সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

সালাম সর্বোৎকৃষ্ট অভিবাদন

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৯০ বার

পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা বিনিময়ে, কল্যাণ কামনার্থে ও অন্তরঙ্গতা প্রদর্শনে অভিবাদনের বিশেষ পরিভাষা প্রচলিত রয়েছে। ভারতবর্ষে হিন্দু সমাজে পারস্পরিক অভিবাদনের পরিভাষা হলো ‘নমস্কার’ ‘রাম রাম’ ‘আদব’ প্রভৃতি। আমেরিকা-ইউরোপে পারস্পরিক প্রাতঃকালীন সাক্ষাৎকালে বলা হয় ‘গুড মর্নিং’ (শুভ প্রভাত), সান্ধ্যকালীন সাক্ষাৎকালে বলা হয়, ‘গুড ইভিনিং’ (শুভ সন্ধ্যা) রাত্রিকালীন সাক্ষাৎকালে বলা হয়, ‘গুড নাইট’ (শুভ রাত)।

ইসলাম পূর্বযুগে আরবদের মধ্যেও পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে একজন অপরজনকে অভিবাদন জানাবার বিশেষ পরিভাষা প্রচলিত ছিল। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে- হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা: বলেন, ইসলাম পূর্বকালে আমরা পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় বলতাম- ‘আন আমালাহু বিকা আইনান’ (আল্লাহ তোমার চোখ শীতল করুন), ‘আনইম সাবাহান’ (তোমার প্রভাত শুভ হোক) যখন আমরা জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ইসলামের আলোয় আলোক উদ্ভাসিত হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে অভিবাদনের পূর্ববর্তী পরিভাষা রহিত করে পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে ‘আসসালামু আলাইকুম’ (তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)-এর শিক্ষা দান করলেন।’ (হাদিস নং-৪৬১৫)

একজন মুসলিমের আরেকজন মুসলিমের ওপর যত অধিকার রয়েছে, তার মধ্যে সর্বপ্রথম অধিকার হলো একজন অপরজনকে সালাম দেয়া। সহিহ মুসলিমে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘একজন মুসলিমের অপর মুসলিমের ওপর ছয়টি বিশেষ অধিকার রয়েছে। প্রথমত, যখন কোনো মুসলমানের তোমার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তুমি তাকে সালাম দেবে। দ্বিতীয়ত, যখন অপর মুসলমান তোমাকে দাওয়াত দেবে, (শরয়ি কোনো অন্তরায় না থাকার শর্তে) তুমি তার দাওয়াতে সাড়া দেবে। তৃতীয়ত, যখন সে তোমার কাছে উপদেশ (বা নিঃস্বার্থ পরামর্শ) কামনা করবে, তুমি তাকে (নিঃস্বার্থভাবে) উপদেশ বা পরামর্শ দেবে। চতুর্থত, যখন সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সব প্রশংসা আল্লাহর) বলবে, তার হাঁচির জবাবে তুমি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন।) বলবে। পঞ্চমত, যখন সে অসুস্থ হবে, তুমি তার শুশ্রুষা করবে। ষষ্ঠত, যখন সে মৃত্যুবরণ করবে, তুমি তার জানাজা অনুসরণ করবে।’ (সহিহ মুসলিম-২১৬২)

বস্তুত পারস্পরিক হৃদ্যতা-অন্তরঙ্গতা, সুসম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে এবং একে অপরের কল্যাণকামিতা প্রদর্শনে সালাম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট কোনো পরিভাষা পৃথিবীর কোনো জাতিগোষ্ঠী পেশ করতে পারেনি। মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময় হলো শ্রেষ্ঠতম অভিবাদন পদ্ধতি। ‘আসসালামু আলাইকুম’-এর অর্থ- তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আসসালাম অর্থ- শান্তি ইহজাগতিক ও পরজাগতিক উভয় প্রকার শান্তি এখানে উদ্দেশ্য। কারণ শব্দটি নিঃশর্তভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

সুতরাং একজন মুমিন অপর মুমিনকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার অর্থ হলো- একজন অপরজনের ইহকালীন ও পরকালীন সব ধরনের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছে। অধিকন্তু সালাম প্রদানকারী ও সালামের জবাব দানকারী প্রত্যেকে নিজের পক্ষ থেকে অপরজনের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করছে। সালাম প্রদানের মাধ্যমে যেহেতু আরেক মুসলিম ভাইকে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়; তাই অন্যের গৃহে প্রবেশ করার আগে গৃহবাসীকে সালাম দেয়ার বিধান ইসলামে আরোপিত হয়েছে। নিজ গৃহ ব্যতিরেকে অন্য কারো গৃহে প্রবেশ করার নীতি নির্দেশ করে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে তাদের গৃহে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা নূর-২৭)

পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা প্রকারান্তরে অপর মুসলমানের জন্য একটি অত্যন্ত সুসমৃদ্ধ ও সারগর্ভ দোয়া করা। কাউকে সালাম দেয়ার অর্থ হলো- আল্লাহ তায়ালার কাছে তার ইহ ও পরজাগতিক সব ধরনের শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করা। এটি বড়দের পক্ষ থেকে ছোটদের প্রতি পরম স্নেহ ও মায়া মমতা প্রদর্শনের মাধ্যম। অনুরূপ ছোটদের পক্ষ থেকে বড়দের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনেরও মাধ্যম।

‘সালাম’ এটি আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্য থেকে একটি। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ‘সালাম’ শব্দটি নবী-রাসূলদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রকাশার্থে ব্যবহার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘সালামুন্ ক্বাওলাম্ র্মিব্বির রাহিম। সালামুন্ আলা নূহিন ফিল-‘আলামিন। সালামুন্ আলা ইবরাহিম। সালামুন্ ‘আলা মূসা ওয়া হারুন। সালামুন্ আলা ইলয়াসিন। সালামুন আলাল মুরসালিন।’

মহানবী সা: নির্দেশিত সালামের এ শাশ্বত বিধান মুসলমানদের সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস, শান্তি-নিরাপত্তা, প্রেম-ভালোবাসা এবং ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতা সৃষ্টিতে এক অব্যর্থ মাধ্যম। পূর্বপরিচিত দুই ঘনিষ্ঠজনের মধ্যে যখন সালাম বিনিময় অব্যাহত থাকে, তখন এর মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সৌভ্রাতৃত্ব, মহব্বত- ভালোবাসা ও একে অপরের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা পূর্বাপেক্ষা বহু বহুগুণ বর্ধিত হয়। আর অপরিচিত দু’জনের মধ্যে সালাম আদান-প্রদান অব্যাহত থাকলে, পরস্পরের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস এবং অন্তরঙ্গতা ও হিতকামনার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। বস্তুত দু’জন মুসলিম সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরকে আশ্বস্ত করে, সে তার জন্য হিতাকাক্সক্ষী-কল্যাণকামী এবং শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তাবাহী।

মুসলমানদের জীবনে সালাম বিনিময় যেমন মহানবী সা: নির্দেশিত ও প্রবর্তিত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক শিক্ষা, তেমনি তা ইসলামের একটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক ও সর্বজনীন নিদর্শনও বটে। (চলবে)

লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া, রামপুরা, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com