বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

জাপানে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৫০ বার

সাম্প্রতিক বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন বা অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে বাংলাদেশের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশ থেকে ১২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে জাপানের বাজারে পোশাকের রপ্তানি চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে; যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ১৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার ছিল। শতাংশের হিসেবে প্রায় ২৬ শতাংশ।  ইপিবি’র তথ্যমতে, করোনা মহামারির অভিঘাতে টানা দুই বছর গতি হারানোর পর, ২০২১-২২ অর্থবছরে ফের জাপানে পোশাক রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারের ঘরে পৌঁছেছে। এভাবে রপ্তানি বৃদ্ধির সুবাদে উচ্চ মানের পণ্য দিয়ে জাপানের পোশাক বাজারের আরও বড় অংশ দখল করতে চান বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, স্পোর্টসওয়্যার, ডেনিম ও অন্তর্বাস পণ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে জাপানে রপ্তানি ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বৃহৎ জাপানি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তারা সন্তোষজনক সংখ্যায় কার্যাদেশ পাচ্ছেন। অনেক ব্র্যান্ড ও ক্রেতা বাংলাদেশের কৃত্রিম তন্তু (ম্যানমেইড ফাইবার) উৎপাদন শিল্পেও বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বর্তমানে উন্নত দেশগুলো চীন নির্ভরশীলতা কাটাতে ‘চায়না-প্লাস-ওয়ান’ কৌশল অবলম্বন বাড়ছে। এর মাধ্যমে শুধু চীনে বিনিয়োগ না করে এখাতের কোম্পানিগুলো অন্য দেশেও বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের পণ্য সংগ্রহের উৎসে বৈচিত্র্য আনছে বলে জানান তারা।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে জাপানের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ছে এবং ২০২১ সালে, যা প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে অন্যতম জাপানে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ২৫.৮১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য। শিল্প মালিকরা জানান, তারা এখন চীন, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত অর্ডারকে পুঁজি করে জাপানের বাজারে নতুন ক্রেতা সন্ধান করছেন। বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ২০১০ সালেই নতুন গতি পায় জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। ওই সময় দেশটি চীন-প্লাস-ওয়ান কৌশলের অধীনে বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করে। এখন অনেক জাপানি অর্ডার মিয়ানমার, চীন এবং ভিয়েতনাম থেকে আমাদের কাছে স্থানান্তরিত করছেন।  প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামাল কামরুজ্জামান জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান জাপানের বাজারে কিছু খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি করে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার জাপান। আরেক উদ্যোক্তা বলেন, জাপানে বাংলাদেশের চামড়া, চামড়ার ব্যাগ এবং পাদুকা রপ্তানি প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে জাপানে এখনো চামড়ার ব্যাগ এবং জুতোর প্রধান সরবরাহকারী চীন। কারণ ভৌগোলিক দিক থেকেও চীনের কাছাকাছি জাপান। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, জাপান আমাদের জন্য একটি বড় রপ্তানি গন্তব্য। চলতি অর্থবছরে দেশটি থেকে আয় দ্বিগুণ করতে চাই আমরা। মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধের পর আমরা এখন সে দেশে যাব এবং বৃহৎ জাপানি বায়ার ও ব্র্যান্ডগুলোকে আমাদের থেকে পণ্য সংগ্রহের প্রস্তাব দেবো। তিনি বলেন, বিজিএমইএ তাদের নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য রপ্তানি বাজার চিহ্নিত করেছে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কোরিয়া, জাপান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা। নিজস্ব পণ্যের সম্ভাবনাময় বাজার স্টাডি ও চিহ্নিত করতে বিজিএমইএ আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেছে বলেও জানান তিনি। নতুন ক্রেতা খুঁজতে বিজিএমইএ চলতি বছরের নভেম্বরে জাপানে একটি ট্রেড শোতে যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ২০৩০ সালের মধ্যে জাপানে আমাদের পোশাক রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জাপানের পোশাক আমদানি ছিল ২৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার। ১৩.৯০ বিলিয়ন ডলার অংশ নিয়ে রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল চীন, ৩.৪৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানটি ছিল ভিয়েতনামের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির মূল বাজার। এর বাইরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, চীন ও ভারতসহ অন্য দেশকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিজিএমই’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যদিও গত বছরের আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে; তবুও সূচক ও অনুমানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি খুচরা ব্যবসাকে প্রভাবিত করার কারণে এই মাস থেকে প্রবৃদ্ধি কমে আসবে। তবে এরমধ্যেও অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com