বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ। প্রতি বছর বিশ্বের ১৬০টি দেশের সাথে আমরাও বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করে আসছি।
চার্লস গোর নামে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ১৯৯৫ সালে হেপাটাইটিস ‘সি’তে আক্রান্ত হন, যা পরে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তার লিভার সিরোসিস রোগ শুরু হয়। ২০০০ সালে আরো তিনজন এ রকম রোগীকে সাথে নিয়ে তিনি ‘হেপাটাইটিস সি ট্রাস্ট’ গঠন করেন। তারপর ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীদের নিয়ে ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর প্রথম ‘আন্তর্জাতিক হেপাটাইটিস সি সচেতনতা দিবস’ পালন শুরু করেন। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রোগী গ্রুপগুলো বিচ্ছিন্নভাবে হেপাটাইটিস দিবস পালন করে আসছিল। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’ বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির স্বীকৃতি দেয়।
নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস, রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থা উন্নতকরণ ও প্রতিষেধক টিকাও আবিষ্কার করেন। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অনবদ্য অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২৮ জুলাই তার জন্মদিনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।
বিশ্বব্যাপী রোগী কল্যাণ সমিতি ও জনমতের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১০ সালের ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি’তে একটি নীতি গ্রহণ করা হয়, যেখানে হেপাটাইটিস ‘সি’র সাথে হেপাটাইটিস ‘বি’কেও সংযুক্ত করা হয়।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’কে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সাল নাগাদ তা নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের প্রায় ৬৬ লাখ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় লাখ ৬০ হাজারে নামিয়ে আনতে হবে। ওই লক্ষ্য পূরণে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশের অজানা রোগীদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক মবিন খানের নেতৃত্বে ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশেও হেপাটাইটিস সচেতনতা দিবস পালন শুরু করে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি ২০১৬ সালে একটি অতি উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব গ্রহণ করে। সে প্রস্তাবে ২০২০ সালের মধ্যে সব সদস্য দেশকে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে হেপাটাইটিস নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রতি বছর হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীব্যাপী ৩৩ কোটির বেশি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত ৯০ শতাংশ রোগী ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী তাদের রোগ সম্পর্কে জানে না। শিশুদের ক্ষেত্রে ‘বি’ ভাইরাসের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। কারণ, আক্রান্ত শিশুদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করে। প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করে। অথচ মাত্র ৪৩ শতাংশ শিশু জন্মপরবর্তী ‘বি’ ভাইরাস ভ্যাকসিন পাচ্ছে।
পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৩ লাখ রোগী একই সাথে এইচআইভি ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। ২৭ লাখ রোগী একই সাথে এইচআইভি ও ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। ৭ শতাংশ টিবি রোগীর সাথে ‘সি’ ভাইরাস আছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে শিশুদের ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি বেশি। জীবাণুমুক্ত না করে অস্ত্রোপচারে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। সারা বিশ্বে মাত্র ১ শতাংশের কম ‘বি’ ভাইরাসের রোগী ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ ‘সি’ ভাইরাসের রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা গেছে। সুতরাং হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে প্রতিরোধ করা সর্বোচ্চ উপায়।
হেপাটাইটিস ‘বি’র ভয়ঙ্কর রূপ বাংলাদেশে
হেপাটাইটিস ভাইরাসে বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যায়। পৃথিবীবাসীর এক-তৃতীয়াংশ লোকের সেরোলজিক্যাল টেস্টে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের অতীত ও বর্তমান ইনফেকশনের আলামত প্রমাণিত। ৩৫-৪০ কোটি লোক বর্তমানে এইচবিএসএজির ভাইরাসের ক্রনিক বাহক (ডেভিডসন্স অ্যান্ড প্রাক্টিস অব মেডিসিন)।
আমাদের দেশে এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে চার লাখ শিশু হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস ভাইরাস নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি। ডায়ালাইসিস চলাকালীন হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশে দিন দিন বেড়ে চলছে। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। হেপাটাইটিস একটি নীরব ঘাতক। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানে না যে, তার শরীরে এই ভাইরাস আছে।
বর্তমানে কর্মক্ষম অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী পুরুষ ও নারীর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এ ছাড়া ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রজননে সক্ষম নারীদের মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্তের হার ছিল প্রায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ৬০ শতাংশ ও লিভার ক্যান্সারের ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস দায়ী। লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হলো হেপাটাইটিস ‘সি’। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ ও লিভার ক্যান্সারের জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস।
গর্ভবতী মায়েরা যদি হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে মা এবং গর্ভের সন্তানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মায়ের অ্যাকিউট ইনফেকশন হলে জন্ডিসে মা ও গর্ভের শিশুও মারা যেতে পারে। গর্ভজটিলতায় সন্তান প্রসবের সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে। লিভারের অবস্থা ভালো না থাকায় কিছু ওষুধ দেয়া যায় না। চিকিৎসাবিহীন থাকলে একপর্যায়ে মা লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের দিকে যেতে পারে।
২০১৮ সালে অধ্যাপক মো: শাহিনুল আলমের এক গবেষণায় দেখা যায়, শুধু হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫ লাখ লোকের মধ্যে নারীর (২৮ লাখ) চেয়ে পুরুষ (৫৭ লাখ) এবং গ্রাম থেকে শহরের সংখা বেশি। এর মধ্যে চার লাখ শিশুও আছে।
হেপাটাইটিস ‘বি’
হেপাটাইটিস ‘বি’ সারফেস এন্টিজেনের বিরুদ্ধে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তার নাম হেপাটাইটিস ‘বি’ সারফেস এন্টিবডি বা এন্টি-এইচবিএস। যদি রক্তের পরীক্ষায় কোনো রোগীর এন্টি-এইচবিএস ও হেপাটাইটিস ‘বি’ কোর এন্টিবডি বা এন্টি-এইচবিসি দুটোই পাওয়া যায়, এর অর্থ হলো- রোগী ইতঃপূর্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আর যদি পরীক্ষায় এন্টি-এইচবিএস পজিটিভ ও এন্টি-এইচবিসি নিগেটিভ পাওয়া যায় তার অর্থ হলো- ব্যক্তির হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকা নেয়া আছে এবং যথেষ্ট প্রটেকশন আছে। অবশ্য এ উভয় অবস্থাতেই ব্যক্তি প্রটেক্টেড ও কারো টিকা নেয়ার প্রয়োজন নেই।
রক্তে হেপাটাইটিস ‘বি’ ‘ই’ এন্টিজেনের উপস্থিতি কি নির্দেশ করে?
এটি থাকা মানে লিভারে ভাইরাস প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে এবং অ্যাকিউট ইনফেকশন। রক্তে এটি না থাকা মানে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি কম হচ্ছে কিংবা হচ্ছেই না। তবে ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ইনফেকশনে এইচবিইএজি নিগেটিভ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ডিএনএ টেস্ট পজিটিভ হয়।
হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস
এটি একটি আরএনএ ভাইরাস। এটি দিয়ে সাধারণত অ্যাকিউট ইনফেকশন হয় না। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে তেমন কোনো উপসর্গও থাকে না। বেশির ভাগ রোগীর রোগ ধরা পড়ে রুটিন রক্ত পরীক্ষা করে কিংবা যখন ক্রনিক লিভার ডিজিজ হয়ে যায়। যদি হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস ইনফেক্টেড রোগীকে চিকিৎসা করা না হয় তা হলে ২০-৪০ বছরের মাথায় ক্রনিক রোগী সিরোসিস ও ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত হেপাটাইটিস ‘সি’র কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ কিভাবে ছড়ায়?
