ইদানীং সরকার সমর্থক একশ্রেণীর মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল ব্যক্তিকে ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বেসামাল কথাবার্তা, বক্তৃতা-বিবৃতি ও আহাজারিতে অনেকই হতবাক। সুশীলদের আক্ষেপ দেশ আবার পেছনে হাঁটছে, সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সমূহ বিপদ আসন্ন। সম্ভবত তারা দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের উত্তাপ অনেকটা আগাম অনুভব করছেন। পক্ষপাতদুষ্ট সুশীল সমাজের একাংশের এই অস্থিরতা নানাভাবে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অনাকাক্সিক্ষত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পারদ উপরে উঠছে এমন এক সময় যখন সমাজে স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট, বৈষম্য, শোষণ, জুলুম, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ অনৈতিক-অমানবিক কর্মকাণ্ড অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে জনতার ঢল নামছে। অস্থিরতা উপসর্গে আক্রান্তদের অন্যতম হলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রেসিডেন্ট ও মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবির।
গত ৪ অক্টোবর মুনতাসীর মামুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে জনগণের বড় অংশকে দেশ ত্যাগ করতে হবে। সংখ্যালঘুদের এমনকি বিএনপি নেতা গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কেও দেশ ত্যাগ করতে হবে। মুনতাসীর মামুনের সতীর্থ অনেকেই অনুরূপ অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে মুনতাসীর প্রকাশ্যই ঘোষণা করেছেন যে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা বাংলাদেশে বসবাস করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতনের বাস্তব চিত্রের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের সহায়-সম্পদের শতকরা ৮০ ভাগই জবরদখল করেছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় মুনতাসীর মামুনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করার প্রশ্নই আসে না। তিনি জানতে চেয়েছেন বিএনপি সরকারের আমলে তিনি (মুনতাসীর) দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন কি না?
বেশকিছু দিন ধরেই সুলতানা কামলের মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। গত মাসে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘একাত্তরের চেয়ে আমরা খারাপ অবস্থায় আছি। কিছু দিনের মধ্যেই এ দেশ সুন্নি মুসলিম অধিকারের দেশ হবে। সুন্নি পুরুষ ছাড়া অন্যকারো অধিকার থাকবে না এ দেশে। আর নারীরা থাকবে সেবা ও সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য। আমরা সাম্প্রদায়িকতার কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছি।’ তা ছাড়া, বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে সুলতানা কামালের একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। নিবন্ধের শিরোনাম ছিল- ‘দায়টা শুধু ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নয়’। নিবন্ধে তিনি বলেছেন, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজি, আসন-বাণিজ্য, ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক-অসামজিক কাজ করানোসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর তিনি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন। এ ঘটনার জন্য তিনি সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিরাজমান নৈরাজ্য ও ন্যক্কারজনক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি ন্যক্কারজনক জায়গায় চলে গেছে। ইডেন কলেজ পরিস্থিতির ফল হবে সুদূরপ্রসারীও ভয়াবহ।’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ গত ১৪ বছর ধরে ধর্ষণের শতক উদযাপনসহ হাজারো অপকর্মের ইতিহাস সৃষ্টি করলেও সুলতানা কামালকে ইতঃপূর্বে এমন উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। এ সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অসংখ্য রক্তক্ষয়ী বর্বর হামলার ব্যাপারে তাকে তেমন সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।
