বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা এবং বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় লক্ষ করা যায়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা লাভের অপেক্ষায় থেকে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আত্মশক্তি বিকাশে শিক্ষার অবদান ও ভূমিকা সম্পর্কে নিজেদের তরফে রোগ প্রতিরোধ এবং স্বশিক্ষিত মুক্তবুদ্ধি জ্ঞান চর্চ্চার বিকল্প নেই। প্রিভেনশান ইজ বেটার দ্যান কিওর, প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়। চাপানো, খাটো করা, সংক্ষিপ্ত, অটো পাস শিক্ষা শিক্ষা নয়, উদার উন্মুক্ত শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।
আজ থেকে প্রায় ১৩০ বছর আগে মশহুর মার্কিন আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১) যথার্থই বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের চিকিৎসক রোগীকে ওষুধ না দিয়ে তাকে শেখাবেন শরীরের যত্ন নেয়া, সঠিক খাদ্য নির্বাচন, রোগের কারণ নির্ণয় ও তা প্রতিরোধের উপায়।’ গ্রামে উচ্চ শিক্ষিত এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক যখন সুদুর্লভ, শহরে ও গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সেবা কার্যক্রম যখন ব্যবসায়িক মন মানসিকতার হাতে বন্দী, বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যের বেড়াজালে সাশ্রয়ী মূল্যে দেশীয় ওষুধ শিল্প উৎপাদন যখন তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবায় নীতি ও নৈতিকতা যখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তখন আমাদের নিজে নিজের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শরণাপন্ন হওয়ার যৌক্তিকতা বেড়ে যায়। এডিসন যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা আজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলেও সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে শরীরের যত্ন, খাদ্য অখাদ্য বিচার ও রোগ ঠেকানোর ব্যাপারে আমাদের আরো যথেষ্ট সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সুস্থ ও সুন্দর জীবন বলতে আমরা প্রকৃতপক্ষে কী বুঝি? একজন মানুষ দৈহিকভাবে, মানসিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং আত্মিকভাবে যদি ভালো থাকে বা ভালো বোধ করে তাহলে তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ বলা যেতে পারে। তার জীবনযাপন সুন্দর, অর্থবহ, উপভোগ্য, সৃজনশীল, কর্ম উপযোগী হতে তাকে ব্যক্তিগতভাবে উপরোক্ত চারভাবে বা প্রকারে সুস্থ হওয়ার বা থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেউ দৈহিক বা শারীরিকভাবে হয়তো সুঠাম, নিরোগ এবং সুস্থ কিন্তু তার মানসিক অবস্থা, তার পরার্থপরতা, নীতি-নৈতিকতা, ন্যায়নীতি নির্ভরতা তথা সততার সাথে সামাজিক অবস্থান বা সুনাম বিতর্কিত বা প্রশ্ন সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ালে এবং একই সাথে তার আধ্যাত্মিক বা আত্মিক অবস্থা ভালো না হলে ওই ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ বা তার জীবন সুন্দর বলা যাবে না। আবার আধ্যাত্মিকতায় উন্নত, সামাজিকভাবে সুপরিচিত কিংবা মানসিকভাবে শক্তিশালী এমন সুস্থ সবল ব্যক্তি যদি দৈহিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ অক্ষমতায় আপতিত হয় তাহলে তাকেও সুস্থ বা স্বাস্থ্যবান বিবেচনা করা যাবে না। অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে পুরোপুরি সুস্থ ও সুন্দর জীবনের অধিকারী হতে হলে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিকভাবে সব দিক দিয়ে সবল হতে হবে। বস্তুত সুস্থ ও সুন্দর জীবনের পূর্বশর্ত হলো দেহ, মন, সামাজিক সুনাম আর আত্মার উৎকর্ষতা পরিপূর্ণ সুস্থতা। সে জীবন অর্জনের জন্য, সে জীবন যাপনে সাধনার প্রয়োজন। প্রয়োজন সুশৃঙ্খল জীবনযাপন।