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ছোঁয়াচে রোগ নয়। অছোঁয়াচে ধরনের হেপাটাইটিস সাধারণত ব্লেড, রেজর, সিরিঞ্জ, সুঁই, অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার, অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, দাঁতের চিকিৎসা ও অপারেশন ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া যারা মাদকাসক্ত একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইনজেকশন মাদক গ্রহণ ও ড্রাগ ব্যবহার করে, অনিরাপদ আকুপাংচার, টুথব্রাশ ও শেভিং উপকরণ এবং মা থেকে নবজাতকের শরীরে অছোঁয়াচে হেপাটাইটিস ছড়াতে পারে।
অস্ত্রোপচার, ডায়ালাইসিস, নিডল শেয়ারিং, রক্ত বা রক্তজাত দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ অথবা হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
রক্ত, ঘাম, লালা, চোখের পানি, মায়ের বুকের দুধ, ব্লাড প্রডাক্ট ও বীর্যের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ছড়ায়।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের পরিণতি
হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাস কোনো সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশের পর এটির ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পরিণতি হতে পারে- অনেকের মধ্যে কোনো উপসর্গ সৃষ্টি ছাড়াই এটি আপনাআপনি দেহ থেকে নির্মূল হয়ে যায়; কারো মধ্যে এটি স্বল্পমেয়াদের লিভার প্রদাহ বা অ্যাকিউট হেপাটাইটিস সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীকালে হয় সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়, অথবা দীর্ঘমেয়াদে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সারা জীবন দেহে অবস্থান করে। কেউ কেউ ভাইরাসটি শরীরে বহন করেও সারা জীবন সুস্থ থাকে, আবার অনেকে ক্রনিক হেপাটাইটিসে ভোগে এবং সেখান থেকে সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের পরিণতি নির্ভর করে একজন মানুষ কোন বয়সে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। শিশু বয়সে যারা হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাদের ৯৫ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদে ইনফেকশন হয়, ৫ শতাংশ ভালো হতে পারে। প্রাপ্ত বয়সে আক্রান্ত হলে এর ঠিক উল্টো হয়। অর্থাৎ তাদের ৯৫ শতাংশ ভালো হয়। মাত্র ৫ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হয়। যাদের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হয়, তাদের ১৫ থেকে ৪০ শতাংশের লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে লিভার প্রদাহ হয়। এদের ১৫ শতাংশ ভালো হয়ে যায়, বাকি ৮৫ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদি লিভার প্রদাহে আক্রান্ত হয়। যারা দীর্ঘমেয়াদে লিভার প্রদাহে আক্রান্ত হয়, তাদের ২০ শতাংশ রোগী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়। ১ থেকে ৪ শতাংশ প্রতি বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
হেপাটাইটিস নির্মূলে করণীয়
এর প্রথম ধাপ হলো- হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম সফল করা। এটি প্রতিরোধের জন্য ২০০৩ সালে ১২ এপ্রিল হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিশুর দেড় মাস, আড়াই মাস ও সাড়ে তিন মাস বয়সে টিকা দেয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচিকে নিশ্ছিদ্র করার জন্য শিশু জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা দেয়ার সুপারিশ থাকলেও সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস ‘বি’ ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও বিশেষায়িত পরীক্ষাগুলো সহজলভ্য করতে হবে। হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয় বলে এর ব্যয়ভার বহনে সহযোগিতা করতে হবে। আশার কথা, হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের আরোগ্য লাভকারী ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। সব রকম অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সহজলভ্য করা জরুরি। সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা উচিত। ব্লেড, রেজর, সিরিঞ্জ, ইনজেকশন, সুঁই- এই জিনিসগুলো একবার ব্যবহার করতে হবে। তা হলে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে রক্তের পরীক্ষাগুলো যেকোনো ভালো ল্যাবরেটরিতে সহজেই করানো যায়। প্রায় সব রোগীর পেটের আলট্রাসনোগ্রাম ও কোনো কোনো রোগীর লিভার বায়োপসিও লাগে। লিভারের প্রদাহ শুরু হলে বা রক্তে ভাইরাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। যারা নেগেটিভ, তাদের টিকা দিতে হবে। যারা পজিটিভ, তাদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ও তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সহজলভ্য করতে পারলে সাধারণ লোকজন এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা