ইবাদতের বসন্তকাল রমজান। সওয়াবের ভরা মৌসুম। রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া
হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে (মহাকল্যাণ থেকে) বঞ্চিত হলো।’ [সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৩ ও ইবনে মাজাহ : ১৬৪৪]
এ মাসে রয়েছে অনেক আমল। এর মধ্য থেকে ৩০টি বিশেষ আমল উপস্থাপন করা হলো। আমলগুলো কবুল হবে যদি দুটি শর্ত পাওয়া যায়- এক. সহি নিয়ত ও ইখলাস। একনিষ্ঠতার সঙ্গে শুধু আল্লাহর জন্য আমল করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।’ [সূরা বাইয়্যেনাহ : ৫] দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে মহানবীর অনুসরণ। কোরআন বলছে- ‘এবং রাসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও।’ [সূরা হাশর : ৭]
আমলগুলো হলো-
১. রোজা রাখা। রোজা ইসলামের অন্যতম স্তম্ব। মহানবী (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [বুখারি শরিফ : ২০১৪] ২. নামাজ আদায়। রোজার সঙ্গে যথা সময়ে নামাজ জান্নাতের পথ সুগম করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন- সময়মতো নামাজ আদায় করা। [মুসলিম শরিফ : ২৬৩] ৩. বেশি বেশি কোরআন পড়া। ৪. কোরআন পড়া শেখানো। ৫. কোরআন মুখস্থ। ৬. কোরআনের তরজমা-তাফসির পাঠ। নবীজি বলেন, তোমরা কোরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর। [সুনানে তিরমিজী : ২৮৭৬]
নবীজি আরও বলেছেন- তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। [বুখারি শরিফ : ৪৭৩৯] ৭. বরকতময় সেহরি খাওয়া। ৮. ইফতারি গ্রহণ। ৯. তারাবির নামাজ পড়া। ১০. রমজান পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। ১১. কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা। ১২. তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলা। ১৩. অধিকহারে দান-সদকা করা। ১৪. উত্তম চরিত্রের অনুশীলন। ১৫. শেষ দশে এতেকাফ করা। ১৬. দাওয়াত-তাবলিগে সময় দেওয়া। ১৭. সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ পালন করা। ১৮. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা। ১৯. ইফতার করানো। ২০. অধিকহারে তাওবা ও ইস্তেগফার করা। ২১. আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া, জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন। ২২. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। ২৩. ফেতরা দেওয়া। ২৪. অসহায়দের সহায় দেওয়া। ২৫. অপচয় না করা। ২৬. আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্ক উন্নীত করা। ২৭. সব সময় মুখে, ঠোঁটে ও অন্তরে আল্লাহর জিকর করা। ২৮. মিসওয়াক করা। ২৯. কোরআন বোঝা এবং ৩০. কোরআন অনুযায়ী আমল করা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অধিকহারে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম