বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চীন থেকে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরা ২০ জন চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী এবং তাদের কারো মধ্যেই এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, যা পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে পরিচিত, সেখানে মোট ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে দুই হাজার সাতশো জন চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলী রয়েছেন।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ মনি জিকো বলেছেন, সম্প্রতি চীনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন চীনা নাগরিকদের একটি অংশ।
‘এদের মধ্যে থেকে জানুয়ারি মাসের ২৩, ২৬ এবং ৩০ তারিখে মোট ২০জন ফেরত এসেছেন বাংলাদেশে। তাদের চীনে এক দফা এবং বাংলাদেশে বিমানবন্দরে আরেক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই জায়গার কোথাও তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।’
‘তারপরেও সতর্কতা হিসেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি আলাদা ভবনে তাদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা। এর মানে হলো, তারা অন্যদের থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছেন, এবং ঐ ভবনের বাইরে বের হচ্ছেন না। প্রতিদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সরকারী চিকিৎসকেরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।’
মি. মনি জানিয়েছেন, প্রত্যেককে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এর আগে জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে একটি বৈঠক করে একটি সতর্কতা জারি করে। এতে চীনা থেকে সম্প্রতি ভ্রমণ শেষে ফিরেছেন এমন নাগরিকদের যত্রতত্র চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার বিবিসিকে বলেছেন, যেহেতু পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন, এবং তাদের একটি অংশ ছুটি কাটাতে চীনে গিয়েছিলেন, সে কারণে সতর্কতা হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
‘আমরা কেবল চীনা নাগরিক নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রর সব কর্মীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ এবং করণীয় সম্পর্কে আলাদা সেশন করেছি। সেই সঙ্গে কলাপাড়া সরকারি হাসপাতালে দুইটি বেড আলাদা করে প্রস্তুত করে রেখেছি, যদি কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে যেন তাদের চিকিৎসা দ্রুত দেয়া সম্ভব হয়।’
মি. হাওলাদার বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন প্ল্যান্টে কর্মরত যেসব চীনা নাগরিক এই মূহুর্তে চীনে রয়েছেন তারা যেন এখন বাংলাদেশে ফিরে না আসেন এবং নতুন করে কেউ যেন এখন চীনে না যায়।
‘সবার মঙ্গলের স্বার্থে এই সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।’
এর আগে রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে, আর মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশোর বেশি।
ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীন থেকে যাওয়া যাত্রীদের আগমন নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে চীন ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে অনেক দেশে। এদিকে, চীনে এই রোগের কারণে নতুন বছরের ছুটির মেয়াদ আবার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।