সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

মাহফিল আয়োজকদের সমীপে কিছু নিবেদন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮১ বার

ওয়াজ-মাহফিল আমাদের প্রাণের সম্পদ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এই জনপদটির হাজার বছরের ঐতিহ্যের স্মারক এই মাহফিল। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য মহিমায় সমুজ্জ্বল এই ওয়াজের ধারা। পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকেই সমাজের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মেধাবী মর্যাদাশীল জ্ঞানীগুণীরা এই ওয়াজের মাধ্যমে আল্লাহভুলা মানুষদের আল্লাহর দিকে ডাকতেন। ইতিহাসে যারা ‘আম্বিয়ায়ে কেরাম’ আ:-এর নামে পরিচিত। কুরআন মাজিদে নানা জায়গায় তাদের ওয়াজের চমৎকার সব গল্প হৃদয়স্পর্শী ভাষায় বিবৃত হয়েছে। কালের আবর্তনে আম্বিয়ায়ে কেরামের পুণ্য সে ধারার সমাপ্তি ঘটলে ওয়াজের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ দায়ভার উলামায়ে উম্মতের কাঁধে বর্তায়। আলহামদুলিল্লাহ, যুগে যুগে উলামায়ে উম্মত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে আসছেন।

প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে খুবই ছোট্ট একটি দেশ। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। যাদের বড় একটি অংশ কুরআন-সুন্নাহ উলামায়ে কেরাম তথা ইসলামকে হৃদয় গহীনে বরণ করে রাখে। ইসলামের প্রতি এ দেশের আপামর তাওহিদি জনতার আবেগ অবর্ণনীয় ও ঈর্ষাজাগানিয়া। জনমানুষের সীমাহীন এই আবেগের চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শীতকালে দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলগুলোতে। ওয়াজ মাহফিলগুলো এ দেশের মানুষের উন্নত চিন্তা-চেতনার জাগরণ, নীতি-নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ওয়াজ মাহফিলগুলো রীতিমতো সমাজে এক ধরনের উৎসবের আবহ সৃষ্টি করে তুলছে।

সব কিছু সুন্দরভাবেই চলছিল। সময়ের ঘূর্ণিপাকে আজ এই অনিন্দ্য সুন্দর মাহফিলগুলোতে এক ধরনের অশুভ ছায়া আতঙ্ক বিস্তার করার পাঁয়তারা চলছে। একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষী অবিবেচক অশিক্ষিত অপরিণামদর্শী আলোচকের নোঙরা আচরণে বারবার এই ওয়াজ মাহফিলের পবিত্র অঙ্গনটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অস্বাভাবিক সম্মানী দাবি, পড়াশোনা বাদ দিয়ে অন্যের সুর নকলকরণ, বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ হেন নোঙরা আচরণ নেই যা এই বাণিজ্যিক মানসিকতার আলোচকরা করছেন না। ‘যেভাবেই হোক ভাইরাল হতেই হবে’ এই নীচু মানসিকতা আরেক শ্রেণীর আলোচককে উন্মাদ বানিয়ে দিচ্ছে।

‘আলোচক-আয়োজক-শ্রোতা’ এই তিন শ্রেণীই একটি মাহফিলের প্রাণ। তবে এই শ্রেণীর মধ্যে ‘আয়োজক’ শ্রেণীকেই আমার কাছে মাহফিলের প্রধান শ্রেণী মনে হয়। আয়োজকরা যদি আন্তরিকতা ও সচেতনতার পরিচয় দেন তাহলে মাহফিলগুলো আবারো আপন রূপে ফিরে আসতে বাধ্য। শুধু ইউটিউব-ফেসবুকে ভিউ বা জনপ্রিয়তার দিকে না তাকিয়ে এলাকার যুগসচেতন আলেম-উলামার সাথে পরামর্শ করে যোগ্য শিক্ষিত উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন জাতির প্রতি দরদি আমলওয়ালা আলেমদের যদি আয়োজকরা তাদের মাহফিলগুলোতে আলোচক হিসেবে দাওয়াত করেন তাহলে নিঃসন্দেহে মাহফিলগুলো তার হারানো জৌলুস ফিরে পাবে। বাণিজ্যিক চিন্তাসর্বস্ব ডিমান্ডধারী আলোচকদেরকে যদি আয়োজকরা মাহফিলে দাওয়াত করা থেকে বিরত থাকেন তাহলে ওরা মাহফিল অঙ্গনে নোঙরা আচরণের সুযোগই পাবে না।

প্রিয় মাহফিল আয়োজক ভাইয়েরা! আপনারা চাইলেই ওয়াজ মাহফিলে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারেন। আপনারা চাইলেই সমাজ পাল্টে দিতে পারেন। সুরসর্বস্ব নকলবাজ বাণিজ্যিক মানসিকতাসম্পন্ন আলোচকদের পরিহার করে শিক্ষিত দরদি আলেমদের মাহফিলে ইনভাইট করার সৎসাহস প্রদর্শন করুন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আপামর তাওহিদি জনতা আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আসুন, আমরা বদলে যাই, বদলে দেই। আমাদের বড়দের আমানত এই ওয়াজ মাহফিলগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com