শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন

প্রতিকূল পরিবেশে দীন কায়েম

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১১৩ বার

মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ পাক অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। সবার মিশন ছিল একই, মানুষকে শিরকমুক্ত করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে আহবান জানানো। সবাই একই কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)। আরো স্পষ্ট করে বলা যায়, আনিই বুদুল্লাহ ওয়াজতানিবুত তাগুত (আল্লাহর দাসত্ব করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো)।

সব নবী-রাসূল ছিলেন তাঁর সময়কালের সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং জাতির সবচেয়ে কল্যাণকামী। তার পরও জালেম শাসক ও পাপাচারী জনগণ নবী-রাসূলদের সহ্য করতে পারেনি। তাগুতকে অস্বীকার করে একান্তভাবে আল্লাহর আনুগত্য তখনই সম্ভব যদি আল্লাহর দ্বীন জমিনে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাই আল্লাহ পাক সব নবী-রাসূলকে দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব দিয়েই পৃথিবীতে পাঠান।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সেই বিধানই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নুহকে এবং যা আমি তোমার কাছে ওহি করে পাঠিয়েছি, উপরন্তু যার আদেশ আমি ইবরাহিম, মুসা ও ইসাকে দিয়েছিলাম, তোমরা এ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করো এবং এতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’- (সূরা আশ শূরা ১৩)।

দ্বীনকে বিজয়ী করার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ পাক সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা:-কে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেন। তাঁর বাণী, ‘তিনি তাঁর আপন রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে সব দ্বীন বা ব্যবস্থাপনার ওপর তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেন, মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন’- (সূরা সফ ৯)। একই কথা সূরা তওবা (৩৩ নং আয়াত) ও ফাতাহ (২৮ নং আয়াত) একটু ভিন্নভাবে বলেছেন। আল্লাহ পাকের স্পষ্ট উক্তি ‘দ্বীন কায়েমের প্রশ্নে কাফের-মুশরিকরা কখনই ছাড় দেবে না।’

হেদায়েত দানের লক্ষ্যে সব জাতিগোষ্ঠীর কাছে আল্লাহ পাক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে স্বল্পসংখ্যক সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী-রাসূলদের শিক্ষা (আল্লাহর আনুগত্য) ছেড়ে মানুষ নিজেরাই তাগুত হয়েছে বা তাগুতের অনুসারী হয়ে সমাজে জুলুম-নির্যাতন ও অশ্লীলতার প্রসার ঘটিয়েছে। তেমন পরিস্থিতিতে হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী প্রেরণ সত্তে¡ও তাঁদেরকে অমান্য করে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক অতীতে অনেক জাতিগোষ্ঠী ও স্বৈরশাসককে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তন্মধ্যে নুহ আ:-এর জাতি, শোয়াইব আ:-এর জাতি, লুত আ:-এর জাতি অন্যতম এবং স্বৈরশাসকদের মধ্যে নমরুদ ও ফেরাউনের কথা বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ:-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে নমরুদের কথা আসে। এই পাষণ্ড ও নরপশু ইবরাহিম আ:-কে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক ইবরাহিম আ:-কে রক্ষা করেন এবং নমরুদকে এক অতি ক্ষুদ্র প্রাণী মশার আক্রমণ দিয়ে ধ্বংস করে দেন। আরেক স্বৈরশাসক ফেরাউন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বনি ইসরাইলের সব পুরুষ সন্তানকে হত্যা করে এবং মুসা আ: ও তাঁর কওমের ওপর চালায় সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন। তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারী জাদুকরদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শেষ পর্যন্ত মুসা আ: টিকতে না পেরে তাঁর সঙ্গী-সাথী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেরাউন তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে ধাওয়া করলে সামনে সমুদ্র বাঁধে এবং আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে মুসা আ: পানিতে লাঠির আঘাত করলে রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। সেই রাস্তা দিয়ে মুসা আ: অতিক্রম করলেও ফেরাউন সদলবলে ডুবে মরে। এসবই আল্লাহ পাকের নিদর্শন। কিন্তু জালেমরা শিক্ষা নেয় না।

আল্লাহ পাক মুমিন ও কাফেরকে দুটি পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যারা ঈমান আনে তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে আর যারা কুফরি করে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের সাথে। শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল’- (সূরা নিসা ৭৬)। মাঝামাঝি কোনো পথ আল্লাহ রাখেননি। মাঝামাঝি যারা আছে তারা মূলত সুবিধাবাদী (মুনাফিক)। আল্লাহ পাক আদম আ:-কে সৃষ্টি করে তাঁকে জান্নাতেই রেখেছিলেন এবং এটিই তাঁর আদিবাস। এই দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। দুনিয়ার জীবন বড়ো ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে, আখেরাতের জীবন অসীম। আল্লাহ পাক তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের ওয়াদা করলেও আখেরাতকে অগ্রাধিকার দান করেছেন।

আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও আখেরাতে চিরশান্তি জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহ পাক তাঁর মুমিন বান্দাদের নানাবিধ পরীক্ষার মুখোমুখি করেন। পরীক্ষা প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে (রোগ-শোক নানাবিধ পন্থায়) আবার মানুষের পক্ষ থেকেও। বিপদাপদ উপস্থিত হলে যারা ধৈর্য অবলম্বন করে এবং বলে যে আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাবো (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাদের জন্যই সুসংবাদ (বাকারা ১৫৩-১৫৬)। পরীক্ষা শুধু মুমিনদের নয় কাফেরদেরও রয়েছে। মুমিনদের পরীক্ষা বিপদ-আপদে ধৈর্যের আর কাফেরদের পরীক্ষা তার সীমালঙ্ঘনের। পুরস্কার ও শাস্তিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহকে দেখে নিতে হবে। যারা আল্লাহর রাস্তায় চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় তারা যে আল্লাহর কত প্রিয়ভাজন তা কল্পনাও করা যায় না।

আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন যারা সিসাঢালা প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধভাবে আল্লাহর পথে লড়াই করে।’ (সূরা সফ-৪) আল্লাহর সেই প্রিয়ভাজন বান্দাদের প্রতি যারা জুলুম করে তাদের পরিণতিও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি।’ (সূরা বুরুজ ১০)। অতঃপর ‘তওবা করে না’-এর মধ্যে জালেমদের ফিরে আসার সুযোগও রেখেছেন।

মানবজাতির শেষ নিবাস হয় জান্নাত অথবা জাহান্নাম। যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলবে এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাবে আল্লাহ পাক তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করাবেন পক্ষান্তরে যারা অমান্য (কুফরি) করবে ও শয়তানের অনুসারী হবে তাদের অবস্থান হবে জাহান্নামে। ইকামাতে দ্বীনের বৈশিষ্ট্যই হলো কুফরি শক্তির বিরোধিতা (‘মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন’- (সূরা সফ ৯) এবং বিরোধিতার মোকাবেলায় দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সব গুনাহের ক্ষমা এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। (সূরা সফ ১২) অবশ্য খেদমতে দ্বীনের বিনিময়েও জান্নাতের ঘোষণা রয়েছে।

কুরআন মজিদে বিভিন্ন জায়গায় ঈমানের সাথে নেক আমল করলে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। অবশ্য এমন অবস্থায় জান্নাতপ্রাপ্তি বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দ্বীন কায়েম না হলে পরিপূর্ণ ইসলাম মানা দুরূহ ব্যাপার। এ জন্য দ্বীন কায়েমে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করলেও একটি কামনা-বাসনা থাকতেই হবে। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই। যে লোক মারা গেল অথচ না জিহাদ করল আর না জিহাদের বাসনা অন্তরে পোষণ করল তার মৃত্যু হলো মুনাফিকের মৃত্যু। কুরআনের বর্ণনাভঙ্গিও তাই- ‘বলব কি এমন একটি ব্যবসায়ের কথা যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে? তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস এবং জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা; এটিই সবচেয়ে কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে।’ (সূরা সফ ১০-১১)

