান্দা। সিজদায় কপাল বিছিয়ে দেয় মাটিতে। মাসজুড়ে রোজা, ইফতার, সেহরি, তারাবি, তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া-দরুদ, দান-সদকা- এসব আয়োজন উপলক্ষ মাত্র। মাসজুড়ে আয়োজনের একমাত্র লক্ষ্য তাকওয়া (আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর প্রেম) অর্জন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনটা তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্যও ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা-১৮৩)
রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরে তাকওয়ার আলো জ্বালাতে চেয়েছেন। ইচ্ছা করেছেন মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহপ্রেমের ফুল ফোটাতে। ইমাম গাযযালির (রহ) দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রোজা হলো, মানুষে মানুষে আখলাকে ইলাহি বা আল্লাহর
গুণ মনব মনে জাগিয়ে তোলা। রোজা মানুষকে ফেরেশতাদের স্বভাবে উন্নীত করে। ব্যক্তিকে প্রবৃত্তির অন্যায় আশ্রয় থেকে মুক্তি দেয়। এদিকে ফেরেশতারা সব রকম চাহিদামুক্ত। বিপরীতে মানুষের আছে দৈহিক মানবিকসহ সব রকম চাহিদা। সেই চাহিদা নিয়ন্ত্রণে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে উপহার দিয়েছেন বিবেক ও বুদ্ধির আলো। সেই বিবেকের ডানায় ভর করে মানুষ ফেরেশতার মর্যাদা অতিক্রম করবে। ধন্য-গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে মহান আল্লাহর দরবারে। এহয়াউল উলুমুদ্দিন : ১/ ২১৬
হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ) বলেছেন, রোজার মাধ্যমে শুধু পশুসুলভ চরিত্রের মৃত্যু ঘটবে এমন নয়, বরং বিশুদ্ধ রোজা মানেই তাকওয়ার উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সিঁড়ি।
মানব জীবনের তাকওয়া গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআন বলে, হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো। আলে ইমরান : ১০২
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকওয়াওয়ালা ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। সূরা তাওবা : ৪
কোরআন আরও বলছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর মনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন। সূরা বাকারা, ১৯৪ মহানবী (স) বলেন, দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। এক. একটি চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। দুই. আর অপর চোখ যা আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত অবস্থায় রাতযাপন করে। তিরমিজি শরিফ তিরমিজি হাদিস নং ১৬৮৯
তাকওয়ার ব্যাখ্যায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ এবং অশ্লীল কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকি বলা হয়। সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির
দেহ ও মনের যৌথ সংযমই আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান অবলম্বন। পৃথিবীখ্যাত ফিকাহবিদ আবুল লাইস বলেন, মন জমিন আল্লাহপ্রেমে আবাদ হয়ে উঠবে তখন, যখন ব্যক্তির মুখ চোখ কান মন ও পেট রোজা পালন করবে। রোজাদার মিথ্যাচার, পরনিন্দা, পরচর্চা ও অপ্রীতিকর কথাবার্তা থেকে বিরত থাকবে। কান বাদ্যযন্ত্রে বুঁদ হয়ে থাকবে না, চোখ যাবে না অশ্লীলতার অন্ধকারে। মন প্রেম-ভালোবাসা, মানবতা, উদারতা-পরোপকারিতা, পরমতসহিষ্ণুতার গুণে গড়ে উঠবে। হারাম উপার্জন থেকে নিজেও পরিবারের সদস্যদের বাঁচাবে। তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য কোরআনে বলা হয়েছে, এসব আল্লাহপ্রেমীর জন্য রয়েছে পরকালে সুবিশাল জান্নাত ও অনন্ত ভোগবিলাস। সূরা তূর : ১৭ প্রভুর প্রতি প্রকৃত ভয় ও ভালোবাসা সম্বল করে রোজা পালন করলে, তাওবার প্রদীপ জ্বলে উঠবে আমাদের হৃদয়ে।
লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম