মুন্সীগঞ্জে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় গৃহবধূ আঁখি আক্তার লাবণীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগে শ্বশুর ও দেবরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার কাজির কসবা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকায় ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে আঁখি মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নির্যাতনের কারণে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। গত শনিবার তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন আঁখির বাবা মো. রহিম শেখ। আদালত আসামি গ্রেপ্তার করতে সদর থানাকে নির্দেশ দেন। এ মামলায় আঁখির শ্বশুর রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও দেবর রিফাত ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হলেও স্বামী রফিকুল ইসলাম হৃদয় এবং শাশুড়ি শান্তি বেগম পলাতক রয়েছেন।
গত বছর ৯ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম হৃদয় ও আঁখি আক্তার লাবণী বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের প্রথম ৬ মাস ভাড়া বাড়িতে ভালোই চলছিল সংসার। শ্বশুর বাড়িতে ওঠার পর তার ওপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের কারণে আঁখিকে নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। একপর্যায়ে তার হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়; শরীরের বিভিন্ন অংশে দেওয়া হয় জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা। কোনো কোনোদিন টিভির ভলিউম বাড়িয়ে আঁখির ওপর নির্যাতন করা হতো, যাতে চিৎকার বাইরে না পৌঁছে।
গত রবিবার রাতে সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আঁখি এ প্রতিবেদককে জানান, শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী মিলে গত বছর ৩১ আগস্ট হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক তাকে ফিনাইল খাওয়ায়। পরদিন বিকালে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছুটা সুস্থ হলে বাড়িতে নিয়ে আসে। এর কিছু দিন পরে হাতের নখ উপড়ে ফেলে এবং সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষত-বিক্ষত করে।
আঁখি আরও জানান, তাকে প্রায়ই অভুক্ত রাখা হতো। একটি রুমে টানা ৮ দিন শুধু পানি খেয়ে আটক থাকতে হয়েছে তাকে। সর্বশেষ গত বছর ২২ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আঁখিকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হতো না। একপর্যায়ে আঁখিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে আসেন স্বামী হৃদয়। পরে আঁখি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিছুটা সুস্থ হলে বাবা-মা গিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন।
আঁখি আরও জানান, নির্যাতন সইতে সইতে তার দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন, মেয়েটিকে গত রবিবার রাতে জেনারেল হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। রাত থেকেই তার স্বামী হৃদয়কে গ্রেপ্তারের অভিযানে নামে পুলিশ। গতকাল সোমবার আদালত থেকে নারী ও শিশু দমন আইনের মামলাটি থানায় এলে রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও রিফাত ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।