পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল রেশনিং করা হচ্ছে, এমন খবরের মধ্যেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, ডিজেল-অকটেনসহ পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে বাংলাদেশে।
বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি শিডিউল করা আছে।
মঙ্গলবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় ঢাকার একটি পেট্রোল পাম্পে একটি নোটিশ টানানো হয়েছে, যাতে লেখা- ‘জ্বালানি ব্যবহার সাশ্রয়ের নিমিত্তে মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকার অকটেন এবং গাড়িতে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকার অকটেন/ডিজেল নেয়া যাবে।’
ঢাকার জনপ্রিয় ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশনে এই নোটিশ টানানো হয় বলে খবরে উল্লেখ করেছে একটি পত্রিকা।
ওই খবরে আরো বলা হয়, ফিলিং স্টেশনগুলোকে চাহিদার তুলনায় কম পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল দিচ্ছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
কিন্তু বুধবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোল পাম্পগুলোয় গ্রাহকদের কম তেল দেয়ার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
‘বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল রয়েছে এবং আমদানির পথে রয়েছে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। আর কোনো তেল আমদানি না করলেও দেশে ৩২ দিনের ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল রয়েছে,’ উল্লেখ করেন তিনি।
এর বাইরে ৪৪ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের আমদানি, মজুদ করা, সরবরাহ করার প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে। আগামী ছয় মাস এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলবে। যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে, তা নিয়ে আশঙ্কা করার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।
তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ৩১ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন, পেট্রোল ২১ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন এবং ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে।
‘যদি ধরে নেই, বিপিসি আর তেল আমদানি করলো না, তাহলে ডিজেল দিয়ে চলবে ৩২ দিন, অকটেন দিয়ে ৯ দিন, পেট্রোল দিয়ে ১৫ দিন, জেট ফুয়েল দিয়ে ৪৪ দিন আর ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলবে ৪৪ দিন। কিন্তু বিপিসি কি আমদানি আজ বন্ধ করে দেবে? এটা কখনোই আমদানি বন্ধ করবে না। আগামী বিপিসির আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা কনফার্ম করা আছে,’ বলেন এ বি এম আজাদ।
আগামী এক থেকে দুই দিনের ভেতর আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আসবে বলে তিনি জানান। সেইসাথে দুই দিনের ভেতর ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলের একটি চালান আসছে বলে তিনি জানান।
দেশে জ্বালানি নিয়ে সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে জুলাই মাস থেকে কৃচ্ছতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সরকার।
সঙ্কটের জন্য বিশ্ববাজারে তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির চড়া দামকে দায়ী করছে সরকার।
ডিজেল বাঁচাতে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে লোডশেডিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে বলে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত একটি পেট্রোল পাম্পে সীমিত আকারে তেল বিক্রির নোটিশ দেয়া হয়।
তবে বিপিসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেননি।
যারা এরকম নোটিশ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সঙ্কট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সঙ্কট আরো বাড়বে।
সঙ্কটের মুখে সরকার এখন ডিজেলের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে।
কিন্তু অকটেন-পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের তুলনায় ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়, যা অন্যান্য তেলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মজুদ পরিস্থিতি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরলো বিপিসি।
সূত্র : বিবিসি