বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন

সুদের বোঝা বাড়ছেই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২
  • ১০৮ বার

দিন দিন সুদের বোঝা বাড়ছেই। বাজেটে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। কারণ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

দেশি-বিদেশি এসব ঋণের সুদ পরিশোধে নতুন বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারকে ঋণ করে ব্যয় মেটাতে হয়। ফলে ঋণের সুদের হার দিন দিন বাড়ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হবে প্রবৃদ্ধির হার ঠিক রাখতে মূল্যস্ফীতি দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা। ভর্তুকিতে প্রচুর টাকা লাগবে। তবে ভর্তুকি আপাতত কমানোর সুযোগ নেই। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তাই খরচ বাড়বেই। এ জন্য আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। করব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, গত পাঁচ বছরে এটি দ্রুত বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সুদ পরিশোধ বাবদ খরচ বাড়ছে। অতীতের ঋণের কারণে খরচ বাড়ছে। ব্যবস্থাপনায় সংস্কার দরকার। বাজারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের বেশি সুদে ঋণ নেওয়ায় এমনটি হয়েছে। এখানে সংস্কার আনতে হবে। তা না হলে বোঝা বাড়বেই। সুদ নির্ধারণ পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে।

এদিকে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নের গতিধারা গত ৫ বছরে পরিমাণ ও কাঠামোগত দিক থেকে কিছুটা বদলেছে। ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ধীরে ধীরে ব্যয়বহুল ব্যাংকনির্ভরতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। সে জন্য মধ্যমেয়াদি ২০২২-২০২৫ ঋণের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে সরকার। বাস্তবতার নিরীক্ষে আগামী ৩ অর্থবছরে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৭ লাখ ৮০ হাজার ১১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এমন প্রাক্কলন করা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাড়ছে সুদ বাবদ খরচও।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা, পরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৮০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এমন প্রাক্কলন করা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাড়ছে সুদ বাবদ খরচও।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের মতে, সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ঋণ অনেক সাশ্রয়ী। কিন্তু সরকার সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয় বেশি সুদের অভ্যন্তরীণ উৎসকে। এতে আর্থিক খাতে চাপ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা ও পেনশনে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে বাধ্য হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দুই খাতে এ বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা পান। সেই সঙ্গে টেলিফোন, ভ্রমণ, গৃহকর্মী, ডমেস্টিক এইড, আপ্যায়ন, শ্রান্তি ও বিনোদনের মতো ভাতা রয়েছে। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিনা সুদে গাড়ি কেনার ঋণের সুযোগ রয়েছে। এসব গাড়ির সঙ্গে তেল খরচও দেওয়া হচ্ছে। বলাবাহুল্য সরকারি চাকরিজীবীদের আরাম-আয়েশের এ টাকা যায় জনগণের পকেট থেকে। কিন্তু তার বিপরীতে সরকারি সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী এক লাফে বেতন বেড়েছিল ১০১ শতাংশ। গত এক দশকে দুই দফায় বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করায় এ খাতে বরাদ্দ বেড়ে যায় অনেক। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ায় এখন নতুন প্রজন্ম এ খাতে ঝুঁকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেতনভাতায় খরচ হবে ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। আর পেনশন খাতে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com