কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর ডিমের দাম আবারও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ফার্মের ডিমের ডজন ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকা এবং হালি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বাড়লেও তা খামারিদের পকেটে যাচ্ছে না। বরাবরের মতো মধ্যস্বত্বভোগীরাই অতিরিক্ত লাভ করছেন। আর বেশি দামে ডিম কিনে খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ডিম বিক্রি হয় রেকর্ড দামে। সে সময় ডিমের বাজারে সরকারি সংস্থার বিশেষ অভিযান ও অনুসন্ধানে উঠে আসে কারসাজির তথ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ওই সময় একটি চক্র ১৫ দিনে ডিমে ১১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে। সে সময় ডিমের বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে বেরিয়ে আসে অনিয়মের নানা তথ্য। সংস্থাটি দেখতে পায়, ডিমের আড়তে ডিম কেনার পাকা রসিদ সংরক্ষণ করা হয় না। ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নয়, ডিমে বিক্রয়মূল্য ঠিক করে দেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বাজারে অভিযানের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির হুশিয়ারিতে রাতারাতি দাম কমে যায়। এর পর অনেকটা সময় ডিমের দাম স্থিতিশীল ছিল।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এখনো আগের প্রক্রিয়ায় বাজার চলছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর তেজগাঁও ডিমের পাইকারি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ভোক্তা অধিকারের অভিযানের পর বাজারে দাম কমেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ডিমের বাজার আগের ‘সিস্টেমে’ চলছে। এখানে রসিদ চলে না। কেনা দাম কেউ জানেন না। সমিতি যে দাম বলে দেয়, সেটাই চলে।
রাজধানীর কদমতলীর সাদ্দাম মাকের্টের ডিম ব্যবসায়ী মো. মিলন হোসেন জানান, শীতে ডিমের দাম কমে, অথচ এখন ঘটছে উল্টোটা। কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই রসিদ দেওয়া হয় না, ফোনে দাম জানিয়ে দেওয়া হয়। সে দামেই কিনতে হয়।
মালিবাগ বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন বলেন, বর্তমানে আড়ত থেকে ১০০টি ডিম কিনতে হয় ৯৭০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৯০০ টাকা। গত চার দিনে এ দাম বেড়েছে। ডিমের ডজন ১২৫ টাকায় বিক্রি করছি। আগে ছিল ১১৫ টাকা।
পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোয় ফার্মের ডিমের হালি এখন ৪৫ টাকা ছুঁয়েছে। কোথাও কোথাও ৪২ টাকায়ও মিলছে। তবে বাজার ও খামার পর্যায়ের মূল্যবৃদ্ধি তুলনা করলে দেখা যায়, খামারের তুলনায় খুচরায় দাম বেশি বেড়েছে।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ‘অর্গানিক এগ্রোর’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. মিরাজুল হাসান ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, আমরা খামারিরা আগের মতোই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ব্যবসায়ী সমিতির নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করতে হয়। বর্তমানে ডিমের দাম পাচ্ছি ৯ টাকা ৩৫ পয়সা পিস। এ ডিম বাজারে সর্বোচ্চ ১০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি পিস বিক্রি করেছি ৯ টাকা। অর্থাৎ খামার পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৩৫ পয়সা। অথচ বাজারে বেড়েছে ১ টাকার বেশি।
এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘুরেফিরে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো ও মিডলম্যানদের হাতে খামারিরা জিম্মি। একদিকে খামারিদের ঠকানো হচ্ছে; অন্যদিকে বাজারে ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
বাজারে অভিযান ও তদারকি হলেও মূলত আমদানির ঘোষণাতেই ডিমের দাম কমেছিল উল্লেখ করে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে হাত বদলের সংখ্যা কমাতে হবে। ডিমে বারবার ব্যবসায়ী সমিতির নাম উঠে আসছে। তাদের অতিরিক্ত মুনাফা করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনটা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা অতিরিক্ত দাম বাড়াচ্ছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’