নবী-রাসূলদের কাজই ছিল জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করে দেয়া। এ জন্য তাঁরা স্বাভাবিক পন্থা অর্থাৎ মানুষের কাছে দাওয়াত প্রদান, তাদেরকে সংগঠিত করা এবং পরিশুদ্ধ করার পথ অবলম্বন করেছেন এবং কুরআনের বক্তব্যও তাই। এ প্রসঙ্গে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর দোয়া উল্লেখ করা যায়- ‘হে আমাদের রব! এদের (আমার বংশধর) কাছে এদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল পাঠাও, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে (তোমার) কিতাব এবং হিকমা শিক্ষা দেবেন আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করবেন। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী)।’ (সূরা বাকারা ১২৯) শেষনবী মুহাম্মদ সা: আমাদের আদর্শ এবং কিয়ামত পর্যন্ত সবার জন্য আদর্শ। হেরা গুহায় ওহিপ্রাপ্ত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ফিরে এলে মা খাদিজা রা: তাঁকে আশ্বস্ত করেন, আপনার কোনো ভয় নেই কারণ আপনি অসহায়ের সহায়, আত্মীয়স্বজনের সহায়তাকারী, উত্তম চরিত্রের অধিকারী, আল্লাহ আপনার সঙ্গে রয়েছেন। মা খাদিজা রা: হলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিম। রাসূল সা:-এর কাজ ছিল মানুষকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনানো ও তাদের সেই আলোকে পরিশুদ্ধ করা। সে সময়ে অবতীর্ণ ছোট্ট ছোট্ট সূরা যা সহজে মুখস্থ রাখার মতো ও মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে।

সূরা আসরে বলা হয়েছে, ঈমানের সাথে নেক আমল এবং হকের দিকে আহ্বান ও ধৈর্য অবলম্বন করলেই ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচা যাবে। নেক আমলের কোনো ফিরিস্তি দেয়া হয়নি বরং মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যা দাবি করে বা মানবকল্যাণ সাধন করে এমন আচরণ ও কর্ম সবই নেক আমল। সূরা হুমাজায় বলা হয়েছে নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। পরিণতি বলা হয়েছে আল্লাহর আগুন, প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। একটু গালি দিলে বা অসাক্ষাতে নিন্দা (গিবত) করলে যদি এই পরিণতি হয় তাহলে গুম-খুনের পরিণতি কী হতে পারে?

সুরা মাউনে বলা হয়েছে, পরকালে অবিশ্বাসী লোক তালাশ করছ? সে তো সেই লোক যে এতিমকে ধাক্কা দেয় ও মিসকিনের খাবার দিতে উৎসাহিত করে না। সে এত ছোট লোক যে নিত্য ব্যবহার্য (মাউন) জিনিস অপরকে দেয়া হতে বিরত থাকে। কুরআনের আয়াত পড়ে পড়ে এভাবেই রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর উম্মতদের পরিশুদ্ধ করেছেন। পরিশুদ্ধ অর্থ আল্লাহ পাক যে কাজ করতে আদেশ করেছেন সেটি সম্পন্ন করা এবং যেটি করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। মক্কায় মানুষকে দাওয়াত দান এবং যারা কবুল করেছেন তাদেরকে একত্রিত (সংগঠিত) করা ও পরিশুদ্ধ করাই ছিল রাসূলুল্লাহ সা:-এর মৌলিক কাজ।

কুরআন-মজিদে যত নবী-রাসূলকে উপস্থাপন করা হয়েছে সবাইকে নিপীড়িত-নির্যাতিত হিসেবেই পেশ করা হয়েছে। শেষনবী মুহাম্মদ সা: সুদীর্ঘ তেরোটা বছর একতরফা মার খেয়েছেন এবং কাউকেও পাল্টা মার দেননি। যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নেই। যুদ্ধ ঘোষণা করবে রাষ্ট্রশক্তি বা সরকার। মদিনায় রাসূলুল্লাহ সা: একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হলে ১০টি বছর তিনি নানা যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: মক্কায় অধিকাংশ সময় গোপনে দাওয়াত দিয়েছেন এবং একটি পর্যায়ে হামজা রা: ও ওমর রা:-এর মতো কিছু বাহাদুর ইসলামের ছায়াতলে আসার পর পরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়। তারপরও সাধারণ সাহাবিরা খোলামেলা দাওয়াত দিতে পারেননি।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও তাঁর বংশধররা কাবার মুতাওয়াল্লি হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে কাবায় তাঁর নামাজ আদায়ের সুযোগ ছিল না। বরং কোনো সময়ে আবু জেহেল বা এমন কোনো পাপীষ্ঠের নজরে পড়লে মুহাম্মদ সা:-এর উপরে উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দিত। দেশে দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা চলছে তা মূলত রাসূল সা:-এর মক্কিযুগের সাথেই তুলনীয়। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কি একতরফা আঘাত সহ্য করবে? হ্যাঁ, একতরফাই মার খাবে। ইতিহাস তো তাই বলে। সুযোগ থাকলে হিজরত করবে যেমন সাহাবিরা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন, অন্যথায় প্রতিপক্ষের আক্রমণে পালিয়ে যাবে যেমন মুসা আ: পালিয়ে গিয়েছিলেন।

