বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

টাকার সঙ্কট বাড়ার শঙ্কা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২
  • ১১৯ বার

তহবিল ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ঋণের প্রবৃদ্ধির চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, মার্চ প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি যেখানে পৌনে দশ শতাংশ সেখানে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। ঋণ ও আমানতের এ অসামঞ্জস্য প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থবাজারে টাকার সঙ্কট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিনই সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত ঋণ বাড়লে আমানত বাড়বে। কিন্তু এখানে ঋণ বাড়ছে, আমানত বাড়ছে না। এ অবস্থার প্রধান কারণ হলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ না করে তা দিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। নতুন ঋণ নিয়ে যখন পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হয় তখনই বিপত্তি হয়। ব্যাংকের আমানত প্রবাহ কমে যায়। আর আমানত প্রবাহ কমে গেলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায়।

আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ ও করোনার প্রভাবে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকে আর সঞ্চয় করতে পারছেন না। পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ায় তারা মানুষ বিকল্প পথে বিনিয়োগ করছেন। একই সাথে হাতে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। অর্থাৎ মানুষ ব্যাংকে আমানত না রেখে হাতে রেখে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত এক বছরে হাতে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকবহির্ভূত হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। সবমিলেই আমানত প্রবাহে চাপ বেড়ে গেছে। এতে ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো ও বিশেষ রেপোর আওতায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থের জোগান ব্যাংকগুলোকে। ২০ এপ্রিল ৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা জোগান দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল জোগান দেয়া হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

মার্চ প্রান্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে ৯টি ব্যাংকের আমানতপ্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বিপরীতে ১০টি ব্যাংকের ঋণ নির্ধারিত সীমার বাইরে চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমানত কমে যাওয়ার প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরই পড়বে। কারণ আমানত কমে যাওয়ায় গ্রাহক কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পাবেন না। এতে সুদহার বেড়ে যাবে। আর সুদহার বেড়ে গেলে বিনিয়োগ ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পণ্যের মূল্যের ওপর পড়বে। আর পণ্যমূল্য বাড়লে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী, এর ওপর টাকার সঙ্কটের কারণে মূল্যস্ফীতি বিপদসীমার ওপরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে তাই আমদানি ব্যয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

এ দিকে পণ্য আমদানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ নির্ধারিত দামের পণ্য বেশি মূল্য দেখিয়ে টাকা পাচার করলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট বেড়ে যায়, আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। এটা ঠেকাতেই পণ্য আমদানির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। অপর দিকে ব্যাংকগুলোর তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হচ্ছে তা যেন সঠিক কাজে ব্যয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। এতে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। এ কারণেই ব্যাংকগুলোর ঋণকার্যক্রমের ওপর তদারকি বাড়াতে হবে, অন্যথায় টাকার সঙ্কট তীব্র হলে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা কঠিন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com