সুলতানা কামাল হঠাৎ করে ছাত্রলীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে নারী প্রগতি আন্দোলনের পরাজয় এবং নারীবিদ্বেষী ইসলামপন্থীদের উত্থানের ভূত দেখতে পাচ্ছেন। তবে নিবন্ধে তিনি প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বিরোধী ছাত্রদলের নিন্দা করেছেন যারা গত দেড় যুগ ধরে নির্যাতিত ও ক্যাম্পাস থেকে কার্যত বিতাড়িত। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের অত্যাচারের কাহিনী স্মরণ হলে ভীতসন্ত্রস্ত হতে হয়’। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ন্যক্কারজনক পর্যায়ে উপনীত হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনকে অভিযুক্ত করতে নারাজ। তার অভিযোগের আঙুল সর্বদা তাক করা থাকে বিএনপি ও ইসলামপন্থীদের দিকে। তারই প্রমাণ পাওয়া যায় ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়া টুডেতে তার এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে। ওই সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি পত্রিকাটিকে প্রসঙ্গের বাইরে অনেক কথা বলেছেন। তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশেষ করে গুমের জন্য বিএনপির নিন্দা করেছেন। তবে ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে স্বীয় বক্তব্যের দায় অস্বীকারও করেছেন।
সম্প্রতি নড়াইলে সংখ্যালঘু শিক্ষক হয়রানির ঘটনার নিন্দা জানাতে গিয়ে শাহরিয়ার কবির হুমকির সুরে বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায় যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আওয়ামী লীগ ৬২টি সংসদীয় আসনে জয় পাবে না। তিনি আওয়ামী লীগের স্বার্থ এবং সংখ্যালঘুর স্বার্থকে বিভাজন না করার তাগিদ দেন। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনের ‘চ্যাম্পিয়ন’ শাহরিয়ার কবিরের চিন্তার জগতে হিন্দুদের ভোটের গুরুত্ব অনেক। তিনি হিন্দুদের অধিকার রক্ষা করতে চান আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র ভোটব্যাংক হিসেবে, দেশের স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে নয়। হিন্দুদের শতভাগ ভোট আওয়ামী লীগকেই পেতে হবে তিনি এ নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চান যে, হিন্দুরা ভোট না দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে পুরো জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার হরণের বিষয়টি তার কাছে একবারেই গৌণ।
যে দেশে বিনা ভোটে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের ফলাফল নির্ধারিত হয় এবং দিনের ভোট রাতের আধারে সম্পন্ন হয়ে যায়, সে দেশের হিন্দুদের ভোটাধিকার নিয়ে শাহরিয়ার কবিরের উৎকণ্ঠার যেন শেষ নেই। তিনি এক অদ্ভুত মানবাধিকারকর্মী। তার মানবাধিকার চেতনা সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেদ করে আজো সার্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করেনি। তিনি আসলে সাম্প্রদায়িকতার জুজুর ভয় দেখিয়ে ভিন্ন মতলব হাসিলে তৎপর। তা ছাড়া ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে আলাপকালে শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানপন্থী মুসলিম দেশ বানাতে চায়’। তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ডানপন্থী বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ধর্মের নামে যেসব ডানপন্থী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায় তারা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। তিনি দেশ রক্ষার চেয়ে আওয়ামী লীগ রক্ষায় অনেক বেশি উতলা হয়ে ওঠেছেন। তিনি এমন এক সুশীল যার মিশন হলো ডানপন্থীদের নির্মূল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সুলতানা কামাল, মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবিররা হলেন তথাকথিত সুশীল সমাজের এমন এক সিন্ডিকেট যারা ইসলামমুক্ত হিন্দুত্ববাদ সহনশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। বাস্তবতার নিরিখে অলীক হলেও এমন স্বপ্ন দেখায় কোনো দোষ নেই। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামেরা অধীনে তাদের ‘মহৎ মিশন’ পরিচালনায় কারো আপত্তি থাকার কথাও নয়। তবে গভীর দুশ্চিন্তার বিষয় এই যে, স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের ওপর ভর করে তারা অসাম্প্রদায়িক সমাজ কায়েম করতে চায়। আশ্চর্যজনক হলেও তাদের সাম্প্রতিক উদ্বেগ-অস্থিরতার সাথে অবিকল মিল খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের আতঙ্কের। গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর একতরফা সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুলের উপক্রম হলে সুজাতা সিং ঢাকায় আসেন এক ঝটিকা সফরে। একান্ত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টি প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে। বৈঠক শেষে এরশাদ অভিযোগের সুরে সাংবাদিকদের বলেন, সুজাতা তাকে চাপ দিয়েছেন বিতর্কিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। সুজাতা তাকে বলেছেন, নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উত্থান হবে। ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে, সুজাতা সিং ও এসব দেশীয় সুশীলরা সবাই ইসলামভীতিতে আক্রান্ত। সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলন বিজয়ের পথে অগ্রসর হলে এদের ইসলামভীতি তীব্রতর হয়।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিশাল জনগোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতির প্রতি উল্লিখিত সুশীলদের উদাসীনতা ও নিস্পৃহতা এতটাই প্রকট যে, মুসলমানরা যেন এদের প্রকাশ্য শত্রু তালিকায়। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের মানবাধিকার থাকতে নেই। মুসলমানদের কণ্ঠে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে এদের ঘোর আপত্তি। কিন্তু জয় শ্রীরাম স্লোগান উচ্চারণে অনিচ্ছুক মুসলিম হত্যার নিন্দায় এদের কণ্ঠ কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় না। ইসলাম নির্মূল মিশনে এরা সদা ব্যস্ত। তাদের বিবেচনায় সাম্প্রদায়িক শক্তির ভিত নিহিত আছে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে। তাই সমাজকে ইসলামমুক্ত করতে না পারলে তাদের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ মিশন সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিপরীতে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, এই দুই ধারার মেলবন্ধনে ইসলাম হচ্ছে প্রধান অন্তরায়।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আগুন সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিজেপি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড ইতিহাসের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভারতে অব্যাহতভাবে মুসলমান হত্যা ও তাদের নাগরিক অধিকার হরণের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাপক মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের আবেগ-অনুভূতির তোয়াক্কা না করে এ ব্যাপারে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করছে না। এসব সুশীলরা নিজ দেশের সংখ্যালঘু অধিকার প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ হলেও প্রতিবেশী ভারতে সংখ্যালঘু নির্মূল ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত নীরব। এদের দ্বৈত আচরণে সাধারণ মানুষ খুবই হতাশ, অনেকেই ক্ষুব্ধ। জনগণের আস্থা সঙ্কটে ভোগা এসব সুশীলরা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকটাই বিচলিত।
তা ছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক হিংসা-হানাহানি নতুন মাত্রা পেয়েছে। পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের নির্বিচারে হত্যা, গ্রেফতার, হামলা, মামলা ও নির্যাতন উপেক্ষা করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমাবেশে জনতার ঢল নামছে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সরকারপন্থী সুশীলদের মনে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। বাংলাদেশের ক্রমাবনতিশীল নাগরিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুশীলদের এ অস্থিরতায় কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসেবে দেখা দিয়েছে র্যাবসহ কতিপয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। ওয়ান-ইলেভেনের পৃষ্ঠপোষক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের তৎপরতা আবার শুরু হয়েছে। তবে তাদের এবারের প্রকাশ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অভ্যন্তরীণ কুশীলবদের প্রত্যাশার সাথে রয়েছে বিস্তর ফারাক। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দুর্নীতি, ইসলামী উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেশে ওয়ান-ইলেভেন পট পরিবর্তন ত্বরান্বিত করেছিল এসব সুশীল ব্যক্তিত্ব। এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে ওয়ান-ইলেভেন সমর্থক দেশীয় সুশীলদের দলীয় এজেন্ডা পরস্পরবিরোধী বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।
ইসলামভীতির স্থলে গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকারকে প্রধান বিবেচ্য ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যেকোনো এক দলীয়, ভোটারবিহীন, একতরফা ও জবরদস্তির বিতর্কিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে শক্তিশালী ভিনদেশী খেলোয়াড়রা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটতে পারে। সুজাতা সিং মডেলের কোনো হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না এবার। তাই তারা ভুগছেন গোলকধাঁধায়।