যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাড়িতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে আবার মহান এবং গৌরবময় করার জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করছি।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময় নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন, যখন এক সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ফল করতে পারেনি রিপাবলিকান পার্টি। এজন্য অনেকেই ট্রাম্পকে দুষছেন। এই নির্বাচনে ট্রাম্প সমর্থিত ছয় প্রার্থীর পাঁচ জনই পরাজিত হয়েছেন। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে রিপাবলিকানদের। এ কারণে ট্রাম্পের নেতৃত্ব নিয়ে রিপাবলিকান দলে এখন উদ্বেগ কাজ করছে। এর মধ্যেই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি। যদিও অনেক রিপাবলিকান নেতা ইতিমধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা থেকে ট্রাম্পকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেননি তিনি।
২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপর ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন তিনি।
ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাড়িতে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, গত ছয় বছরে আমরা একসঙ্গে সবচেয়ে বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছি। যা আমেরিকার প্রতি আমাদের ভালবাসা, এটিকে ব্যর্থ হতে দেব না। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়েছি, কারণ আমেরিকানদের প্রকৃত গৌরব বিশ্ব এখনও দেখেনি। আমরা শীর্ষে পৌঁছাতে পারিনি, জাতির বর্তমান অবস্থার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের এই খাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং একবার আমরা বেরিয়ে গেলে, আপনি এমন কিছু দেখতে পাবেন, যা কোনো দেশ কল্পনাও করেনি।’
এদিকে ট্রাম্পের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন রিপাবলিকান নেতারা। ট্রাম্প আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভবিষ্যতে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো কাউকে আমরা পেতে পারি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি আমি ও আমার পরিবার গভীরভাবে বিবেচনা করছি। ট্রাম্পের কি আবারও প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পেন্স বলেন, এটি আমেরিকার জনগণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি মনে করি, ভবিষ্যতে আমাদের আরো ভালো পছন্দ থাকবে। আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামতে পারেন এমন সম্ভাব্য নেতাদের তালিকায় মাইক পেন্স ছাড়াও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস রয়েছেন।
অ্যারিজোনায় হেরেছেন ট্রাম্প মিত্র ক্যারি লেক অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কেটি হবস জয়ী হয়েছেন। তিনি হারিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ক্যারি লেককে। যিনি ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনিও ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল অস্বীকার করেছিলেন।
এদিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে রিপাবলিকান পার্টি। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ২১৮টি আসন লাগবে। এবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী রিপাবলিকান পার্টি ২১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয়েছে ২০৫টি আসনে। অন্যদিকে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ আগেই নিশ্চিত করেছে ডেমোক্র্যাটরা।
এরমধ্যে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে শক্তিশালী ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের পরাজয় নিশ্চিত হলেও এখনো সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা এগিয়ে থাকলেও ভোট গণনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে।
রবিবার ম্যারিল্যান্ডের রিপাবলিকান গভর্নর ল্যারি হোগান সিনেটে পরাজয়ের জন্য ট্রাম্পকে দোষারোপ করে সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘টানা তৃতীয়বার ট্রাম্প আমাদের নির্বাচনে ডুবিয়েছে। তিনি বলেছিলেন জিততে জিততে তিনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন। এখন আমি হারতে হারতে ক্লান্ত।’
এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়ায় দলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং আগামী নির্বাচনে তার পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনাও বেড়েছে। হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অনিতা দুন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের ‘অনেক বড়’ প্রভাব রয়েছে। এখন বাইডেন বিশ্বাস করছেন দলের যে এজেন্ডা আছে সেগুলো পূরণ করতে তিনিই উপযুক্ত ব্যক্তি। তবে এই বিষয়ে আগামী বছরের শুরুর দিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দপ্তর হোয়াইট হাউজের এ কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, যদি পরবর্তী নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে বাইডেন ২০২০ সালের নির্বাচনের মতোই সাফল্য পাবেন। যুক্তরাষ্ট্র্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলকে ‘গণতন্ত্রের জন্য ভালো’ উল্লেখ করে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা মনে করেন, এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেনের সহকর্মী ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছেন। চলতি মাসে ৮০ বছর বয়সে পা রাখবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা, অনেক সময় সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। বাইডেনের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতিমূলক আলোচনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হোয়াইট হাউজে স্ত্রী জিল বাইডেনকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন বলেন, আমাদের আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা আছে। এটাই আমাদের চাওয়া। তবে শেষ পর্যন্ত এটা পারিবারিক সিদ্ধান্ত।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, স্ত্রী জিল বাইডেনও চান তিনি আগামী নির্বাচনে লড়বেন। তবে তিনি এখনও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়ো করছেন না বলে জানিয়েছেন। জো বাইডেন বলেছেন, তার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে রিপাবলিকান দলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণার কোনও সম্পর্ক নেই। ক্ষমতায় আসার প্রথম দুই বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর বিভিন্ন ধরনের হুমকি নিয়ে সতর্ক করেছেন জো বাইডেন। গত বছরের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা এবং নির্বাচনে তার জয়কে মেনে না নেওয়ার পর থেকে এই সতর্ক বার্তা দিয়ে আসছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনগুলোতেও সেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি।
ট্রাম্পের আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণায় আমেরিকাকে নিয়ে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের এই মুহূর্তটি কীভাবে দেখা উচিত, জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প আর কখনোই ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন না। ট্রাম্পের বিষয়ে বাইডেন বলেন, আমাদের এটা দেখাতে হবে যে, তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ক্ষমতা নিতে পারবেন না। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, সংবিধানসম্মতভাবে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
এদিকে, জো বাইডেনের বিভিন্ন ধরনের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ঘোষণা দেবেন।