ময়মনসিংহে দুর্ধর্ষ চুরি-ডাকাতি বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক নেতারা। পুলিশ বলছে, বেশিরভাগ ঘটনার ছক আঁকে জেলে বসে। আর জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আন্তঃজেলার ডাকাতরা সংঘটিত করেছে দুর্ধর্ষ ডাকাতি।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের উপজেলায় ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া চুরি-ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। এসব ঘটনায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। আতঙ্কে আছে ব্যবসায়ীরা। তবে সবকটি ডাকাতির ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলতা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ জনের ডাকাত দল বাজারের সাতজন পাহারাদারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি সংঘটিত করে। পরে পাহারাদারদের বেঁধে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্থান ত্যাগ করে তারা। ওইদিন ডাকাতরা মুক্তা জুয়েলার্স থেকে ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৪০ ভরি রুপা এবং বিসমিল্লাহ জুয়েলার্স থেকে ১৩ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ ভরি রুপার অলঙ্কার, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় লুণ্ঠিত ১১ আনা স্বর্ণালঙ্কার ও ৭০ ভরি রুপার অলঙ্কার উদ্ধার ও সাতজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডে নিউ ভিশন মেডিসিন পয়েন্ট ফার্মেসিতে দুর্র্ধর্ষ চুরি হয়। নগদ ৬ লাখসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার ওষুধ চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামি ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নান্দাইলের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. সাগর বলেন, ‘দোকান লুট হওয়ার পর থেকে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি। আতঙ্কের মধ্যে আছি। কয়েকজন ডাকাত ধরা পড়লেও আমাদের ভয় কোনোভাবেই কাটছে না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শিব্বির আহম্মেদ লিটন বলেন, এখনই এসব ঘটনার টুঁটি চেপে না ধরতে পারলে আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, ডিবির হাতেই ডাকাতির ১২ মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলার কারণ অনুসন্ধান করে আসামি ও লুণ্ঠিত মাল উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে ডাকাতির কথা স্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানেই ওইসব ডাকাতরা ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ময়মনসিংহের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণেই তারা আলোচনায় এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ডজন-ডজন মামলা রয়েছে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেই সংঘবব্ধ হয়ে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কোনো অপরাধী অপরাধ করলে তাদের জেলে পাঠানো হয় সংশোধনের জন্য। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, ময়মনসিংহে বেশিরভাগ সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে জেলে বসে ডাকাতির চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।