ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থী-সমর্থকরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন আশ্বাস। আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচার। একেবারে শেষ দিকে এসে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা। ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ সকাল থেকে মাঠে নামছে নির্বাহী, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি।
নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সব কেন্দ্রে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। যে কেউ গিয়ে আধুনিক যন্ত্রে পরীক্ষামূলক ভোট দিতে পারবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের দুই দিন আগে ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন।এরপর যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালান সেক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের সামারি ট্রায়াল করে ব্যবস্থা নেবেন।
আবুল কাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকেই বিজিবির সদস্যরা মাঠে থাকবেন। শুধু তারাই নন, এদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রতিটির জন্য ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুটি ওয়ার্ডের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে থাকবে। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট চার দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ৪০ হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধে ১০৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে সরকার। আজ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।
দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যাব। এ সময় নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমও থাকবেন। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি কেন্দ্রে ২ জন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ থাকবেন।
মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটাররা যেন নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ফোর্স নিয়োগ করবে ইসি। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম জানিয়েছেন, উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৮৭৬টি। আর সাধারণ কেন্দ্র ৪৪২টি।
ডিএসসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন জানান, দক্ষিণ সিটিতে ভোটকেন্দ্র আছে ১ হাজার ১৫০টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৭২১টি। আর সাধারণ কেন্দ্র ৪২৯টি। দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য একীভূত করলে দেখা যায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। অর্থাৎ ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল গ্রহণ ও পরিবেশন কেন্দ্র এবং কন্ট্রোল কক্ষ হিসেবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানকার বাড়তি নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল বুধবার র্যাব ২-এর অধিনায়ক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ১ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন’ ও ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ’ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে পৃথক দুটি সার্কুলার জারি করেছে।
এদিকে লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান ২৪ ঘণ্টার জন্য নৌযান চলাচল বন্ধের আদেশ জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আদেশে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের (১ ফেব্রুয়ারি) পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি তারিখ দিনগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত (ক) লঞ্চ, (খ) ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌ-যান (ইঞ্জিনচালিত ক্ষুদ্র নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ক্ষুদ্র নৌযান ব্যতীত) এবং (গ) স্পিডবোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জেলা প্রশাসক, ঢাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশক্রমে ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
এ বিষয়ে ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বলেন, আমরা তো আন্তঃজেলা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করিনি। তাই বরিশাল, চাঁদপুরসহ অন্য জেলায় সদরঘাট থেকে যেতে বাধা নেই। আসতেও বাধা নেই।
ইসি কর্মকর্তরা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এখানে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩১৮টি, ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি, ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৫৮৮টি।