ইসলামী আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতনের বদলা হলো দ্বীন কায়েমের জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা এবং পরম ধৈর্য অবলম্বন করে টিকে থাকা। প্রতিকূল পরিবেশে যারা টিকে থাকবে তারাই সফলকাম। সুযোগ এলে বদলা গ্রহণের চিন্তা একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে। বদলা গ্রহণ তখনই হতে পারে যখন কাজটি হয় নিজের বা দলের। কিন্তু দ্বীন প্রতিষ্ঠা একান্তই আল্লাহর এবং ঈমানদারগণ হলো আল্লাহর সাহায্যকারী (সৈনিক)। মনে রাখতে হবে, বদলা গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং সে শক্তি তাঁর রয়েছে। ইকামাতে দ্বীনের কাজের বিনিময়ে আল্লাহ পাক মুমিনদেরকে জান্নাত দান করবেন এবং আল্লাহর ভাষায় এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা সফ ১২) আরো দেবেন, যা মুমিনরা পছন্দ করে, আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। (সূরা সফ ১৩) এটি আল্লাহর অতিরিক্ত দান।

দ্বীন কায়েম একান্তভাবে আল্লাহর। ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ হলে আল্লাহ পাক তাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করবেন। তাঁর বাণী, ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যে দ্বীনটি আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক না করে। আর যারা এর পরও কুফরি করবে তারাই ফাসেক।’ (সূরা নূর ৫৫)

আল্লাহর পথে প্রচেষ্টাকারী জনগোষ্ঠীকে কোনো নেতিবাচক কাজ নয় শুধু ইতিবাচক কাজ অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবে এবং নিজেরা নেক আমল করবে ও সাহসিকতার সাথে বলবে আমরা মুসলমান। আল্লাহর বাণী, ‘তার চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে নেক আমল করে এবং বলে যে, আমি একজন মুসলমান।’ (হা-মীম আস্-সাজদা ৩৩) অর্থাৎ আচার-আচরণে, লেনদেনে ও কথাবার্তায় নিজেদেরকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে সমাজে উপস্থাপন করতে হবে। এমনটি সম্ভব হলে আল্লাহ পাকের দায়িত্ব, এমন জনগোষ্ঠীর হাতে সমাজের কর্তৃত্ব দান করা। কিভাবে দেবেন, কখন দেবেন সে বিবেচনা আল্লাহর।

পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল-প্রতিকূল যাই হোক না কেন দাওয়াতে দ্বীনের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। নিজ থেকে সংঘর্ষে জড়াতে না চাইলেও দাওয়াতে দ্বীনের প্রকৃতিই হলো কুফরি শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং নানা সমালোচনা ও নিন্দাবাদের ঝড় তুলবে। এ ক্ষেত্রে পরম ধৈর্য অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিপক্ষের মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয় বরং সর্বোত্তম পন্থায় তার জবাব দিতে হবে। শয়তান প্ররোচনা দেয়, ওরা ১০টি মার দিলে তোমরা একটিও পারো না, এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক তাঁর আশ্রয়ে চলে আসতে বলেছেন। অর্থাৎ দাওয়াতে দ্বীন বা ইকামাতে দীনের কাজ একান্তই আল্লাহর এবং জমিনে যারা এই দায়িত্ব পালন করে তারা আল্লাহর সাহায্যকারী। মুমিনদের অভিভাবক হলেন আল্লাহ এবং অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহর বাণী, মুমিনদের উচিত কেবল তাঁরই ওপর ভরসা করা। বিপদাপদ যা সবই পূর্বনির্ধারিত। ব্যক্তি সর্বোত্তম সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং নির্ভর করবে আল্লাহর ওপর।

লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com