সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

কীভাবে কাটাবেন মুহাররম মাস?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২
  • ১০৭ বার

মুহাররম মাস দিয়ে আরবি বছর শুরু হয় এবং জিলহজে গিয়ে বছর পূর্ণ হয়। মুমিনের জন্য প্রত্যেক দিন সমান। তার চিন্তা থাকবে, আমার আজকের দিন গতকাল থেকে কীভাবে আরও বেশি ফলপ্রসূ হয়, সর্বদা সে ফিকির করা।

মুমিন প্রতিদিনই নিজেকে নিয়ে সওদা করে; হয়তো সে সফল হয় অথবা ব্যর্থ। এ জন্য মুমিনের নববর্ষ উদযাপন বলতে কিছু নেই। তার চিন্তা থাকবে, প্রত্যেক দিনের সওদায় সে কীভাবে সফল হবে।

মুহাররাম সম্মানিত চার মাসের একটি। আল্লাহ বলেন, আসমান-জমিন সৃষ্টিলগ্ন থেকে আল্লাহর কাছে মাস হলো ১২টি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।  (সুরা তাওবা: ৩৬)

বিদায় হজে রাসুল (সা.) সম্মানিত যে চার মাসের নাম উল্লেখ করেছেন। আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, আসমান-জমিন সৃষ্টিলগ্ন থেকে সময় তার মতো করে চলছে। বছর ১২ মাসে, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। তিনটি ধারাবাহিক—জুলকাদা, জিলহজ ও মুহাররাম। চতুর্থটি হলো রজব।  (সহিহ বুখারি: ৩১৯৭)

ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম ছিল। কারণ, সম্মানিত মাসে রক্তপাত খারাপ দেখায়। যদিও পরে এ হুকুম রহিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, মাস চারটি সম্মানিত বটে, তবে সে সময়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে সমস্যা নেই।

অনেক আলিমের মতে, সম্মানিত চার মাসের মধ্যে মুহাররাম সর্বশ্রেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে আবু জার রা. থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করি, ‘আল্লাহর রাসুল, কোন বাহন ভালো? রাতের কোন অংশ ও কোন মাস সর্বোত্তম?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে বাহনের দাম বেশি, সেটি বেশি কল্যাণকর; আর রাতের সর্বোত্তম অংশ হলো মধ্যভাগ; সর্বোত্তম মাস আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মুহাররাম বলে ডাকো।’ (আস-সুনানুল কুবরা: ৪২১৬, নাসায়ি)

এখানে অনেকের সন্দেহ হতে পারে, মুহাররাম কি রমজানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ? কারণ, এ হাদিসে রাসুল (সা.) ব্যাপকভাবে মুহাররামকে অন্যান্য মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। না, বিষয়টি এমন নয়; বরং এখানে শ্রেষ্ঠ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, রমজানের পরে শ্রেষ্ঠ মাস হলো মুহাররাম।

বিষয়টি আল্লামা ইবনু রজব হাম্বলি (রহ.) হাসান বসরির (রহ.) কথা দ্বারা স্পষ্ট করেছেন।  তিনি বলেন, ‘কোন মাস উত্তম এ বিষয়ে আলিমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। হাসান বসরিসহ কিছু আলিমের মতে সর্বোত্তম মাস হলো মুহাররাম। পরবর্তী যুগের এক দল এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ওয়াহাব ইবনু জারির কুররা ইবনু খালিদের সূত্রে হাসান বসরি থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বছর শুরু করেন সম্মানিত মাস দ্বারা; বছর শেষ করেন সম্মানিত মাস দ্বারা। রমজানের পর মুহাররামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো মাস নেই। (লাতায়িফুল মাআরিফ: ৪৭)

মূলত রমজানের পর কোন মাস শ্রেষ্ঠ—মতবিরোধ হলো সে বিষয়ে। অনেকের মতে রমজানের পর শ্রেষ্ঠ মাস হলো মুহাররাম। রাসুলের এ হাদিস দ্বারা সে মত শক্তিশালী হয়।

