বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল শুক্রবার টঙ্গী তুরাগ নদ তীরে ইজতেমা ময়দানে শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে শুরু হবে প্রাক প্রস্তুতি বয়ান। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লীরা আসতে শুরু করেছেন। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের ৩২ সদস্যের জামাত ইতিমধ্যে ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন শূরা সদস্য মাওলানা আবদুস সাত্তার। এ জামাতকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মুফতি ইজাহার আহমেদ।
এদিন ইজতেমার বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিতদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান (নজমের বয়ান) করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াজুর রহমান।
এছাড়া বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় পর্বেও প্রথম পর্বের মতো নিরাপত্তাব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা মুসল্লী মো. সামসুল আরেফিন জানান, প্রথম চিল্লা (৪০ দিন) বাংলাদেশ ও ২য় চিল্লা ভারতে শেষ করে ইজতেমায় এসেছি। আখেরি মোনাজাতের পর আবার তৃতীয় চিল্লায় দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে যাব। আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে পারলে জিন্দেগি ও আখেরাত সুন্দর হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিব্ল্লুাহ জানান, ময়দানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসা সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠ প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার মুসল্লীদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ১৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ২য় পর্বেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন খাবার পানি ও ওজু-গোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। ৮ হাজারের বেশি মুসল্লী একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এ পর্বেও সিটি কর্পোরেশনের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
খিত্তাওয়ারি মুসল্লীদের অবস্থান : মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (৩-৪), টঙ্গী (৫), উত্তরা (৬ ও ৭), কাকরাইল (৮-১৪), মোহাম্মদপুর (১৫), যাত্রাবাড়ী (১৬), ডেমড়া (১৭), কেরানীগঞ্জ (১৮-১৯), ধামরাই (২০), নবাবগঞ্জ/দোহার (২১), মানিকগঞ্জ (২২), টাঙ্গাইল (২৩), নারায়ণগঞ্জ (২৪), নেত্রকোনা (২৫), জামালপুর (২৬), ময়মনসিংহ (২৭), কিশোরগঞ্জ (২৮), শেরপুর (২৯), গাজীপুর (৩০), বগুড়া (৩১), নরসিংদী (৩২), নওগাঁ (৩৩), রাজশাহী (৩৪), নাটোর (৩৫), সিলেট (৩৮), সুনামগঞ্জ (৩৯), হবিগঞ্জ (৪০), মৌলভীবাজার (৪১), চাঁপাইনবাবঞ্জ (৪২), জয়পুরহাট (৪৩), মুন্সীগঞ্জ (৪৪), মাদারীপুর (৪৫), শরীয়তপুর (৪৬), রাজবাড়ী (৪৭), ফরিদপুর (৪৮), গোপালগঞ্জ (৪৯), পঞ্চগড় (৫০), নীলফামারী (৫১), লালমনিরহাট (৫২), গাইবান্ধা (৫৩), কুড়িগ্রাম (৫৪), ঠাকুরগাঁও (৫৫), রংপুর (৫৬), দিনাজপুর (৫৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৫৮), চাঁদপুর (৫৯), খাগড়াছড়ি (৬০), ফেনী (৬১), রাঙ্গামাটি (৬২), বান্দরবান (৬৩), লক্ষ্মীপুর (৬৪), নোয়াখালী (৬৫), কুমিল্লা (৬৬), কক্সবাজার (৬৭), চট্টগ্রাম (৬৮), চুয়াডাঙ্গা (৬৯), কুষ্টিয়া (৭০), খুলনা (৭১), যশোর (৭২), ঝালকাঠি (৭৩), পটুয়াখালী (৭৪), বরিশাল (৭৫), ভোলা (৭৬), বরগুনা (৭৭) ও পিরোজপুর (৭৮)। তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত খিত্তাগুলো হল- পাবনা (৩৬), সিরাজগঞ্জ (৩৭), মাগুড়া (৭৯), সাতক্ষীরা (৮০), নড়াইল (৮১), ঝিনাইদহ (৮২), বাগেরহাট (৮৩) ও মেহেরপুর (৮৪)। এ ছাড়াও ৮৫ ও ৮৬ নম্বর খিত্তা ও তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে ৮৭নং খিত্তা সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে।
গত রোববার প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। মোনাজাত শেষে মুসল্লীরা মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন। গত মঙ্গলবারই মাঠের দায়িত্ব বুঝে নেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। সূত্র : বাসস।