সুস্থ ও সুন্দর জীবনের স্বার্থে এ চার পর্ব বা পর্যায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার। শারীরিক বা দৈহিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক সব অঙ্গের চলাচলের শক্তি বজায় থাকা এবং কোনো কাজ সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শরীর একটি মেশিনের মতো, একে কার্যকর রাখতে প্রয়োজন উপযুক্ত জ্বালানির, এর চলচ্ছক্তিকে সক্রিয় রাখতে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যকার পরস্পর সহযোগিতার স্বাভাবিক কার্যকারিতা বেগবান রাখতে হবে। অর্থাৎ শরীরকে সচল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯১৭-১৯৮৯) প্রায়ই বলতেন, ‘গাড়িকে গতিশীল ও কার্যকর রাখতে বা পেতে এর নিয়মিত সার্ভিসিং দরকার। আমাদের বড় দুর্ভাগ্য এ যে আমরা গাড়ি খারাপ হলে তারপর গ্যারেজে নিয়ে আসি। নিয়মিত সার্ভিসিং হলে এক ধরনের বেকায়দা অবস্থায় মেরামতখানায় নেয়ার প্রয়োজন পড়ত না। আমাদের শরীরের অবস্থাও তাই। একে ঠিকমতো যত্ন করতে হবে, নিয়মিত চেকআপে রাখতে হবে। শরীরকে রোগ বালাই থেকে অর্থাৎ একে নিরোগ রাখতে সময় মতো এর পরিচর্যা প্রয়োজন।’ মানসিকভাবে সুস্থতার জন্য মনকেও সুরক্ষা দিতে হবে, মনকেও সক্রিয় ও সুস্থ রাখতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে সবার সাথে সহযোগিতা সখ্য সমুন্নত রাখতে হবে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি সকৃতজ্ঞতায় তাঁর নির্দেশাবলী পালন ও অনুসরণের মাধ্যমে পরমাত্মার প্রতি একাত্ম হতে হবে। সব কিছু একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, একটির অবর্তমানে অপরটি অচল।
নগরায়ণ বাড়ছে। গ্রামের মানুষ শহরে জীবন ও জীবিকার টানে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরে সেই মানুষের ঠাঁই দেয়ার সামর্থ্য নেই ফলে শহরের উপকণ্ঠ যে গ্রাম সেই গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে দ্রুত। গ্রামের টাটকা ফল ফলারি, মাছ, দুধ গোশত এখন শহরের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে শহরে চলে যাচ্ছে। গ্রামে মানুষ থাকছে না, শহরে গিয়ে গ্রামের সামগ্রীর চাহিদা সৃষ্টি করছে আর যারা যদিওবা গ্রামে থাকছে তারা পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। তারা অধিক লাভের আশায় তাদের সনাতন চাষপদ্ধতি সনাতন সব আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়ে অতি আধুনিক চাষবাস ব্যবহার করে হাইব্রিড উন্নয়নের পথে পা বাড়াচ্ছে। স্ফীতকায় নগরের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে তাদের। আর গ্রামের মানুষ শহরে এসে বন্দিত্ব বরণ করছে সীমিত নাগরিক জীবনের বসবাসের কারণে।
তাদের খেলার মাঠ নেই, সাঁতার কাটার পুকুর নেই, উদার উন্মুক্ত বাতাস সেবনের সুযোগ নেই। যন্ত্রের মতো নাগরিক জীবনে তাতে অভ্যস্ত হতে গিয়ে তাদের পারিবারিক ঐক্য, পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি মমতা ও যোগাযোগ রক্ষা সামাজিক সখ্য সবই হারাতে হচ্ছে। একে কি জীবন বলে? প্রত্যেকের জীবন যার যার তার তার। গ্রামের জীবন আর শহরের জীবনের মধ্যে সমান্তরাল সাযুজ্য হারিয়ে এখন শহরে বড় হচ্ছে, যে শিশু সে গ্রামকে আর জানতে পারছে না- টাটকা ফল ফসলের পরিবর্তে জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত ফুড গ্রহণ করতে করতে নগরায়ণের সীমাবদ্ধ সময় ও পরিসরে তার জীবনকে ই-পদ্ধতি প্রক্রিয়ার ছকে বেঁধে ফেলছে। এক সময় সুযোগ পেলে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশে পাড়ি জমানোর তাগিদ ও প্রয়োজনীয়তা এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌযানে সমুদ্র পাড়ি দিতে হচ্ছে তাকে। এভাবে মানবের বিশ্বভ্রমণ নতুন কোনো বিষয় নয়, যদিও জীবন ও জীবিকার সন্ধানে মহাদেশ থেকে মহাদেশান্তরে মানুষ প্রত্যাবাসিত হয়েছে, পাচার হয়েছে।
