বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

১০ হাজার কোটি টাকা কমছে বিক্রির লক্ষ্য

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২
  • ৯০ বার

সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে অর্থ বিভাগ। আগামী তিন বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা বিক্রি কাটছাঁট করা হবে। এ খাতে সুদহারও হ্রাস করা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমাতে এ সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মধ্যবিত্তরা। কারণ নিরাপদ বিনিয়োগ ও মুনাফার জন্য অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কবে নাগাদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেটি অনিশ্চিত। অব্যাহত আছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বিনিয়োগের উৎস ব্যাংক থাকলেও সেখানে আমানতের সুদহার কম। অনিরাপদ হয়ে উঠছে অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারও। এর মধ্যে মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র খাত। বৃহত্তম একটি জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে এখানে বিনিয়োগ করে। সামাজিক সুরক্ষার আওতা হিসাবে এটি কাজ করছে। কিন্তু এখানে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনলে বড় একটি শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েই চলছে। ব্যাংকগুলো নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছে খেলাপি ঋণই এখন তাদের গলার কাঁটা। এ ঋণের কারণে ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে এই খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রের যেভাবে ব্যয় বাড়াচ্ছে, সেটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সাধারণ মানুষকে দেওয়া সুদের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ের হার খুব বেশি নয়। চলতি অর্থবছরে যেখানে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ দিতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অপরদিকে গত জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ-এই তিন মাসে রাষ্ট্রের খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপিরা হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে খুব অল্প সময়ে। এসব অর্থ জনগণের।

সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা কমানো হলে বিক্রি কমবে। এতে মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য সমস্যা হবে। কারণ মধ্যবিত্ত মানুষগুলো এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে অনেকে সংসার পরিচালনা করছেন।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মোট বাজেটের ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পরিশোধে যাচ্ছে। এই সুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র সুদ পরিশোধে। আবার সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্তদের আয়ের একটি উৎস। তাদের আয়ের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এখন সুদ কমানোর যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটি আমলাতান্ত্রিক সুদ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ভলিউম না কমিয়ে সুদহার বাজারের অন্যান্য সঞ্চয়ের সঙ্গে লিঙ্ক করে দিতে পারে। যেটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করেছে। সুদহার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুধু সঞ্চয়পত্র ভলিউম কমালে এর ব্যত্যয় ঘটবে।

যাদের হাতে পুরোনো সঞ্চয়পত্র থাকবে, তারা উচ্চ সুদ পাবে, নতুনরা কিনতেও পারবে না। অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মতে, আগামী ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত এই তিন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া ৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা কমিয়ে আনবে সরকার। ঋণ গ্রহণ কমানোর অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমবে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ (সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি) নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমিয়ে ২৭ হাজার ৫শ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

সুদহার প্রসঙ্গে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের (ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত) গড় অন্তর্নিহিত সুদহার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রাক্কলন করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদে সার্বিক সুদহার ৬ শতাংশের নিচে আনা হবে। এতে সঞ্চয়পত্র খাতে বড় ধরনের সুদহার কমানো হবে।

সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পর সুদ পরিশোধ ব্যয় হবে ৪২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। তবে এ সুদ পরিশোধের মধ্যে আগের সুদ অন্তর্ভুক্ত থাকছে। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধ ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

সাধারণত প্রতিবছর সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকিং খাত এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এ বছরও সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্তদের কাছে এ খাতে বিনিয়োগ অনেকটা নিরাপদ হয়ে উঠছে। অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মতে, ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র উভয় খাতেই সরকারকে ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এখন সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি। ফলে ভবিষ্যতে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হবে। এতে সরকারের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমে আসবে। এমনিতে কৃচ্ছ সাধন করা হচ্ছে। নানা দিক থেকে ব্যয় কমানো হচ্ছে। ওই কর্মসূচির আওতায় এখন থেকেও ব্যয় কমানো হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com