বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণ এবং বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা উন্নয়ন প্রকল্পে বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইউরোপ অথবা জাপান থেকে ওয়েস্টবিন আনার পরিকল্পনা ও প্রস্তাব করেছিল। প্রতিটি ওয়েস্টবিনের দাম ধরা হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু জাপান থেকে এ দামে ৩৬০টি ওয়েস্টবিন আমদানির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কাছে ধোপে টিকেনি। কমিশন এত টাকা ব্যয় করে বিদেশ থেকে আমদানির পরিবর্তে দেশে প্রস্তুতকৃত ওয়েস্টবিন ব্যবহার করতে বলেছে। এ ছাড়া প্রতিটি এসটিএস নির্মাণখরচ ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা, যা অনেক বেশি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দক্ষিণ সিটিতে মোট জনসংখ্যা ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ জন। সিটির পাঁচটি জোনে মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। নতুন করে অন্তর্ভুক্তি ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তার ড্রেন পরিষ্কার করার মতো জনবল এই করপোরেশনে নেই। তা ছাড়া বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাক বা ভেহিকেল নেই। ট্রাক বা বর্জ্যবাহী গাড়ি প্রয়োজনীয় সংখ্যক না থাকায় বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন ট্রাক বা ভেহিকেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য ৬১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়, যা চার বছরে বাস্তবায়ন করা হবে।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, বহু বছর ধরে প্রতিদিনের উৎপাদিত শত শত টন বর্জ্য বিভিন্ন ডোবা-নালায়, রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। ফলে এলাকার মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে ভূ-উপস্থিত পানি দূষিত হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ওয়েস্টবিন আমদানি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ ছাড়া ১৮টি ওয়ার্ডে একটি করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বা এসটিএস নির্মাণের কাজ চলমান আছে।
প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পে ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৬০টি ওয়েস্টবিন কেনার যে প্রস্তাব করা হয় তাতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটির দর হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা অনেক বেশি বলে কমিশন আপত্তি জানিয়েছে। অন্য দিকে, এসটিএস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। প্রতিটি এসটিএসের আকার হলো ৫০ ফুট গুণ ৩০ ফুট। ফলে প্রতিটির দাম পড়বে ৭ কোটি টাকা। এটাও যুক্তিযুক্ত নয় বলে কমিশন মনে করছে। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পদে ১ হাজার ২১৪ জন জনবলের বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু এদের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো সুপারিশ ডিপিপিতে দেয়া হয়নি।
সিটি করপোরেশন বলছে, প্রস্তাবিত ওয়েস্টবিনগুলো ফাইবার গ্লাস বা এসএস দিয়ে তৈরি হবে, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। তাই সেভাবে এ খাতের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লাহ হারুন জানান, এটা বিদেশ থেকে বিশেষ করে জাপান অথবা থেকে ইউরোপ থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। এগুলো স্টিলের তৈরি আনার কথা ছিল। ওগুলো উন্নত মানের। আগে কখনো আনা হয়নি। এটি প্রাথমিক পরিকল্পনাটা ছিল। পিইসি সভা বিষয়টি অনুমোদন করেনি। তারা দেশেই তৈরি করতে বলেছে। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে না।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলেছে, ওয়েস্টবিনের জন্য এত টাকা ব্যয় করা যৌক্তিক হবে না। এ বিষয়ে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওয়েস্টবিন সংগ্রহ করা সম্ভব। ব্যয়ও কম হবে। তাই দেশেই এসব তৈরি করতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন নেই।
এসটিএসের ব্যাপারে কমিশন বলছে, ৩৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে এসটিএস নির্মাণের জন্য। প্রতিটির জন্য খরচ হবে ৭ কোটি টাকা। এ খরচ যুক্তিযুক্ত নয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ দর পুনঃযাচাই করে প্রস্তাবিত ব্যয়কে যুক্তিযুক্ত হারে কমিয়ে আনবে। যথাযথ জমি পাওয়ার পরই এসটিএস নির্মাণ করতে হবে। তাই প্রস্তাবনাকে সংশোধন করতে বলা হয়েছে।