মোটকথা, মুসলমানদের বছর শুরু হয় একটি সম্মানিত মাস দ্বারা, যে মাসের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। সে সম্পর্কে এখন আলোকপাত করব:

মুহাররামের রোজা

মুহাররামের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন; রাসুল (সা.) বলেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা মুহাররামের রোজা; আর ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত।  (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)

এই হাদিস আরেক সনদে বর্ণিত হয়েছে। সে হাদিসের মতন এ রকম, রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ফরজ সালাতের পর কোন সালাত সর্বোত্তম এবং রমজানের পর কোন রোজা সর্বোত্তম?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের মধ্যভাগের সালাত এবং রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা মুহাররামের রোজা।’

হজরত আলিকে (রা.) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, ‘রমজানের পরে আমি কোন মাসে রোজা রাখব?’ তিনি বলেন, আমি রাসুলের কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করে, “আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর কোন মাসে আপনি আমাকে রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন?” রাসুল সা. বলেন, ‘যদি তুমি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মুহাররামে মাসে রোজা রাখো। কারণ, মুহাররাম আল্লাহর মাস।” (মুসনাদু আহমাদ: ৮০২৬)

ইমাম তিরমিজি (রহ.) হাদিসটি বর্ণনার পর বলেন, ‘হাদিসটি হাসান ও গরিব।’

হাদিসটিকে যদিও অনেক মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন; কিন্তু এতে সমস্যা নেই। কারণ, হাদিসের বিষয়বস্তু সহিহ মুসলিমের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ ছাড়া বিষয়টি অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের মধ্যভাগের সালাত। আর রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাসের রোজা; যে মাসকে তোমরা মুহাররাম বলে থাকো। (আল-মুজামুল আওসাত: ৬৪১৭, তাবরানি)

এই হাদিসের ব্যাপারে ইমাম হায়সামি (রহ.) বলেন, ‘হাদিসটি ইমাম তাবরানি বর্ণনা করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ গ্রহণযোগ্য।’

ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আরাফার দিনে রোজা রাখল, সেটা তার দু-বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে; আর যে ব্যক্তি মুহাররামের কোনো একদিন রোজা রাখল,  সে একদিনের রোজা পুরো ৩০ দিনের কাফফারা হয়ে যাবে। (আল-মুজামুস সাগর : ৯৬৩, তাবরানি)

হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম হায়সামি বলেন, ‘হাদিসটি ইমাম তাবরানি (রহ.) আল-মুজামুস সাগিরে বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি হায়সাম ইবনু হাবিব বর্ণনা করেছেন সাল্লাম থেকে; আর সাল্লাম হচ্ছেন জয়িফ। এ ছাড়া হায়সাম ইবনু হাবিবের ব্যাপারে ইমাম জাহাবি ব্যতীত অন্য কাউকে কথা বলতে দেখিনি। ইমাম জাহাবি তাকে একটি হাদিসের কারণে অভিযুক্ত করেছেন। ইমাম ইবনু হিব্বান তাকে সিকাহ বলেছেন।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৫১৪৪)

ইমাম মুনজিরি হাদিসটি সম্পর্কে বলেন, ‘হাদিসটি ইমাম তাবরানি আল-মুজামুস সাগিরে বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি গরিব। তবে সনদে কোনো সমস্যা নেই। হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হায়সাম ইবনু হাবিবকে ইবনু হিব্বান সিকাহ বলেছেন।’ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ১৫২৯, মুনজিরি।

মুহাররামের নফল রোজার আলাদা ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল (সা.) এ বিষয়ে স্পষ্ট বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা মুহাররামের রোজা।’ আল্লাহ তাআলা মুহাররামে আমাদের বেশি বেশি নফল রোজা রাখার তাওফিক দিন।

লেখক: গবেষক আলেম ও জনপ্রিয় বক্তা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com