ভারতবর্ষের লোকেরা সুদূর আফ্রিকার মরিশাস, ফিজি, এমনকি ল্যাটিন আমেরিকার ত্রিনিদাদ টোবাগোতেও গেছে। ভারত থেকে সুমাত্রা, যাভা দ্বীপ, মালয় ও শ্যাম দেশে চলে গেছে। সিল্ক রুট দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ভারতবর্ষ হয়ে সুদূর চীন ও সাইবেরিয়া হিমাঞ্চল তথা পাহাড়ি দেশসমূহে প্রবেশ করেছে। আজ আমরা টেকনাফ দিয়ে ছোট যানে মানুষকে মালয়েশিয়া যেতে দেখে কিংবা থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশীদের বন্দী জীবনযাপনের খবরে শিউরে উঠছি কিন্তু কেন এ বিড়ম্বনা তা ভেবে দেখছি না- তাদের এভাবে যাতে যেতে না হয় কিভাবে উন্নত উপায়ে নিরাপত্তার সাথে সম্মানের সাথে এ প্রত্যাবাসন হয় সেটা আধুনিক যুগের সবাইকে দেখতে হবে। টেকসই উন্নয়নের কথা যদি বলি মানবসম্পদ পাচারের এ প্রবণতাকে সঠিক ধারায় আনা দরকার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ যোগাযোগের দুয়ার খুলতে কূটনৈতিক উদ্যোগ যেমন আধুনিক সরকার এর তরফে যেমন জরুরি তেমনি যারা যাবেন তারা যেন যথা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে পাড়ি জমান বিদেশ বিভূঁইয়ে সেজন্য দেশের ভেতরে উপযুক্ত শিক্ষা প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
শিক্ষা মূল্যবোধকে জাগ্রত করার কথা, মূল্যবোধ অবক্ষয়ের উপলক্ষ হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থীর মনে ভালোমন্দ জ্ঞান এর বিকাশ, দায় দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার আচরণের উদগাতা ও উপলক্ষ উপলব্ধি, পারঙ্গমতা তথা দক্ষতা ও যোগ্যতা সৃষ্টির জন্য যদি না হয় শিক্ষা, বরং শিক্ষা যদি হয় ঠিক বিপরীত সব অবস্থা ব্যবস্থা তার চেয়ে দুঃখজনক অবস্থা আর কী হতে পারে? প্রযুক্তি শিক্ষা উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন পথে নতুন উদ্যমে সময় ও সামর্থ্যকে সাশ্রয়ী করে তুলে অধিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য। শিক্ষা ও প্রযুক্তি যদি অসৃজনশীল, অপচয় অপব্যয় অপ-অভ্যাস গড়ে তোলার পথ পায় তাহলে তো সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ বছরে, ১৮৯৯ সালে, ঔপনিবেশিক শাসন আমলে, এ দেশের একজন সরকারি স্কুল পরিদর্শক, আহ্ছানউল্লা (পরবর্তীকালে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা) তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন- মাইলের পর মাইল হেঁটে, নিজের সাথে আহারাদি পাচকসহ পরিপাকের উপায় উপকরণ বয়ে নিয়ে তিনি স্কুল পরিদর্শন করতেন। পরিদর্শিতদের পক্ষ থেকে তাকে কোনো প্রকার পরিষেবার সুযোগ তিনি দিতেন না। দায়িত্বশীলতার সাথে প্রণীত তার প্রতিবেদন সুদূরপ্রসারী মূল্যায়নধর্মী ফল নিয়ে আসত। ঠিক এই অবস্থার বিপরীতে এই অতি সাম্প্রতিককালেই যদি শোনা যায়, দেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তা খোদ ঢাকায় বসে ৬০০ কিলোমিটার দূরের কোনো শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষককে তার ‘পরিদর্শন ছক’ পূরণ করে ‘টাকা’ নিয়ে কেন্দ্রে আসতে বলছেন। টাকার পরিমাণ অনুযায়ী নাকি মেলে তার সুপারিশ সনদ প্রতিবেদন যাই-ই বলি না কেন। যিনি নিজে এত বড় দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন তিনি কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতার জবাবদিহির মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবেন? তার তথাকথিত প্রতিবেদনের ওপরই ওই বিদ্যায়তনের গেজেট ও এমপিওভুক্তি, সরকারি তহবিল থেকে শিক্ষকদের পুরো বেতন প্রাপ্তি কত কিছু নির্ভর করে। ইদানীং পত্রপত্রিকায় খবর দেখা যায় মাউশীর (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) কেরানিরাও অঢেল সম্পত্তির মালিক, কলেজ শিক্ষা বিভাগের উচ্চতর ক্ষমতাধর অনেক কর্মকর্তা যারা সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বদলি ও পদোন্নতি দেখেন বা দেখতেন তাদেরও সহায় সম্পত্তির হিসাব নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কালো চশমা আর কতকাল?
পল্লী অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান পরিবেশ, ব্যবস্থাপনার সুযোগ সুবিধার সাথে শহরের শিক্ষায়তনগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে, মফঃস্বল থেকে পাশ করা মেধাবী ছাত্ররাও শহরের শিক্ষায়তন থেকে পাস করাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। এভাবে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মেধার বিকাশ সীমিত ও শর্তসাপেক্ষ হয়ে পড়ছে। দেশের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য সৃষ্টির উদ্যোগ তথা অপয়া অবস্থা দেশ ও জাতির জন্য অশেষ দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে। মেধাশূন্য বিপুল জনগোষ্ঠী সম্পদ না হয়ে সহস্র সমস্যার শৈবালদামে পরিণত হয়ে দেশ ও জাতির বহমানতাকে ব্যাহত করতে থাকবে।
একবার ভারতের একাদশতম সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আবদুল কালাম (১৯৩১-২০১৫) বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের তরফ থেকে তিরাশী বছর বয়সী এই চিরতরুণ তত্ত¡বিদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল গোটা উপমহাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিপ্সায় তার বার্তা কী? তিনি পরামর্শে সোজা সাপটা বলেছেন, বাড়িতে পিতা-মাতা ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষককে দায়িত্বশীল হতে হবে, তাদের দায়িত্বশীল পেতে হবে। তাদের দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ পেতে হলে তাদের প্রতি বলিষ্ঠ সুনজর দিতে হবে। জাপানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষককে সবিশেষ সযত্ন ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার জন্য রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
পরিবারে পিতা-মাতা কোনোভাবেই ভবিষ্যৎ পরিবার দেশ ও সমাজে উপযুক্ত সদস্য সরবরাহে অমনোযোগী হতে পারেন না। সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাদের মধ্যে ন্যায় নীতিবোধের আদর্শ ও মূল্যবোধ জাগিয়ে তারা তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালনে প্রথমত নিজেদের ও সংসারের স্বার্থে এবং প্রধানত পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির স্বার্থে অবশ্যই মনোযোগী হবেন। আর এই সব মানুষের দ্বারা, সব মানুষের জন্য, সব মানুষের সরকার পরিবার, সংসার, সমাজ ও দেশে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণে, উদ্বুদ্ধকরণে, প্রণোদনে, প্রযত্ন প্রদানে অর্থনৈতিক রাজনীতি নিষ্ঠায়, ন্যায়নির্ভরতায়, স্বচ্ছতায়, জবাবদিহিতায়, সুস্থ সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্য-সখ্যের সুযোগ সুনিশ্চিত করবেন। সে নিরিখে মানবসম্পদ তথা সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন যুগের যে শিক্ষার দরকার সেই শিক্ষার পথে আমরা আছি কি না বারবার তার তাগিদ দেয়া দরকার।
লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান