সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন

মহররম মাসের সুন্নত আমল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০২২
  • ১০৯ বার

মহররম মাসের সুন্নত আমল সম্পর্কে সহিহ হাদিসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে তা হলো, আশুরার রোজা পালন করা। রাসুল (সা.) ১০ মহররমে রোজা পালন করেছেন।

ইহুদি ও নাসারারা শুধুমাত্র ১০ মহররমকে সম্মান করতো এবং রোজা রাখতো। তাই রাসুল (সা.) তাদের বিরোধিতা করার জন্য ওই দিনসহ তার পূর্বের অথবা পরের দিন মিলিয়ে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

অতএব, সুন্নত হলো ৯ ও ১০ অথবা ১০ও ১১ মহররমে রোজা পালন করা। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজি (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখতেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম রাসুলকে (সা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইহুদি ও নাসারারা এই দিনটিকে (১০ মুহররম) সম্মান করে।

তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ মহররমসহ রোজা রাখবো। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মহররম আসার আগেই তার মৃত্যু হয়ে যায়।

অন্য হাদিসে এসেছে, ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার সঙ্গে তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন রোজা পালন করো।

আশুরার রোজার ফজিলত:

ফজিলতের দিক থেকে রমজানের রোজার পরই আশুরার রোজার অবস্থান। এটি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে কারীম (সা.) বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা (অর্থাৎ আশুরার রোজা) এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নফল নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ)।

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু ক্বাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, আমি আশা করি আশুরা বা ১০ মহররমের রোজা আল্লাহর নিকট বান্দার বিগত এক বছরের (সগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে।

আশুরার রোজা রাখার উদ্দেশ্য:

১০ মহররমে অত্যাচারী পাপিষ্ঠ ফেরাউন ও তার ক্বওম আল্লাহর প্রিয় নবী মুসাকে (আ.) হত্যার ঘৃণিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে ফেরাউনের সাগরডুবি হয় এবং মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায় বণী ইসরাঈল আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমতে অত্যাচারী ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তিলাভ করে। তার শুকরিয়া হিসেবে মুসা (আ.) এ দিন নফল রোজা রাখেন।

সেদিনের ঘটনার কথা স্মরণ করে বা শুকরিয়া আদায় স্বরূপ নবীজি (সা.) এ দিনে নফল রোজা পালন করেছেন এবং তার উম্মতকে পালন করতে বলেছেন। ইহুদিরা কেবল ১০ তারিখে রোজা রাখতো। তাই তাদের বিরোধিতার লক্ষ্যে ১০ তারিখের আগের অথবা পরের দিনকে যোগ করার কথা বলা হয়েছে।

হাদিস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মদীনায় হিজরত করে ইহুদিদেরকে আশুরার রোজা রাখতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বললো, এটি একটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ.) ও তার ক্বওমকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার লোকদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া হিসাবে মূসা (আ.) এ দিন রোজা পালন করেন। তাই আমরাও এ দিন রোজা পালন করি।

তখন রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরাই মূসার আ. (আদর্শের) বেশী হকদার ও অধিক দাবীদার। অতঃপর তিনি রোজা রাখেন ও সবাইকে রাখতে বলেন।

উল্লেখ্য যে, আশুরায় মহররম উপলক্ষে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মুহররম এ দু’টি রোজা পালন করা সুন্নাত। এছাড়া অন্য কোনো ইবাদত সুন্নত নয়।

সম্মানিত পাঠক! পরিপূর্ণভাবে ইসলামের উপর টিকে থাকতে হলে ফিরে যেতে হবে একমাত্র কুরআন-সুন্নাহ ও আকাবীর আসলাফের দিকে। মুসলিম জাতি আজ কুরআন-সুন্নাহ থেকে ছিটকে পড়েছে। ফলে কু-সংস্কারের কালো মেঘে আচ্ছাদিত হয়েছে ইসলামী শরিয়তের স্বচ্ছ আকাশ। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় দীনি শিক্ষা অপরিহার্য।

তাই আসুন! কারবালার ঘটনা সম্পর্কে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হতে দূরে থাকি। আশুরা উপলক্ষ্যে প্রচলিত কু-সংস্কার ও রুসম-রেওয়াজ পরিহার করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

লেখক: তরুণ আলেম ও জনপ্রিয় ওয়ায়েজ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com